Advertisement
E-Paper

ডিজিটাল অভিযোগ নয় কেন

কত কিছু বদলায়। তবু যেন কিছু বদলায় না। একেবারে আধুনিক বিনোদন জোগায় যে ডিজিটাল বিনোদন সংস্থা, কিছু দিন আগে তার কর্ণধারের বিরুদ্ধে এক মহিলা কর্মী এনেছেন।

সুজিষ্ণু মাহাতো

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৭ ০০:৩৯

কত কিছু বদলায়। তবু যেন কিছু বদলায় না। একেবারে আধুনিক বিনোদন জোগায় যে ডিজিটাল বিনোদন সংস্থা, কিছু দিন আগে তার কর্ণধারের বিরুদ্ধে এক মহিলা কর্মী এনেছেন। সেই পরিচিত যৌন হেনস্থার অভিযোগ। কিন্তু যে ভাবে এল অভিযোগ, যে ভাবে সমর্থন পেল, তা আবার সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কে আমাদের চিন্তাকে চ্যালেঞ্জ করছে।

টিভির মেগা সিরিয়ালের মতো এখন ইউটিউবে তৈরি হচ্ছে ওয়েব সিরিজ। এগুলির দর্শক প্রধানত তরুণতরুণীরা। বিষয় নির্বাচনও হচ্ছে তাদের মাথায় রেখে— লিভ-ইন সম্পর্ক, চাকরি ছেড়ে স্টার্ট আপ শুরু করা, এই সব। এগুলো তৈরিও করছেন তরুণেরাই। এমন ওয়েব-বিনোদনে জনপ্রিয়তার প্রথম সারিতে থাকা এক সংস্থার কর্ণধারের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এল একটি ব্লগসাইটে। এক তরুণী সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেন। দু’বছর ধরে তাঁকে হেনস্থা হতে হয়েছে, বলছেন সংস্থার ওই প্রাক্তন কর্মী। ওই সাইটেই এক মহিলা অ্যাপ-ক্যাবে ‘সেক্সিজম’-এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন।

ব্লগটি প্রকাশিত হওয়ার পরই একের পর এক শ্লীলতাহানির অভিযোগ আসতে থাকে সংস্থাটির ওই কর্ণধারের বিরুদ্ধে। সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন এমন মহিলা পরিচালক থেকে শুরু করে ওঁর পরিচিত বান্ধবী— অভব্যতার অভিযোগের বন্যা বয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। মুম্বই পুলিশ বলে, থানায় এসে অভিযোগ না করলে এফআইআর হবে না। দুই মহিলা অভিযোগ দায়ের করেন। মুম্বই পুলিশ এখন অভিযুক্তকে খুঁজছে।

প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশ যদি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে থানায় অভিযোগ জানানোর আবেদন করতে পারে, তা হলে সোশ্যাল মিডিয়ার অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে, তার ভিত্তিতে কেন পদক্ষেপ করতে পারে না? কোনও কোনও রাজ্যে পুলিশ অনলাইনে অভিযোগ নিচ্ছে, কিন্তু সে সব ছোটখাটো অপরাধের। নির্যাতন-ধর্ষণের মতো অভিযোগ প্রায় কেউই নিচ্ছে না। যদিও এক সাইবার আইন বিশেষজ্ঞের বক্তব্য, পোস্টকার্ড বা টেলিগ্রামে পাঠানো অভিযোগের ভিত্তিতে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেছে, এমন নজির আছে। তা হলে পরিচয়ের প্রমাণ-সহ অনলাইন অভিযোগ এলে পুলিশ যে কোনও অপরাধের অভিযোগ নেবে না কেন?

আইন সময়ের থেকে সাধারণত পিছিয়েই থাকে। এখন সকলেই ডিজিটাল মাধ্যমে অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ। অনেক কাজ, যা কয়েক বছর আগে বাড়ি বসে করার কথা ভাবাই যেত না, এখন করা যায় ইন্টারনেটে। তা হলে অভিযোগ জানাতে থানায় ছুটতেই হবে কেন? ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে বাধা কোথায়? থানায় কি নির্যাতিতা স্বচ্ছন্দ হতে পারেন? মহিলা থানা তৈরি হয়েও কি মেয়েদের সুবিধে বেড়েছে? থানায় মেয়েরা এলে পুলিশের সুবিধে হতে পারে, মেয়েদের কতটা সুবিধে?

তাই ডিজিটাল দুনিয়াকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে পুলিশ-প্রশাসনকে। অনলাইন অভিযোগ করার সুবিধে বাড়ানো দরকার। যে কোনও অভিযোগের সত্যতাই পুলিশ যাচাই করে। অনলাইন অভিযোগ ভুল না ঠিক, তা-ও যথাযথ যাচাইয়ের ব্যবস্থা রাখলেই হয়।

উল্টো দিকের উদ্বেগ— অসার, দুরভিসন্ধিমূলক অভিযোগ অনেক আসে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাকে গুরুত্ব দিলে অভিযুক্তের সামাজিক সম্মানহানি হয় না কি? এ প্রশ্ন উঠেছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এক ছাত্রী তাঁর বিভাগেরই এক গবেষক ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন ফেসবুকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তা ছড়িয়ে পড়ায় ওই ছাত্রকে ভার্চুয়াল ও বাস্তব দুই জগতেই হেনস্থার শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ। সেই হেনস্থার জেরেই ওই ছাত্র নিখোঁজ হয়ে যান বলে দাবি করেন তাঁর বন্ধুরা।

আসলে সোশ্যাল মিডিয়ার এখনও কোনও ‘ইতিহাস’ নেই। প্রতিদিন বাড়ছে, প্রতিদিন বদলাচ্ছে। তাই দৈনন্দিন জীবনযাপনকেও খাপ খাইয়ে নিতে হবে। অপরাধ আর তার প্রতিকার এর বাইরে নয়। আজ যে মেয়েরা ব্লগসাইটে, ফেসবুকে অভিযোগ করছেন, তার একটা কারণ হতে পারে তাঁদের অনেকে থানা-পুলিশে ভরসা হারিয়েছেন। বা নিজে গিয়ে অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়াটা পছন্দ করছেন না। আবার এমনও হতে পারে যে, সোশ্যাল মিডিয়াতে চেপে-রাখা যন্ত্রণার প্রকাশটাই তাঁদের ‘ন্যায়প্রাপ্তি’ বলে মনে হচ্ছে, অসম্মানিত হওয়ার কষ্টের সান্ত্বনা এনে দিচ্ছে। নিজের পরিচয় গোপন করার যে সুযোগ সোশ্যাল মিডিয়ায় আছে, তা তাঁকে সাহস জোগাচ্ছে। দুষ্কৃতীকে প্রত্যাঘাত করা, অন্যদের তার সম্পর্কে সতর্ক করা, এগুলোর মূল্যও কম নয়।

Police complain Digitalization
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy