Advertisement
০৭ মে ২০২৪

রাতারাতি ভিআইপি হয়ে নতুন সঙ্কটে উলুখাগড়া

‘ভালবাসার অত্যাচার’ বলা যেতে পারে। তার সঙ্গে ‘খ্যাতির বিড়ম্বনা’ও রয়েছে। আর এই দু’য়ে মিলে উলুখাগড়া ফের ঘোর সঙ্কটে। অতি প্রাচীন প্রবচনের সুবাদে সকলেরই জানা, রাজায়-রাজায় সংগ্রাম শুরু হলে উলুখাগড়ার জীবন সংশয় হয়।

রাজু মাহালির পরিবার।—ফাইল চিত্র।

রাজু মাহালির পরিবার।—ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৭ ০৪:২৯
Share: Save:

‘ভালবাসার অত্যাচার’ বলা যেতে পারে। তার সঙ্গে ‘খ্যাতির বিড়ম্বনা’ও রয়েছে। আর এই দু’য়ে মিলে উলুখাগড়া ফের ঘোর সঙ্কটে।

অতি প্রাচীন প্রবচনের সুবাদে সকলেরই জানা, রাজায়-রাজায় সংগ্রাম শুরু হলে উলুখাগড়ার জীবন সংশয় হয়। এ বারও সে রকমই এক সংগ্রাম শুরু হয়েছে। কিন্তু উলুখাগড়ার সঙ্কট এ বার আগেকার মতো নয়। একদম অন্য রকম এক সঙ্কটে সে। দেশের রাজা আর রাজ্যের রাজার মধ্যে সংগ্রাম এ বার উলুখাগড়ার দখল নিয়েই। উলুখাগড়ার প্রতি কার ভালবাসা কত বেশি— উদগ্র রাজনৈতিক তৎপরতায় তা প্রমাণ করার চেষ্টা। রাজনীতিকদের এই তৎপরতা নিয়ে প্রায় প্রত্যেকেরই নির্দিষ্ট মত রয়েছে। কোন দল উচিত কাজ করেছে, কোন দলের কাজ অনুচিত হয়েছে, এ সব নিয়ে নানা ব্যাখ্যা, পাল্টা বাখ্যা রয়েছে। কিন্তু প্রান্তিক, তস্য প্রান্তিক এক জীবন থেকে রাতারাতি ভিআইপি হয়ে ওঠা উলুখাগড়ার অবস্থাটা এখন ঠিক কেমন, ভবিষ্যৎ-ই বা কী রকম, সে নিয়ে খুব একটা চর্চা হচ্ছে না।

নকশালবাড়ির রাজু মাহালি-গীতা মাহালি হন বা চেতলা লকগেটের সন্ধ্যা-অতনু-আলপনা— বছরভর জীবনের সঙ্গে সংগ্রাম রয়েছে এঁদের। সংগ্রামের সেই জীবন কখন এবং কী ভাবে এ রাজ্যের রাজনৈতিক সংগ্রামের অন্যতম ভরকেন্দ্র হয়ে উঠল, এখনও সম্ভবত ঠিক মতো বুঝতে পারছেন না রাজু, গীতা, সন্ধ্যা, আলপনারা। হঠাৎ খুব বড় বড় ভিআইপি বাড়িতে হাজির হলেন, দিনযাপনের হালচাল জানতে চাইলেন, বারান্দায় বসে পাত পেড়ে খেলেন বা ঘুপচি ঘরে পেতে রাখা তক্তপোশে বসে দু-দণ্ড জিরিয়ে নিলেন। আর তার পর থেকেই আলোকবৃত্তের মধ্যমণি তাঁরা। কারও বাড়িতে তৃণমূল নেতারা ছুটে যাচ্ছেন, মহা-সমারোহে দল বদলের ছবি তুলে ধরা হচ্ছে। কারও বাড়িতে পাল্টা ছুটে যাচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব, ঝান্ডার রং যাতে বদলে না যায় আর, তা সুনিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে ওঠা প্রান্তিক মানুষগুলো এই তুমুল টানাপড়েন আর প্রচারের চড়া আলোয় আদৌ স্বস্তিতে রয়েছেন কি? ভেবে দেখা দরকার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের।

দরিদ্র বা অসহায় বা নিঃসম্বল নাগরিকের পাশে দাঁড়ানোর রাজনীতি খারাপ কিছু নয় মোটেই। রাজনীতিকদের কাছ থেকে এটাই প্রত্যাশিত বরং। কিন্তু রাজনীতিক যখন একটি বা কয়েকটি দৃষ্টান্তমূলক ছবি তৈরি করার জন্য প্রান্তিক নাগরিককে কাছে টানেন, তখন সে কর্মসূচির অভিপ্রায় প্রান্তিকের কল্যাণে নিবদ্ধ থাকে না, রাজনীতিকের কল্যাণে নিবদ্ধ হয়। রাজু-গীতাদের বা সন্ধ্যা-আলপনাদের বা কলাবতীদের কিন্তু দেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে আলাদা করে চেনার সুযোগ নেই। বছরভর তাঁরা একটা বিরাট সংখ্যার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ হয়ে বাঁচেন। কিন্তু রাহুল গাঁধী বা অমিত শাহ বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়দের কল্যাণে এঁরা মাঝেমধ্যেই এক বিশেষ ধরনের প্রতীক হয়ে ওঠেন— রাজনীতিকের প্রান্তিক-কল্যাণ ভাবনার প্রতীক।

প্রশ্ন হল— এই প্রতীকি কল্যাণমূলক কর্মসূচিতে ভারতের সুবিশাল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কোনও সামগ্রিক কল্যাণ কি আদৌ হয়? আরও প্রশ্ন হল— যে প্রান্তিক মানুষগুলো এ ভাবে রাতারাতি রাজনীতির আলোকবৃত্তে উঠে আসেন, তাঁদের জীবনে কি সত্যি কোনও ইতিবাচক পরিবর্তন আসে? নাকি বিস্তর টানাপড়েনের সাক্ষী হওয়ার পর প্রচারের আলো যেই একটু ক্লান্ত হয়, অমনি এই মানুষগুলোকেও আবার ফিরে যেতে হয় সেই পুরনো দৈনন্দিন সংগ্রামে? উত্তরটা খোঁজা জরুরি। প্রান্তিক মানুষগুলোর জন্য জরুরি তো বটেই। রাজনীতিকদের জন্যও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE