—প্রতীকী চিত্র।
গত কয়েক দিনে কার্যত সব সংবাদপত্রের পাতাতেই বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হয়েছে: আধার কার্ডে যে বায়োমেট্রিক তথ্য জমা রয়েছে, তাকে কী ভাবে সুরক্ষিত রাখা যায়, সেই পন্থা আলোচনা করে। এই সক্রিয়তার সূত্রপাত এ মাসের গোড়ার দিকে ইউআইডিএআই-এর একটি টুইট থেকে, যেখানে আধার-এর নিয়ন্ত্রক সংস্থা দেশবাসীকে বায়োমেট্রিক তথ্য সামলে রাখার গুরুত্বের কথা বলেছিল। টুইটটি তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ আঙুলের ছাপের মতো বায়োমেট্রিক তথ্য নকল করে আর্থিক জালিয়াতির ঘটনা ক্রমবর্ধমান। আর্থিক বিষয় সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির অনুমান, ২০২১ সালে এ-হেন জালিয়াতির সংখ্যা ছিল সাত লক্ষের কাছাকাছি; এই বছর তা বেড়ে দু’কোটি ছাড়িয়ে যাবে। আধার-এনেবল্ড পেমেন্ট সিস্টেম (এইপিএস), অর্থাৎ আধারে জমা থাকা বায়োমেট্রিক তথ্যের ভিত্তিতে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রেই এই জালিয়াতির বেশির ভাগ ঘটছে। এই গোত্রের লেনদেন তুলনায় বেশি হয় গ্রামাঞ্চলে, যেখানে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত সচেতনতা তুলনায় কম। এবং, সত্যি কথা হল, গ্রাম বা শহর নির্বিশেষে গোটা দেশেই এই সচেতনতা অতি সামান্য। ফলে, টুইট করে বা সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে সেই সচেতনতার মাত্রা কতখানি বাড়ানো যাবে, সে বিষয়ে বিলক্ষণ সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। বিশেষত প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে, যাঁরা স্মার্টফোন ব্যবহারের বাধ্যবাধকতায় এমনিতেই বিড়ম্বনায় পড়েন, এই বিপদ অতি ভয়ঙ্কর। জালিয়াতির যে সংবাদগুলি প্রকাশিত হচ্ছে, তাতেও স্পষ্ট, যে জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই সচেতনতার অভাব থাকা এক অর্থে স্বাভাবিক, জালিয়াতির শিকারও বেশি হচ্ছেন তাঁরাই। তবে, একটা কথা মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে— আধার ব্যবস্থার জনক নন্দন নিলেকানি স্বয়ং এক বার তাঁর আধার কার্ডের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছিলেন; সেখানে তিনি নিজের আধার নম্বরটি আড়াল করেছিলেন বটে, কিন্তু কিউআর কোডটি ঢাকতে ভুলে গিয়েছিলেন! ফলে, সাধারণ মানুষের কাছে কতখানি সচেতনতা আশা করা যায়, তা বোঝা সম্ভব। প্রশাসন কি সেই সচেতনতার ভরসায় আছে?
ইউআইডিএআই কর্তৃপক্ষ একেবারে কিছুই করছেন না, তা বললে ভুল হবে। কয়েক মাস যাবৎ এই জালিয়াতি রুখতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। অনুমান করা চলে, কালেদিনে মজবুততর নিরাপত্তা ব্যবস্থাও তৈরি করা সম্ভব হবে। কিন্তু অভিজ্ঞতাকে যদি সাক্ষী মানা হয়, তা হলে বলতেই হবে যে, জালিয়াতরা সচরাচর কর্তৃপক্ষের চেয়ে এক বা একাধিক কদম এগিয়ে থাকে। ফলে, আধার-এ সংগৃহীত তথ্যের সম্পূর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা সরকার বা আধার কর্তৃপক্ষের সাধ্যাতীত। এখানেই প্রশ্ন। তথ্যসুরক্ষার ব্যবস্থা পাকা না করেই নাগরিকের থেকে তাঁর যাবতীয় তথ্য বাধ্যতামূলক ভাবে আদায় করা হল, এবং এখন সেই তথ্য সামলানোর দায়ের সিংহভাগ চাপিয়ে দেওয়া হল নাগরিকের উপরেই— এমন একটি পরিস্থিতি কি চলতে পারে? আধার-কে একটি ঐচ্ছিক পরিচয়পত্র থেকে যাবতীয় নাগরিক সুবিধার নাগাল পাওয়ার বাধ্যতামূলক আঁকশি করে তুলেছে বর্তমান সরকার। এখন তথ্যের নিরাপত্তার দায়টি সরকার না নিলে কেমন করে হয়? রাষ্ট্রের দায়িত্বজ্ঞানের উপরে নাগরিকের ভরসা বজায় রাখার কাজটিও তো সরকারেরই করার কথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy