Advertisement
E-Paper

দুর্ভাগা

অতঃপর স্কুলে স্কুলে পোস্টার টাঙানো থাকিবে। কোন ক্লাসে কত দূর পড়াইবার কথা, তাহার বিজ্ঞাপন। পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান জানাইয়াছেন, এই পোস্টার দেখিয়া অভিভাবকরা বুঝিতে পারিবেন

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

অতঃপর স্কুলে স্কুলে পোস্টার টাঙানো থাকিবে। কোন ক্লাসে কত দূর পড়াইবার কথা, তাহার বিজ্ঞাপন। পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান জানাইয়াছেন, এই পোস্টার দেখিয়া অভিভাবকরা বুঝিতে পারিবেন, বৎসরভর ক্লাসে যথেষ্ট পড়ানো হইতেছে কি না। যদি না হয়, তবে তাঁহারা শিক্ষকদের প্রশ্ন করিতে পারিবেন।

প্রকৃত অর্থে, বিজ্ঞাপনটি পশ্চিমবঙ্গের বেহাল শিক্ষাব্যবস্থার। কোন অবস্থায় ঠেকিলে পাঠ্যক্রমটিকে পোস্টার ছাপাইয়া জানাইতে হয়! যে শ্রেণির পাঠ্যক্রমে যাহা আছে, শিক্ষাবর্ষে তাহা সম্পূর্ণ হইবে, ইহা যে কোনও সুস্থ শিক্ষাব্যবস্থার একেবারে গোড়ার কথা। কথাটিকে বিদেশ হইতে আমদানি করিতে হয় নাই— কিছু বৎসর পূর্বেও এই রাজ্যের অতি সাধারণ স্কুলেও তাহাই স্বাভাবিক ছিল। বস্তুত, ক্লাসের পাঠ্যক্রমের অতিরিক্ত কতখানি স্কুলে পড়ানো হইল, ছাত্ররা বইয়ের বাহিরে আর কী কী শিখিল, তাহাই ছিল তখনকার গুণমানের মাপকাঠি।

রাজনীতির অনুপ্রবেশ শিক্ষার কী ক্ষতি করিতে পারে, এই প্রস্তাবিত পোস্টারগুলিতে প্রকৃত প্রস্তাবে তাহাই লেখা থাকিবে। পশ্চিমবঙ্গ সমগ্র শিক্ষা মিশনের বকলমে সরকার মানিয়াই লইল, শিক্ষকরা প়়ড়ান না। কারণ, এই রাজ্যের শিক্ষকরা জানেন, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকিতে পারিলে নিজেদের কাজটুকু না করিলেও চলে। শিক্ষকদের এই উপলব্ধিটি তৃণমূল আমলের নহে। বামফ্রন্টই শিখাইয়া গিয়াছে, পতাকা বহিবার শকতি থাকিলে আর কোনও কিছুরই প্রয়োজন নাই। এই জমানায় সেই উত্তরাধিকার অব্যাহত।

কেহ প্রশ্ন করিতে পারেন, রাজনৈতিক আধিপত্য কমিবার ভরসায় থাকাই কি তবে বিধেয়? আদর্শ পরিস্থিতিতে, নিশ্চিত ভাবেই। কিন্তু, রাজ্যবাসী অভিজ্ঞতায় জানেন, তাহা হইবার নহে। সেই ক্ষেত্রে এই পোস্টার লাগাইবার সিদ্ধান্তটি কার্যকর হইতে পারে। অন্তত, রিচার্ড থেলার তেমনই বলিবেন। ‘নাজ’ নামক অর্থনৈতিক দর্শনটির প্রধান প্রবক্তা, নোবেলজয়ী থেলার বলিবেন, শিক্ষকদের যদি প্রতিনিয়ত নিজেদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করাইয়া দিতে হয়, তবে ক্লাসঘরের বাহিরে টাঙানো পোস্টারগুলি অতি কার্যকর হইতে পারে। ক্লাসে ঢুকিবার সময় পোস্টারগুলি নজরে পড়িলে তাঁহাদের অবচেতন মনে দায়িত্ববোধ জাগিবে, কারণ তাঁহাদের মনে পড়িয়া যাইবে যে তাঁহারা জবাবদিহি করিতে দায়বদ্ধ। গবেষণাগারের পরীক্ষায় দেখা গিয়াছে, নিছক দুইটি চোখের ছবি সম্মুখে থাকিলেই পরীক্ষায় নকল করিবার, অথবা পড়িয়া থাকা টাকা চুরি করিবার প্রবণতা কমে। পশ্চিমবঙ্গের ক্লাসঘরগুলিতেও এই ‘নাজ’ কার্যকর হইবে, আশা করা যায়।

অপর দিকে, অভিভাবকরাও যদি সিলেবাসটি জানেন, এবং শিক্ষকদের দায়িত্ব বিষয়ে অবহিত হন, তাঁহারাও প্রশ্ন করিতে সাহস পাইবেন। শিক্ষক-অভিভাবক সম্পর্কে স্বচ্ছতা আসিবে। অবশ্য, এই পশ্চিমবঙ্গে তাহা কী রূপ ধারণ করিতে পারে, ভাবিতে বুক কাঁপে। এই পোস্টারকে কেন্দ্র করিয়া কি শিক্ষক-নিগ্রহের ঘটনা বাড়িবে? দুর্ভাগা সেই রাজ্য, যেখানে শিক্ষাক্ষেত্রে একটি সম্পর্কও আর পারস্পরিক বিশ্বাসের ভিত্তিতে দাঁড়াইতে পারে না। ছাত্ররা শিক্ষকদের উপর ভরসা করিতে পারে না, শিক্ষকরা অভিভাবকদের উপর। কোন দৃষ্টিনন্দন পোস্টার টাঙাইয়া এই ফুটিফাটাগুলি চাপা দেওয়া সম্ভব হইবে?

Education Academics school
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy