ভারতের রাজনীতিতে ক্ষমতার প্রকরণে যে মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়েছে, তার আলোচনা গত কালই হয়েছে (‘লোকের চোখে ধুলো দিয়ে’, আবাপ ৩১-১২)। তবে কি ভারতীয় রাজনীতি মোড় ঘুরে অন্য দিকে চলতে শুরু করল? বিজেপি নেতারা মাঝে মাঝে সুর নরম করে বলছেন বটে যে নাগরিকত্ব আইনের সঙ্গে এনআরসি-র কোনও সম্পর্ক নেই, কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদের ভিতরে-বাইরে একাধিক বার বলেছেন, আগে সিএএ হবে, তার পর সারা দেশে এনআরসি হবে। নতুন আইনে নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার কথা বলা নেই বটে, কিন্তু ধর্মের ভিত্তিতে আইনি আর বেআইনি আগন্তুকের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এত দিন ভারতবর্ষে নাগরিকত্বের কোনও আলাদা পরিচয়পত্র ছিল না। অন্য দেশ থেকে আসা মানুষ যাঁরা এ দেশে বাস করে চাষ করেছেন, চাকরি করেছেন, ব্যবসা করেছেন, জমি কিনেছেন, বাড়ি করেছেন, স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতে যাঁরা রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড, আধার কার্ড, এমনকি কেউ কেউ হয়তো পাসপোর্টও পেয়েছেন, তাঁদের এখন বলা হবে, নাগরিকত্বের প্রমাণ দাও। জনসাধারণ যে অশান্ত হয়ে উঠেছে, তার কারণ আছে বইকি।
অন্য দিকে প্রতিহিংসা চলছে। উত্তরপ্রদেশের মুসলিম ও প্রতিবাদী নাগরিকদের ওপর পুলিশের চরম অত্যাচার হয়েছে। ইন্টারনেট বন্ধ, তবু যা জানা যাচ্ছে তাতে রক্ত হিম হয়ে যায়। কাশ্মীরের ঘটনায় যাঁরা ভাবছিলেন, ‘কাশ্মীরের ব্যাপার, আমাদের কী?’ তাঁরা কি বুঝছেন, দমন নীতি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে সময় লাগে না?
চাপে পড়ে বিজেপি তাদের ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি থেকে হঠাৎ সরে আসবে— মনে করা ভুল হবে। বিশেষত দিল্লি বিধানসভার নির্বাচন আসন্ন। রাজ্য নির্বাচনে একের পর এক হারের পর দিল্লিতে তারা উগ্র হিন্দু জাতীয়তার তাস খেলতেই পারে।