সংসদের সামনে মিমি চক্রবর্তী ও নুসরত জাহান। ফাইল চিত্র।
দিল্লিতে একদা পিৎজ়া ভক্ষণরত অবস্থায় এক বাম সাংসদ তাঁহার পরিচিত সাংবাদিককে দেখিয়া অতিশয় বিব্রত হইয়াছিলেন। ইটালীয় খাবার ভালবাসিবার অর্থ বিদেশি পুঁজির সহিত আপস নহে, এই বলিয়া সাংসদকে আশ্বস্ত করিতে যথেষ্ট পরিশ্রম হইয়াছিল সাংবাদিকের। কখনও খাদ্য, কখনও পোশাককে অবলম্বন করিয়া নেতাদের ব্যক্তিগত রুচির সহিত কোনও এক অলিখিত ‘আদর্শ আচরণবিধি’-র বিরোধ বাধিয়া যায় মাঝেমধ্যেই। দুই নব-নির্বাচিত তরুণী সম্প্রতি সংসদের সম্মুখে নিজস্বী তুলিতে ফের গোল বাধিয়াছে। তাঁহাদের বেশভূষা ও ভঙ্গিমা অপরাপর সমবয়সিদের ন্যায়। সেই ছবি সমাজ মাধ্যমে ‘ভাইরাল’ হইয়াছে। প্রশ্ন উঠিতেছে, ইহারা কি সাংসদ হইবার যোগ্য? কে যোগ্য সাংসদ, সে প্রশ্নটি যথেষ্ট গুরুতর। কেহ দাবি করিতেই পারেন যে, নির্বাচনে জয়লাভ সংসদে যাইবার শর্ত হইতে পারে, ‘যোগ্য’ বিবেচিত হইতে অধিক কিছু দাবি পূরণ করিতে হয়। কিন্তু সেই অতিরিক্ত গুণগুলি কী, সে বিচার প্রায়ই ‘দর্শনধারী’ হইবার প্রত্যাশায় থমকাইয়া যায় কেন? পুরুষদের সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা বা ধুতি, মহিলাদের শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজ, এমন সাবেকি পোশাক যেন নেতৃত্বের ‘ইউনিফর্ম’ হইয়া উঠিয়াছে। আমরা ভুলিয়াছি, স্বাধীনতার পূর্বে যখন নেতারা ধুতি পরিতেন, তখন তাহা ছিল সকলের পোশাক। আজ জনতার পরিধানে পরিবর্তন আসিয়াছে, নেতা বদলাইবেন না কেন?
স্বাধীনতা সংগ্রামে জেল-খাটিয়া সর্বস্বান্ত রাজনৈতিক নেতা, আর প্রতি নির্বাচনে বর্ধিত-বিত্ত সাংসদ, ইহারা একই পোশাক পরিলেও একই গোত্রের মানুষ নহেন। অথচ প্রতীকী পোশাকের মোহনমায়া এমনই যে, কোনও পুরুষ সাংসদ কোটি টাকা মূল্যের গাড়ি হইতে খদ্দরের পাজামা-পাঞ্জাবি পরিয়া নামিলে, অথবা কোনও মহিলা সদস্য শাড়ির সহিত প্রচুর গহনা পরিয়া সংসদে আসিলে, তাহাতে কেহ আপত্তিকর কিছু দেখিতে পান না। দরিদ্র জনতার সহিত জন-প্রতিনিধির দূরত্ব বাড়িতেছে ভাবিয়া বিমর্ষ হইয়া পড়েন না। কিন্তু কোনও সাংসদ যদি আর পাঁচটি কলেজ-পড়ুয়া অথবা পেশাদার কর্মীর ন্যায় বেশভূষা করিয়া সংসদে আসেন, তাহাতে সকলে বড়ই বিচলিত হইয়া পড়েন। সংসদের গুরুভার ঐতিহ্য বুঝি ধূলিসাৎ হইল। যে দুই তরুণী সাংসদের ছবি লইয়া এত আক্ষেপ উঠিল, সেই মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরত জাহান চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বলিয়া হয়তো আশঙ্কা আরও তীব্র হইয়াছে। অথচ ভারতে একাধিক অভিনেতা সফল রাজনীতিক হইয়াছেন। অন্ধ্রপ্রদেশে এন টি রাম রাও, তামিলনাড়ুতে এম জি রামচন্দ্রন, জয়ললিতা দৃষ্টান্ত। সাংসদ হিসাবে নার্গিস, শাবানা আজমি যথেষ্ট প্রশংসা পাইয়াছেন। আর, ফুটবল বা ক্রিকেটের তারকাদের যদি সাংসদের ভূমিকায় মানিতে দ্বিধা না থাকে, অভিনেত্রীদের ক্ষেত্রেই বা ‘যোগ্যতা’ লইয়া প্রশ্ন উঠিবে কেন? যাঁহারা একাধিক বার নির্বাচিত হইয়াছেন, তেমন বেশ কিছু সাংসদকে সংসদের ভিতরে ও বাহিরে যে আচরণ করিতে দেখা যায়, তাহা শোভনতার সীমা অতিক্রম করিয়া নৈতিকতার সীমাও পার হইয়া যায়। খুন-ধর্ষণে, সন্ত্রাসে অভিযুক্তদেরও ‘যোগ্য’ বিবেচনা করিয়া সংসদে পাঠাইতে দ্বিধা করেন না দেশবাসী। ইহার পরে পরিধানের রুচিবোধ দিয়া যোগ্যতার বিচার না হয় থাক। বিদেশি খাদ্য, বিদেশি পোশাক, কোনওটিই দেশের কাজে বাধা নহে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy