Advertisement
০৫ মে ২০২৪

দেওয়াল লিখন

পূর্বের বৎসরগুলির তুলনায় প্লাস্টিক-নির্মিত প্রচার সামগ্রীর বরাত কমিয়াছে।

কর্নাটকে জেডিএস-কংগ্রেস জোটের প্রচার। ছবি: প্রচার।

কর্নাটকে জেডিএস-কংগ্রেস জোটের প্রচার। ছবি: প্রচার।

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৯ ০০:২৬
Share: Save:

কোনও এক বিলাতি কন্যা তাহার মায়ের নিকট আর্জি করিয়াছিল, বিবাহের দিন তুচ্ছতম জিনিসটিও যথাস্থানে থাকা চাই। মা আশ্বাস দিয়াছিলেন, চিন্তা নাই, বর নির্দিষ্ট স্থানেই থাকিবে। নির্বাচনী প্রচারে নাগরিকের দশা দেখিয়া সেই গল্প মনে পড়িতে পারে। তাহার জন্য সমারোহ, কিন্তু কার্যত সে তুচ্ছ। প্রায় প্রত্যহ নেতাদের ঘিরিয়া জনসমাগম, যানজটে নাগরিকের কাজ বিঘ্নিত। শব্দতাণ্ডবে শান্তি অন্তর্হিত। প্রচারসামগ্রীতে দৃষ্টি রুদ্ধ, প্রচারমঞ্চে রুদ্ধ পথ। ভারত নামক ‘প্রজাতন্ত্র’তে নির্বাচন আসিলে নাগরিক ‘এলেবেলে’, তাহার পরিসর সঙ্কীর্ণতর। আশার কথা, এ বার নির্বাচনে কয়েকটি ঘটনা সেই পরিসরের মর্যাদাকে স্মরণ করাইল। তাহার একটির জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচনী প্রচারে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাইবার নির্দেশ দিয়াছে কমিশন। অপরটির জন্য সাধুবাদ প্রাপ্য নাগরিকদের। বাড়ির দেওয়ালকে দলীয় প্রচারের পটভূমি করিতে অনেকেরই আপত্তি থাকে, কিন্তু প্রতিবাদ করিতে সাহস করেন না। এ বার অন্তত দুইটি ক্ষেত্রে প্রাচীর রহিয়াছে নাগরিকের দখলে। একটি ক্ষেত্রে তাহা রাজনৈতিক প্রতিবাদ। অপরটিতে রাজনীতির গ্রাস হইতে নাগরিক পরিসরকে রক্ষা করিবার চেষ্টা। দৃষ্টান্তগুলি ক্ষুদ্র, কিন্তু তুচ্ছ নহে।

প্লাস্টিকের ব্যবহার সীমিত করিবার যে নির্দেশ দিয়াছে কমিশন, তাহার কিছু ফল ফলিয়াছে ইতিমধ্যেই। পূর্বের বৎসরগুলির তুলনায় প্লাস্টিক-নির্মিত প্রচার সামগ্রীর বরাত কমিয়াছে। তাহাতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা অখুশি, কিন্তু নাগরিকের খুশি হইবার কারণ আছে। এ রাজ্যে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাইবার বিশেষ কোনও সরকারি উদ্যোগ দেখা যায় নাই, বিরোধীরাও সে বিষয়ে সরকারকে বিঁধিতে ব্যস্ত নহে। প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহারে রাশ টানিবার অভিপ্রায় নানা স্তরের নেতারা নানা সময়ে ঘোষণা করিয়াছেন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁহাদের প্রচেষ্টা ভিজা আতসবাজির মতো, খানিক উঠিয়াই মুখ গুঁজিয়া পড়িয়াছে। নাগরিক সমাজও যথেষ্ট সচেতন ও তৎপর নহে। তবে কিছু সুলক্ষণ ইহারই মধ্যে দৃশ্যমান। পরিবেশের সুরক্ষার দাবিতে ছাত্রছাত্রীরা কোথাও কোথাও আন্দোলন করিতেছে। যদি কমিশনের নির্দেশ বাস্তবিকই প্রচারসামগ্রীতে প্লাস্টিক ব্যবহার কমাইতে পারে, তবে পরিবেশের সুরক্ষার বিষয়টি অন্তত এই ভাবে নির্বাচনী প্রচারে স্থান পাইবে। জল, মাটি, বায়ু দূষণ নাগরিককে বিপন্ন করিলেও, সে বিষয়ে প্রচার করিতে কোনও দলই আগ্রহী নহে, তাহা তো স্পষ্ট।

নাগরিকের নিকট যাহা গুরুত্বপূর্ণ, রাজনৈতিক দল তাহার প্রতি উদাসীন। হুগলির পুরশুড়া ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা সম্প্রতি এক অভিনব উপায়ে তাহার প্রতিবাদ করিয়াছেন। রাস্তা, জল না পাইবার ক্ষোভে তাঁহারা শাসক দলকে দেওয়ালে লিখিতে দেন নাই। মন্দ রাজনীতির বিরুদ্ধে ইহা নাগরিকের প্রতিবাদ। অপর পক্ষে, নির্বাচনের মুখে কলিকাতার এক গৃহস্থ তাঁহার বাড়ির দেওয়াল দিয়াছেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে, মনোরোগ সম্পর্কে চিত্রিত বার্তা আঁকিতে। দলীয় রাজনীতি হইতে নাগরিক পরিসরকে উদ্ধার করিবার ইহাও এক কৌশল। প্রচার একতরফা হইবে কেন? নাগরিকের দেওয়াল-লিখনও পড়িতে হইবে নেতাকে। এমন দিন হয়তো আসিবে, যখন নির্বাচন আসিলে নেতার উদ্দেশে নিজের প্রাচীরে দাবি লিখিবেন সকল গৃহস্থ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Election Commission Plastics Election Campaign
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE