Advertisement
E-Paper

গোড়ায় গলদ

উচ্চশিক্ষা দফতরের পরামর্শ মতো কলেজ স্তরে ইংরেজিতে সংযোগ-দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ করলেই কি সাফল্য আসবে?

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২২ ০৪:২৯

সরকারি ও সরকার-পোষিত কলেজগুলির অধ্যক্ষদের সঙ্গে এক সভায় রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর নির্দেশ দিয়েছে, কলেজের ছাত্রছাত্রীরা যাতে ইংরেজি ভাষায় সংযোগ স্থাপনে, ইংরেজি ভাষায় পড়তে পারায় ও কথা বলায় দক্ষ হয়, সেই লক্ষ্যে যেন কলেজগুলি উপযুক্ত পদক্ষেপ করে। অর্থাৎ, স্বীকার করে নেওয়া হল সহজ সত্য: এই কলেজগুলির ছাত্রছাত্রীরা যে বিষয় নিয়েই পড়াশোনা করুক না কেন, তাদের ইংরেজি ভাষায় সংযোগ-সামর্থ্য আদৌ ভাল নয়। ব্যতিক্রম আছেই, কথা হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের বৃহদংশ নিয়ে। দেখা যাচ্ছে, পড়াশোনার মান ও ফলাফল ভাল হওয়া সত্ত্বেও, শুধু ইংরেজি ভাষায় সংযোগ-দক্ষতা না থাকার কারণে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে ছাত্রছাত্রীরা পিছিয়ে পড়ছে, বা ইংরেজিতে বলতে-লিখতে পারা ছাত্রছাত্রীরা সফল হচ্ছে বা সুযোগ পাচ্ছে বেশি। তাই আলাদা করে অধ্যক্ষদের ডেকে বলা।

কলেজে অনেক বছর ধরেই আছে ‘এবিলিটি এনহ্যান্সমেন্ট কম্পালসরি কোর্স’, ছাত্রছাত্রীরা যে প্রধান বিষয় নিয়েই পড়ুক না কেন, সঙ্গে আবশ্যিক বিষয় হিসেবে পড়তে হয় পরিবেশ বিজ্ঞান, এবং ‘ইংলিশ কমিউনিকেশন’ অথবা ‘মডার্ন ইন্ডিয়ান ল্যাঙ্গোয়েজেস’। অর্থাৎ, আবশ্যিক বিষয় হলেও পড়ুয়ারা চাইলে ইংরেজি না পড়ে অন্য ভারতীয় ভাষা— বাংলা, হিন্দি, বা উর্দুর মধ্যে একটি বাছতে পারে। এই ব্যবস্থায়, এবং সার্বিক ভাবে স্নাতক স্তরে মূল পড়ার বিষয়টিকেই অগ্রাধিকার ও মনোযোগ দেওয়ায় ইংরেজি ভাষায় সংযোগ-দক্ষতার পাঠ ব্যাহত হয়। সংযোগ বা ‘কমিউনিকেশন’ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা— শুধু ম্যানেজমেন্ট-এর ক্লাসেই নয়, জীবনেও। আজ কলেজের পাঠ শেষে উচ্চতর শিক্ষায় সর্বভারতীয় বা বহির্ভারতীয় পরীক্ষায় ধরা পড়ছে গলদ: মৌখিক পরীক্ষায় বা ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে ইংরেজিতে মনের ভাব প্রকাশের অপারগতা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও অনেক সময় হাতছাড়া হচ্ছে নামী শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা সংস্থায় যোগ দেওয়ার সুবর্ণসুযোগ।

গলদ কি তা হলে কলেজের পাঠ-ব্যবস্থাতেই? উচ্চশিক্ষা দফতরের পরামর্শ মতো কলেজ স্তরে ইংরেজিতে সংযোগ-দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ করলেই কি সাফল্য আসবে? মনে হয় না। শিক্ষাবিদরা বলছেন গলদ গোড়ায়, অর্থাৎ স্কুলশিক্ষাতেই। বাম জমানায় ১৯৮০ সালে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত সরকারি ও সরকারি-সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে ইংরেজি ভাষা শিক্ষা ‘বারণ’ হয়েছিল, একটি প্রজন্ম ইংরেজি শেখার সুযোগ পায়নি। ২০০৪ সালে ইংরেজি স্কুলশিক্ষায় ফিরেছে, কিন্তু তার পরেও আজ কলেজ স্তরে পড়ুয়াদের ইংরেজিতে বলা বা লেখায় অক্ষমতা বুঝিয়ে দেয়, শূন্য স্থান পূর্ণ হয়নি। কলেজ স্তরে ইংরেজিতে বলা-লেখার ক্লাস বাড়িয়ে হয়তো কিছু সুফল পাওয়া যাবে, কিন্তু এ কাজ শুরু হওয়া দরকার প্রাথমিক শিক্ষার স্তর থেকে। স্কুলশিক্ষা সংক্রান্ত রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, উঁচু ক্লাসের পড়ুয়ারা ইংরেজিতে কথা বলা দূরস্থান, পড়তেও পারছে না। সাম্প্রতিক ‘আমব্রেলা’ কাণ্ড ইংরেজি বানানের দুরবস্থাকে প্রকট করেছে, কিন্তু বুঝতে হবে, তা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। আগের জমানায় ভুল হয়েছে ঠিক কথা, কিন্তু এখন তা সংশোধন না করাও ভুল। ছাত্রসমাজের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই রাজ্য সরকারকে তা করতে হবে, অবিলম্বে।

Students English Language English Language Skills English
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy