Advertisement
০৫ মে ২০২৪

প্রবাসীর অধিকার

সুপ্রিম কোর্টের সম্মুখে আবেদনকারী জানাইয়াছেন, অনাবাসী এবং দেশের অভ্যন্তরে অন্যত্র বসবাসকারীদের মোট সংখ্যা অন্তত ৪৫ কোটি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৪৬
Share: Save:

বিলাতে বসিয়া ভারতের নির্বাচনে ভোট দিবার ইচ্ছা কেন? এই প্রশ্ন তুলিয়াছেন ভারতের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবডে। ভিন্ন দেশ, ভিন্ন রাজ্যে বসবাসকারী ভারতীয়দের জন্য পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা অনুমোদন করিবার আবেদন আসিয়াছে শীর্ষ আদালতে। সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের মতামত জানিতে চাহিয়াছে আদালত। অর্থাৎ, বিষয়টি এখনও বিবেচনাধীন। তবে আবেদন গ্রহণ করিয়া প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করিয়াছেন যে, আমেরিকাতে থাকিয়াই যিনি কেরলের নির্বাচনে ভোট দিতে ইচ্ছুক, ভোট দিবার জন্য ঘরে ফিরিবার ইচ্ছা যাঁহার নাই, তিনি ভোট দিতে না পারিলে তাঁহার অধিকার খর্ব হয় না। নিজ নির্বাচনী ক্ষেত্রে ফিরিবার তাগিদ যাঁহার নাই, আইন তাঁহাকে সাহায্য করিবে কেন? শীর্ষ আদালতকে যথোপযুক্ত সম্মান জানাইয়াও বলিতে হয়, এই মন্তব্য বহু দেশবাসীকে বিস্মিত করিয়াছে। ঘরে ফিরিবার অক্ষমতাকে ভোট দিতে অনাগ্রহের সহিত এক করিয়া দেখা কত দূর সঙ্গত? যাতায়াতের অর্থ, কাজের নিরাপত্তা, সাংসারিক দায়দায়িত্বের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকিলে ঘরে ফেরা সম্ভব নহে। বিদেশে, অথবা ভিন্ন রাজ্যে যাঁহারা বাস করিতেছেন, তাঁহারাও নাগরিক। ঘরে ফিরিবার অপারগতা তাঁহাদের নাগরিকত্বকে খর্ব করিবে কেন? প্রবাসী নাগরিকের ভোটাধিকার সুরক্ষিত এবং অর্থপূর্ণ করিবার দায় অস্বীকার করিতে পারে না রাষ্ট্র।

সুপ্রিম কোর্টের সম্মুখে আবেদনকারী জানাইয়াছেন, অনাবাসী এবং দেশের অভ্যন্তরে অন্যত্র বসবাসকারীদের মোট সংখ্যা অন্তত ৪৫ কোটি। প্রকৃত সংখ্যা যাহাই হউক, বিপুল সংখ্যক মানুষ দীর্ঘ দিন ভোটাধিকার হইতে বঞ্চিত হইয়া আসিতেছেন, তাহাতে সন্দেহ নাই। ইহার দায় কেবল নাগরিকের উপরেই চাপাইয়া রাষ্ট্র নিষ্কৃতি পাইতে পারে কি? ভোটদান করিতে গেলে সশরীরে বুথে উপস্থিত থাকিতে হইবে, এমন শর্ত এই একবিংশ শতাব্দীতে আরোপ করা উচিত কি না, সেই প্রশ্ন উঠিতে বাধ্য। পোস্টাল ব্যালট, অর্থাৎ ডাকযোগে ভোট দিবার প্রথা বহু দিন হইতেই প্রচলিত রহিয়াছে। কিন্তু তাহার পরিসর সঙ্কীর্ণ। এত দিন কেবল প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং ভিন্ন রাজ্যে কর্মরত সরকারি কর্মচারীরাই সেই সুবিধা পাইতেন। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে অশীতিপর বৃদ্ধ এবং প্রতিবন্ধীরাও পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারিবেন। তাহার প্রস্তুতি চলিতেছে। সম্প্রতি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অতিমারির কারণে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিবার অধিকার পূর্বের চাহিতে বহুগুণ বিস্তৃত হইয়াছে। ইহাতে ভোটগণনা সময়সাপেক্ষ হইয়াছে, কিন্তু সকলের অধিকার সুরক্ষিত হইয়াছে। পোস্টাল ব্যালট প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলে গুরুতর প্রভাব ফেলিয়াছে।

ভারতেও পোস্টাল ব্যালট তাৎপর্যপূর্ণ হইতে পারে। দৈহিক অনুপস্থিতির কারণে কয়েক কোটি মানুষের ভোট পড়িতেছে না বলিয়া নাগরিকের মতামতের যথাযথ প্রতিফলন হইতেছে না, তাহার সম্ভাবনা যথেষ্ট। বিশেষত অনাবাসী ভারতীয় এবং পরিযায়ী শ্রমিক, এই দুই বৃহৎ শ্রেণির অনুপস্থিতি নির্বাচনী গণতন্ত্রের অসম্পূর্ণতার দ্যোতক। অতএব প্রবাসীরা যেখানে রহিয়াছেন, সেখানেই তাঁহাদের ভোট গ্রহণ করিতে হইবে। কী পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ হইবে, তাহাই বিবেচ্য। ২০১৭ সালে নরেন্দ্র মোদী সরকার প্রস্তাব করিয়াছিল, ‘প্রক্সি’ ভোট হইবে— অর্থাৎ, অনাবাসীর প্রতিনিধি হইয়া কেহ তাঁহার নির্বাচনী ক্ষেত্রে ভোট দিবেন। বিরোধীরা আপত্তি করিয়া বলিয়াছিলেন, তাহাতে ভোটের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হইবে। তাঁহারা ভারতীয় দূতাবাসে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র খুলিবার পরামর্শ দিয়াছিলেন। এখন ইমেলে ব্যালট পাঠাইয়া ডাকযোগে ভোট প্রেরণের পদ্ধতি বিবেচিত হইতেছে। এই সকলের মধ্যে কোনও একটি চূড়ান্ত করিতে হইবে কেন্দ্রীয় সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে। শুভস্য শীঘ্রম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE