Advertisement
১১ মে ২০২৪
সম্পাদকীয় ১

ধন্য আশা

এই হিসাবের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত পেট্রলিয়ামের মূল্যবৃদ্ধির হিসাবটি কীভাবে আছে, তাহাও বোঝা প্রয়োজন।

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৩৪
Share: Save:

নরেন্দ্র মোদীর এক ঘা সামলাইয়া ভারতীয় অর্থনীতি ফের ঘুরিয়া দাঁড়াইতেছে— আশাবাদী সদ্য প্রকাশিত অর্থনৈতিক সমীক্ষা। একটি সচল গাড়িকে সর্বশক্তিতে খারাপ করিয়া ফের বহু মেহনতের পর তাহাকে সচল করিবার মধ্যে যতখানি কৃতিত্ব প্রাপ্য, প্রধানমন্ত্রী তাহা বিলক্ষণ দাবি করিতে পারেন। ২০০৭ সালের মন্দার ধাক্কার প্রায় এক দশক পরে বিশ্ব অর্থনীতি যখন ঘুরিয়া দাঁড়াইতেছিল, নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিল তখন ভারতকে তলানিতে লইয়া যায়। অর্থনৈতিক সমীক্ষার আশা, এই বৎসর জাতীয় আয়ের বৃদ্ধির হার ৬.৭৫ শতাংশের কাছাকাছি থাকিবে এবং আগামী বৎসর তাহা বাড়িয়া সাড়ে সাত শতাংশের কক্ষপথে পৌঁছাইবে। সেই আশাবাদ অবশ্য নড়ব়ড়ে ভিত্তির উপর দাঁড়াইয়া আছে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করিয়া দিয়াছেন, আগামী পাঁচ বৎসরে তিনি কৃষির আয় দ্বিগুণ করিয়াই ছাড়িবেন। চক্রবৃদ্ধি হারের হিসাব কষিলে বুঝিতেন, তাহার জন্য কৃষিক্ষেত্রের আয়কে বৎসরে ১৪ শতাংশ হারে বাড়িতে হয়। কোন মন্ত্রে সেই বৃদ্ধি হইবে, প্রধানমন্ত্রী স্বভাবতই তাহা জানাইবার প্রয়োজন বোধ করেন নাই। তিনি বিপণনের লোক, কথামাত্রসার— প্রকৃত অর্থনীতির সংবাদ লইতে তাঁহার ভারী বহিয়া গিয়াছে। অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন অর্থনৈতিক সমীক্ষায় এই দ্বিগুণ আয়ের রূপকথাটিকে ঠাঁই দেন নাই বটে, কিন্তু জিডিপি-র সাড়ে সাত শতাংশ হারে বৃদ্ধির জন্য কৃষিক্ষেত্রের বিপুল বৃদ্ধির আবশ্যিকতাকে অস্বীকার করিবেন কীভাবে?

এই হিসাবের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত পেট্রলিয়ামের মূল্যবৃদ্ধির হিসাবটি কীভাবে আছে, তাহাও বোঝা প্রয়োজন। তেলের দাম বাড়িতেছে। আনুমানিক হিসাব বলে, ব্যারেলপ্রতি দশ ডলার মূল্যবৃদ্ধির অর্থ, জাতীয় আয়ের বৃদ্ধির হার হইতে ০.২৫ শতাংশ-বিন্দু কমিয়া যাওয়া। আগামী অর্থবর্ষে তেলের দাম ১২ শতাংশ হইতে ২০ শতাংশ বাড়িবে বলিয়া বাজারের অনুমান। যদি বৃদ্ধির হারটি ১২ শতাংশের ধারে-কাছে থাকে, ভারতীয় অর্থনীতির ছবি এক রকম হইবে। আর, তেলের দাম ২০ শতাংশ হারে বাড়িলে ছবিটি অন্য রকম। এই অনিশ্চিতির উপর ভরসা করিয়া সাড়ে সাত শতাংশ বৃদ্ধির স্বপ্ন দেখা বিপজ্জনক। তৃতীয় প্রশ্ন, বেসরকারি বিনিয়োগ লইয়া। সাড়ে সাত শতাংশ আয়বৃদ্ধির জন্য যতখানি বিনিয়োগ আসা প্রয়োজন, সাম্প্রতিক অতীতে ভারত তাহা দেখে নাই। বর্তমান অর্থবর্ষে যত লোক চাকরি হারাইয়াছেন, তাহা বিনিয়োগের অভাবের একটি মস্ত প্রমাণ। যদিও অতি সম্প্রতি বিনিয়োগের গতি বাড়িয়াছে, কিন্তু আগামী কাল অরুণ জেটলি বাজেট পেশ করিলেই লগ্নিকারীরা টাকার ঝুলি হাতে নর্থ ব্লকে লাইন লাগাইবেন, এমন অনুমানের কোনও বিশ্বাসযোগ্য ভিত্তি নাই। বিশেষত নির্মাণশিল্প এখনও যে সুগভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত, তাহা হইতে উদ্ধারের আশু সম্ভাবনা ক্ষীণ।

অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন যে সুর বাঁধিয়া দিয়াছেন, তাহাই যদি সরকারের মনের কথা হয়, তবে কৃষি এবং কর্মসংস্থানই আগামী অর্থবর্ষে পাখির চোখ হইতে চলিয়াছে। নির্বাচন আসিতেছে, অতএব লক্ষ্যগুলির তাৎপর্য বোঝা সম্ভব। মুশকিল হইল, শুধু মুখের কথায় যদি অর্থনীতির হাল ফিরিত, তবে নরেন্দ্র মোদীর পৌনে চার বৎসরের শাসনে ভারতের সমৃদ্ধি রাখিবার জায়গা থাকিত না। বৎসরে সওয়া এক কোটি নূতন কর্মসংস্থান করাই হউক, অথবা কৃষকের আয় দ্বিগুণ করিয়া দেওয়া— সবই তাঁহার প্রতিশ্রুতি। প্রকৃত অর্থনীতিকে তাহার জন্য প্রস্তুত করিবার চেষ্টা কোথায়? অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন বেসরকারি পুঁজির বিকাশের ক্ষেত্রে আস্থার প্রসঙ্গ টানিয়াছেন। দেশে আস্থার বৃহত্তম ঘাটতির উৎস স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীই কি নহেন? তাঁহার কোনও কথাতেই যদি বিশ্বাস না করা যায়, তবে অর্থনীতি কিসের ভরসায় চলিবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE