Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

সারগর্ভ

প্র থমেই বুঝিতে হইবে, প্রতিটি দেশ বা জাতির একটি ধ্রুবপদ থাকে। ভারতের সেই অব্যয় তানটি হইল ধর্ম। ফলে এই দেশে বিপ্লব আসিবে অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক ভাবে নহে, নিশ্চিত ভাবেই আধ্যাত্মিক পথে।

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৭ ০১:২১
Share: Save:

প্র থমেই বুঝিতে হইবে, প্রতিটি দেশ বা জাতির একটি ধ্রুবপদ থাকে। ভারতের সেই অব্যয় তানটি হইল ধর্ম। ফলে এই দেশে বিপ্লব আসিবে অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক ভাবে নহে, নিশ্চিত ভাবেই আধ্যাত্মিক পথে। তাহা যে এই বৎসর আসিয়া পড়িল, ইহা ভারতবাসীর সৌভাগ্য। ভারতের ধর্ম হিন্দু ধর্ম, কারণ দেশটি যে দিন যথাযথ সাইনবোর্ড পুঁতিয়া শুরু হইল, উপস্থিত ছিলেন কতিপয় গৌরবর্ণ শালপ্রাংশু প্রজ্ঞাবান হিন্দু পুরুষ ও তাঁহাদের পদানতা উদ্ভিন্নযৌবনা হিন্দু নারী। এই পুরুষরা পরে দীর্ঘ শ্মশ্রুর অধিকারী হইলে, বানপ্রস্থে গিয়া ভূরি ভূরি শাস্ত্র রচনা করেন। তাহা পাঠ করিলে অমরত্ব ব্যতীত সকলই তুরন্ত লাভ করা যায়, এবং টীকা হইতেই জানা যায়, ইউরোপে যখন সবে চকমকি ঠুকিবার ঠকাঠক ধ্বনি উঠিতেছে, তখন ভারতে প্লাস্টিক সার্জারি হইতেছে, মেট্রো রেল চলিতেছে, মিসাইল ছুটিতেছে, বেতার ধারাবিবরণী ঘটিতেছে, দ্রুতগামী বিমান নিয়মিত সার্ভিস দিতেছে। কেবল নিষ্ঠাবান মিস্ত্রির অভাবে এইগুলি হারাইয়া গেল। কিন্তু গ্রন্থগুলি তো হারায় নাই। এক বার সংস্কৃত শিখিয়া লইলেই, সহস্র অলৌকিক কাণ্ড বিকশিত। এমনই শ্লোক বলে, অসামান্য সন্তান পরিকল্পিত ভাবে উৎপাদন করা যায়। গর্ভবিজ্ঞান এক বৈদিক পদ্ধতি, যাহা অবলম্বন করিলে অনায়াসে প্রতিভা প্রসব করা যাইবে, ভারত জগৎসভায় তুড়ি মারিয়া শ্রেষ্ঠ আসন লভিবে। কেবল কালের গর্ভে এমন একটি সহজ কাণ্ড চাপা পড়িয়া ছিল বলিয়া কত শত তঞ্চক অপদার্থ গণ্ডমূর্খে দেশ ভরিয়া গেল।

বুঝিতে হইবে, যাহা কিছু সংস্কৃতে লিখা রহিয়াছে, তাহা প্রশ্নাতীত ও প্রমাণিত। সংস্কৃেত কেহ মিথ্যা বলিত না, কেহ গালি দিত না। কারণ, সেই যুগে কেবলই চরিত্রবান প্রতিভাবান পুণ্যবান মানুষে দেশ থিকথিক করিত। এতগুলি লোকের প্রত্যেকেই রূপবান সৃষ্টিময় ও কপালভাতি-রত, তাহা তো সমাপতন হইতে পারে না। ইহা গর্ভবিজ্ঞানের ফল। আরএসএস-এর সহিত যুক্ত হইয়া ‘আরোগ্য ভারতী’ সংগঠনটি পাইকারি হারে অতুলন মানুষ নির্মাণের এই পদ্ধতি প্রচারের মহৎ দায়িত্ব স্কন্ধে তুলিয়া লইয়াছে, এ জন্য কোনও সাধুবাদই যথেষ্ট নহে। ইঁহাদের ওয়ার্কশপে কেবল গ্রহনক্ষত্রের সমাবেশ ছকিয়া দম্পতিকে বলিয়া দেওয়া হইবে মিলনের আদর্শ মুহূর্ত, ব্যস, পিতামাতার জিন ক্রোমোজোমকে তোয়াক্কা না করিয়া, শিশুর পরিবেশে রবীন্দ্রকাব্যাবৃত্তি হইতেছে না আইটেম নাম্বার বাজিতেছে তাহাকে গুলি মারিয়া, সন্তান এক হস্তে হরধনু ভাঙিবে, অন্য হস্তে গিরি গোবর্ধন নাচাইবে। মিলন কত ক্ষণ চলিবে ও মিলনরত অবস্থায় যুগ্মকণ্ঠে কঠিন শ্লোক আবৃত্তি করিতে হইবে কি না, ইহা হয়তো উচ্চতর পাঠ্যক্রমে শিখানো হইবে, কপিবুক অনুসরণ করিতে পারিলে যমজ আইনস্টাইন হওয়াও আশ্চর্য নহে। মিলনকালে স্ত্রীর চিন্তাও গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক কালের পশুধর্মে দীক্ষিতদের ন্যায় দেহসুখের কথা না ভাবিয়া, কেবলই একাগ্র হইয়া ভাবিতে হইবে যে তিনি এক টকটকে গৌর স্বাস্থ্যবান পুত্রের জন্ম দিতে চলিয়াছেন, যিনি টিভি-তে নিত্য নব চিৎকার করিবেন ও সম্মাননীয় তখ্‌তে বসিয়া পা নাচাইবেন। সংস্কার সাধিত হইলে ভারতের ঘরে ঘরে নোবেল অস্কার বুকার উপচাইয়া পড়িবে। তখন অহং না অধিক ফাঁপিয়া উঠে। আবার গর্ব-সংস্কার করিতে হইবে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pride Reform
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE