E-Paper

আলোকটানে পতঙ্গ

আত্মহত্যা চিরকালই এক বিস্ময় উদ্রেককারী। চার্লস রবার্ট ডারউইনের আবিষ্কৃত নিয়মানুযায়ী সকলেই বংশবৃদ্ধি করতে চায়।

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৫৭
tiny leafhoppers

—প্রতীকী ছবি।

বিজ্ঞান যে কত দিকে ধায়, তা কে বলতে পারে? তার অভিমুখ কিংবা অভিরুচি অনন্ত সম্ভাবনাময়। লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজের অধ্যাপক স্যামুয়েল ফেবিয়ান এবং তাঁর সহযোগীরা গবেষণা করছেন কেন শ্যামাপোকারা আলোর উদ্দেশে ধায়, তা নিয়ে। শ্যামাপোকা নামের উৎস দীপাবলির সময় ওই পোকা বেশি দেখা যায় কেন? প্রদীপ বা ওই ধরনের কৃত্রিম আলোর প্রতি পোকারা বেশি আকৃষ্ট হয় কেন? কারণ অনুসন্ধানে অনেক পুরনো ধারণা বাতিল করেছেন ফেবিয়ান এবং তাঁর সহযোগীরা। ধারণা ছিল যে, পোকারা চাঁদের আলো দেখে নিজেদের গতিপথ নির্ধারণ করে। কিংবা, আলোর তাপের দ্বারা পোকারা আকৃষ্ট হয়। আরও ভাবা হত যে, পোকারা কৃত্রিম আলোয় অন্ধ হয়, অন্ধ হয়ে ওই দিকে ছুটে যাওয়া ছাড়া ওদের গত্যন্তর নেই। এ সবই ভিত্তিহীন, কেন পোকারা কৃত্রিম আলোয় অন্ধ হয়, তার সদুত্তর বিশেষজ্ঞরা দিতে পারেননি। নেদারল্যান্ডসে ডাচ বাটারফ্লাই কনজ়ারভেশনের প্রধান রয় ভ্যান গ্রুনসভেন প্রশ্ন তুলেছেন, কেন মরে যেতে ইচ্ছে হয় পোকাদের, তা এক বিস্ময়। কৃত্রিম আলোর উপর পড়ে পোকারা মারা যায়। এক অর্থে পোকাদের এই আত্মহত্যা বিচিত্র।

আত্মহত্যা চিরকালই এক বিস্ময় উদ্রেককারী। চার্লস রবার্ট ডারউইনের আবিষ্কৃত নিয়মানুযায়ী সকলেই বংশবৃদ্ধি করতে চায়। প্রাণিরাজ্যে এই নিয়ম। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ওই নিয়ম আবিষ্কার করে ডারউইন বিখ্যাত হন। এখন, পোকারা যে অন্ধকার রাতে কৃত্রিম আলোর প্রতি ধাবিত হয়, শুধু তা-ই নয়, পোকারা শেষে মারাও যায়। এই আত্মাহুতির কারণ বিশ্লেষণ সত্যিই দুরূহ ব্যাপার। মানুষের ক্ষেত্রে যদি বা রাগ-অভিমান থেকে কেউ কেউ নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দেওয়ার কথা ভেবে থাকেন, পোকাদের ক্ষেত্রে এ ভাবে দলে দলে আত্মাহুতি দেওয়া বিচিত্র। আত্মহত্যা ডারউইনবাদের বড় প্রশ্নচিহ্ন হিসাবে গণ্য হয়, যে রকম প্রশ্ন নারী-পুরুষ সৃষ্টি নিয়েও। এখনও অ্যামিবা, ভাইরাস এবং ব্যাক্টিরিয়া বংশবৃদ্ধি করে স্বতঃজনন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। মানে, তারা বংশবৃদ্ধি করে নিজেরা বেড়ে গিয়ে। যৌনসংসর্গের প্রয়োজন এখনও ব্যাখ্যা করা যায়নি। আত্মহত্যাও তেমনই এক ব্যাখ্যার অতীত প্রবণতা।

ফেবিয়ান এবং তাঁর সহযোগীরা কী প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম আলোয় পোকারা আকৃষ্ট হয়, তা পরখ করতে নেমেছিলেন। তাঁরা দেখেন, আলো যতটা না আকৃষ্ট করতে পারে তার থেকে দূরবর্তী পোকাদের, তার চেয়ে ঢের বেশি আকর্ষণ করে কাছেপিঠের পোকাদের। যখন পোকারা আলোর উপর থেকে আলোর দিকে ধায়, তখন পোকারা পিঠ দিয়ে পড়তে থাকে। আলোর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আলোর চার পাশে আবর্তন করতে থাকে। এটাকেই ফেবিয়ান এবং তাঁর সহযোগীরা বলেছেন ‘ডরসাল লাইট রেসপন্স’: অর্থাৎ শরীরের অংশ দিয়ে আলোর বিচার। দিনের আলো কোন দিকে, ডরসাল লাইট রেসপন্স পোকাদের (এমনকি কিছু ক্ষেত্রে মাছেদেরও) তা চিনতে সাহায্য করে। এই গবেষণা উচ্চ প্রশংসিত হয়েছে বিজ্ঞানী মহলে। ডরসাল লাইট রেসপন্সের প্রশংসা করেছেন সুইডেনে লুন্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক রোমান গোলার্ড, ২০১৮ সালে যিনি আলোর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় পোকাদের আবর্তন লক্ষ করেছিলেন। এর থেকেই কি পোকাদের আত্মঘাতও অংশত বোধগম্য হয়? পরবর্তী সন্ধান তা বলবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

light insects

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy