Advertisement
১১ মে ২০২৪
Polythene

সুপরামর্শ বটে

সমীক্ষায় জানা গিয়াছে, মানুষ গড়পড়তা হিসাবে খাদ্যদ্রব্যের প্রতি বৎসর ৬৮,০০০ মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা গলাধঃকরণ করিয়া থাকে। উদরস্থ মাইক্রোপ্লাস্টিক কিয়ৎ পরিমাণে মলমূত্রে নির্গত হয়। তাহা স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের উদ্বেগের কারণ নহে। তাঁহারা চিন্তিত বরং পাকস্থলীর কোষে এবং রক্তে মাইক্রোপ্লাস্টিক কণার প্রবেশ লইয়া।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২০ ০৬:৫৮
Share: Save:

হলিউডি চলচ্চিত্র দ্য গ্র্যাজুয়েট নানা কারণে বিখ্যাত। উক্ত ছবিতে অভিনয় ডাস্টিন হফম্যানকে তারকার মর্যাদা আনিয়া দেয়। অনেকের ধারণা, এই ছবিটিতেই হফম্যানের রুপালি পর্দায় আবির্ভাব। ধারণাটি ভ্রান্ত। তাঁহার প্রথম ছবি দ্য টাইগার মেকস আউট, যাহার খ্যাতি দ্য গ্র্যাজুয়েট অপেক্ষা অনেক কম। ওই চলচ্চিত্রের পরিচালক মাইক নিকোলস শুধু অস্কার জিতেন নাই, ফিল্মটি শ্রেষ্ঠ ছবি এবং হফম্যান নবাগত নায়ক হিসাবে অস্কার মনোনয়নও পান। ছবির কাহিনির কেন্দ্রে এক সদ্য-স্নাতক যুবক বেঞ্জামিন ব্র্যাডক। তাঁহার ধনী পিতা পুত্রের ভবিষ্যৎ লইয়া চিন্তিত। সমাজে তিনি যে রূপ প্রতিষ্ঠিত, পুত্রকেও তিনি তেমন প্রতিষ্ঠিত দেখিতে চান। পুত্র বেঞ্জামিন অবশ্য নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিতান্ত উদাসীন। যুবা বয়সের প্রবৃত্তি হেতু সে বরং জীবন উপভোগে বেশি আগ্রহী। সুতরাং, পিতার উদ্বেগ তাহাকে স্পর্শ করে না। বয়সে বড় এক বিবাহিতা মহিলার সঙ্গে তাহার সম্পর্ক স্থাপিত হয়। কিন্তু, বেঞ্জামিনের প্রেম হয় উক্ত মহিলার কন্যার সহিত। ছবিটির ঘটনাপ্রবাহ তৎকালীন দর্শক-চিত্তে রীতিমতো আলোড়ন ফেলিয়াছিল। প্রশংসাও কম জুটে নাই।

দ্য গ্র্যাজুয়েট চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যের এক সংলাপ বিখ্যাত হইয়া আছে। উক্ত সংলাপ কাহিনিতে কতখানি সম্পৃক্ত, তাহা বলা যায় না, বরং প্রক্ষিপ্ত বলিয়াই মনে হয়। তথাপি সংলাপটি যে তাৎপর্যপূর্ণ, তাহা অস্বীকার করা যায় না। সংলাপ এক উপদেশ, যাহা বেঞ্জামিনের উদ্দেশে অযাচিত ভাবে বর্ষিত হয়। উক্ত দৃশ্যটি পুত্রের স্নাতক ডিগ্রি লাভ উপলক্ষে বেঞ্জামিনের পিতা কর্তৃক আয়োজিত এক পার্টি। আমন্ত্রিত শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ। প্রভূত খানাপিনার আয়োজন। আহারাদি সমাপনান্তে অভ্যাগতেরা একে একে নিষ্ক্রমণে উদ্যত। এমত সময়ে সুরাসক্ত এক আমন্ত্রিত ব্যক্তি বেঞ্জামিনের উদ্দেশে বললেন, ‘প্লাস্টিক, বেঞ্জামিন প্লাস্টিক!’ অর্থাৎ, তিনি বেকার বেঞ্জামিনকে প্লাস্টিক দ্রব্যের ব্যবসায় নামিতে পরামর্শ দেন। আপাত অর্থে প্রক্ষিপ্ত শুনাইলেও ওই উপদেশ মূল্যবান। বিশেষত, সমকাল বিচার করিলে। দ্য গ্র্যাজুয়েট মুক্তি পায় ১৯৬৭ সালে। প্লাস্টিক দ্রব্যাদি তখন রসায়ন শিল্পে নবাগত। জিনিসগুলি যে অচিরে বিশ্ববাজার দখল করিবে, তাহা সন্দেহাতীত। এমতাবস্থায়, বেঞ্জামিন গ্রাহ্য করুক বা না-ই করুক, এক বেকার যুবককে প্লাস্টিক দ্রব্যের ব্যবসায় নামিতে উপদেশ দান দাতার পক্ষে দূরদর্শিতার পরিচায়ক। আর, কে না জানে, দূরদর্শিতা চাতুর্যেরই নামান্তর।

কিন্তু, প্রদীপের নীচেই যে অন্ধকার! একদা বিশ্বব্যাপী খাদ্যাভাব দূরীকরণে অধিক ফলনশীল শস্য আবিষ্কৃত হইয়াছিল। আনুষঙ্গিক চাহিদা ছিল অধিক জলসেচ এবং সার ও কীটনাশক প্রয়োগ। সেই সব প্রয়োজন মিটাইতে গিয়া পরিবেশ আজি বিপন্ন। তদ্রূপ পরিবেশ দূষিত প্লাস্টিক দ্রব্য অধিক পরিমাণে ব্যবহারের ফলেও। হালকা অথচ মোটামুটি ভাবে শক্ত বলিয়া প্লাস্টিকের ব্যবহার ১৯৬০-এর দশকের গোড়ায় শুরু হইয়াছিল। এখন কিসে না প্লাস্টিক লাগে? ক্যালিফর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণের দ্বারা প্রস্তুত এক সমীক্ষা হইতে জানিতে পারা গিয়াছে, ৮৩০ কোটি টন প্লাস্টিক অদ্যাবধি উৎপাদিত হইয়াছে। পৃথিবী গ্রহে উৎপাদিত প্লাস্টিকের পাহাড় কী পরিমাণে জমিয়াছে, তাহা বিশেষজ্ঞগণ এক উপমা ধার করিয়া বুঝাইয়াছেন। গিজায় পিরামিডের ওজন ৫০ লক্ষ টন। অর্থাৎ, অদ্যাবধি উৎপাদিত প্লাস্টিক দ্রব্যসমূহের ওজন ১৬৬০টি গিজার পিরামিডের ন্যায়। বর্জ্য প্লাস্টিক যদি জলে-মাটিতে-বাতাসে মিলাইয়া যাইত, তাহা হইলে দুশ্চিন্তার কারণ থাকিত না। বিজ্ঞানীরা যাহাকে বায়োডিগ্রেডেবল কহেন, প্লাস্টিক তাহা নহে। প্লাস্টিক প্লাস্টিকই থাকে। কেবল ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণায় বিভক্ত হইয়া যায়। উহাকে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। এই মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রাণিদেহের পক্ষে ক্ষতিকর। সমীক্ষায় জানা গিয়াছে, মানুষ গড়পড়তা হিসাবে খাদ্যদ্রব্যের প্রতি বৎসর ৬৮,০০০ মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা গলাধঃকরণ করিয়া থাকে। উদরস্থ মাইক্রোপ্লাস্টিক কিয়ৎ পরিমাণে মলমূত্রে নির্গত হয়। তাহা স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের উদ্বেগের কারণ নহে। তাঁহারা চিন্তিত বরং পাকস্থলীর কোষে এবং রক্তে মাইক্রোপ্লাস্টিক কণার প্রবেশ লইয়া। কারণ জানা গিয়াছে, মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষিত পদার্থ হাইড্রোকার্বন, কীটনাশক রাসায়নিক, এমনকি ধাতু পর্যন্ত শোষণে সক্ষম। বেকার যুবক বেঞ্জামিনকে প্লাস্টিক দ্রব্যের ব্যবসায় নামিতে উপদেশ চতুর পরামর্শ নিশ্চয়ই, তবে তাহা পরিবেশের পক্ষে বিপজ্জনক ছিল।

যৎকিঞ্চিৎ

পায়ে বহু ফোস্কা ফেলে বাঙালি শিখেছে, নিকারাগুয়ায় নিপীড়ন নিয়ে মিছিল হাঁকড়ে লাভ নেই। তাই বাঙালি এখন সিরিয়ালের প্রতিবাদ করে। কিচ্ছুটি না জেনেই নায়িকা প্লেন চালিয়ে দিল— বাঙালি রেগে কাঁই। বাথরুম ঘষার ব্রাশ দিয়ে ডাক্তার ডিফিব্রিলেটরের কাজ করছে দেখে বাঙালির শপথ, মরে গেলেও হাসপাতালে যাব না। সিরিয়াল দেখে ব্যক্তিগত হাসি-কান্না এখন অতীত। প্রতিবাদ এখন সোশ্যাল মিডিয়ায়। জীবনের মাপ বড় জোর তেতাল্লিশ ইঞ্চি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Polythene Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE