কায়রোর গ্র্যান্ড ইমামের সহিত পোপ ফ্রান্সিস।—ছবি এপি।
চলমান ২০১৯ সালটিকে ‘সহিষ্ণুতার বর্ষ’ হিসাবে চিহ্নিত করিয়া পোপ ফ্রান্সিসকে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে আমন্ত্রণ জানাইয়াছিলেন যুবরাজ শেখ মহম্মদ বিন জ়ায়েদ আল নাহিয়ান। আমন্ত্রণ স্বীকার করিয়া ইসলামি রাষ্ট্রে গিয়া উপস্থিত হইয়াছিলেন ক্যাথলিক গির্জার প্রধান। এই পদক্ষেপকে ‘ঐতিহাসিক’ বলা যাইবে কি না, তাহা আগামী ইতিহাস বলিবে, তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক-বদল বলিতে দ্বিধা নাই। কারণ, বর্তমান বিশ্বে ধর্মীয় উগ্রপন্থা, ধর্মের রাজনীতিকরণ, ধর্মবিশ্বাসের নামে সন্ত্রাসবাদ প্রায় স্বাভাবিক হইয়া আসিয়াছে। তৎসূত্রে বিশ্বের বহু প্রান্তে, বিশেষত ইউরোপে, ‘সভ্যতা সংঘর্ষ’ অনিবার্য হইয়া উঠিয়াছে। আরব দুনিয়ার অন্দরেও বিবাদের চিত্রটি স্পষ্ট। এই সকল ঘটনাবলির মাঝে, দুই ধর্মের আলাপ চিত্রিত হইলেই এক জরুরি বার্তা প্রেরণ সম্ভব হয়। পোপ এবং তাঁহার আমন্ত্রণকারী উভয়ের তরফেই বার্তাটি প্রেরিত হইল। বলা হইল, বিবিধ সংস্কৃতির ভিতর সুসম্পর্ক ও আলোচনাই সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশ নির্মাণের উপায়।
শান্তির পরিবেশটি আমিরশাহি তথা আরব দুনিয়ার নিকট অধিক গুরুত্বপূর্ণ, তাহার কারণটি ঠিক ধর্ম নহে, বরং কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক। গত কয়েক দশকে আপন দেশকে উন্নয়নের যজ্ঞে শামিল করিতে বাহিরের দুনিয়ার জন্য দ্বার উন্মুক্ত করিয়াছে আমিরশাহি। একই ভাবে সচেষ্ট হইতেছে সৌদি আরবও। অর্থনীতির গতি অব্যাহত রাখিতে গেলে বহু দেশ-জাতি-ধর্মের মানুষের সমাগম মানিয়া লইতে হয়, গ্রহণ করিতে হয় পৃথক পৃথক ধর্মীয় অনুশীলন। সমৃদ্ধির অবশ্যম্ভাবী শর্ত বিবিধ বিশ্বাসের স্বীকৃতি। সেই পথে চলিয়াই বর্তমানে আমিরশাহিতে বহু সংখ্যক হিন্দু মন্দির ও গির্জার উপস্থিতি। ক্যাথলিকদের প্রতি পোপের ভাষণও তৎসূত্রেই ঘটিল। বস্তুত, আইএস-এর ন্যায় জঙ্গিগোষ্ঠীর কার্যকলাপে প্রতি দিন দীর্ণ হইতেছে দুনিয়া। অতএব, আল আজ়হার বিশ্ববিদ্যালয়ে কায়রোর গ্র্যান্ড ইমামের সহিত পোপের আলোচনায় যোগদান, এবং ভারতের তরফে আমিরশাহির প্রশাসকদের প্রতি আস্থা জ্ঞাপন— সহিষ্ণুতার বার্তাবাহী প্রতিটি ঘটনাই সমরূপ গুরুত্ব বহন করিতেছে।
পোপের আসন হইতে দেখিলে বলিতে হয়, প্রথা ভাঙিয়াছেন ফ্রান্সিস। নয়-এগারোর পরবর্তী বিশ্বে বাক্যালাপ চলিলেও কোনও পোপ ইসলামি রাষ্ট্রে পদার্পণ করেন নাই। যদিও, ইসলামের সহিত ক্যাথলিকদের নিরন্তর সংঘাতের আবহ আজ অবধি যথাযথ রূপে সামলাইতে সক্ষম হইয়াছেন পোপেরা। ইসলামের সহিত সম্পর্ক গড়িতে সচেষ্ট হইয়াছিলেন দ্বিতীয় জন পল। দ্বিতীয় বেনেডিক্ট অবশ্য ২০০৬ সালে এক বক্তৃতায় ইসলামের সহিত হিংসার যোগ লইয়া মন্তব্য করিয়া বিতর্ক বাধাইয়াছিলেন। তবে আসনে বসিয়াই সম্পূর্ণ বিপ্রতীপে হাঁটিয়া ইসলামের সহিত আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করিয়াছিলেন ফ্রান্সিস। নিন্দুকে বলিতে পারেন, যাহাকে ‘সভ্যতার সংঘর্ষ’ বলা হইতেছে, উহা রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলেরও বটে। ইউরোপে যখন ইসলাম ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা এবং সামাজিক ক্রিয়াকলাপে অংশগ্রহণ ক্রমবর্ধমান, তখন আপন ক্ষমতা সুরক্ষিত রাখিতে চাহিবেন ক্যাথলিকগণ। অতএব, শান্তি স্থাপনে বাধ্যতা আছে। তবে, বিশ্বের পক্ষে এই স্বস্ত্যয়ন স্বস্তিদায়ক, এবং উহাই প্রাথমিক বিবেচ্য, আলোচ্য ও অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy