Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Inflation

যাহা ভাঙিয়াছে

মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা বৎসরে চার শতাংশ হারেই অপরিবর্তিত রাখা হউক, এবং কম ও বেশি, উভয় দিকেই আরও দুই শতাংশের সহ্যসীমা থাকুক।

—ফাইল চিত্র

—ফাইল চিত্র

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:৪৩
Share: Save:

যাহা ভাঙে নাই, তাহাকে মেরামত করিবার চেষ্টা না করাই ভাল।” মূল্যস্ফীতির হারের লক্ষ্যমাত্রা কত হওয়া বিধেয়, সে বিষয়ে একটি পর্যবেক্ষণের উপসংহারে কথাটি বলিল ভারতীয় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। ব্যাঙ্কের পরামর্শ লইয়া কেন্দ্রীয় সরকার এই হারটি স্থির করে। আলোচ্য পর্যবেক্ষণটিতে ব্যাঙ্কের পরামর্শ, মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা বৎসরে চার শতাংশ হারেই অপরিবর্তিত রাখা হউক, এবং কম ও বেশি, উভয় দিকেই আরও দুই শতাংশের সহ্যসীমা থাকুক। মূল্যস্ফীতির ন্যায় অতি সংবেদনশীল একটি ক্ষেত্রে স্থিতাবস্থার মহিমা অনস্বীকার্য। অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়াছে, লক্ষ্যমাত্রায় সামান্য পরিবর্তন হইলেই বাজারের প্রত্যাশা প্রকৃত মূল্যস্ফীতির হারকে তুলনায় অনেক বেশি প্রভাবিত করে। বর্তমান পরিস্থিতিতেও সেই আশঙ্কা তীব্র। ভারতে এখন মূল্যস্ফীতির প্রকৃত হার চার শতাংশের বেশ ঊর্ধ্বে। এই অবস্থায় যদি লক্ষ্যমাত্রা শিথিলতর করিবার সিদ্ধান্ত হয়, তবে বাজার তাহাকে মূল্যস্ফীতি বাড়াইয়া চলিবার ইঙ্গিত হিসাবে পাঠ করিবে, এবং তাহার ফলে হারটিও বেলাগাম হইবে। অন্য দিকে, সরকার যদি বলে যে, মূল্যস্ফীতির হার কমাইতেই হইবে, তবে সেই কঠোরতর মনিটরি পলিসি বা আর্থিক নীতি দেশের অর্থনৈতিক পুনরুত্থানের সম্ভাবনার মূলে আঘাত করিবে। কেন রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের পর্যবেক্ষণ মেরামত না করিবার পরামর্শ দিয়াছে, তাহা বোঝা যায়। ভারতীয় অর্থব্যবস্থা যে অবস্থায় দাঁড়াইয়া আছে, তাহাতে অতি সুবিবেচিত না হইলে যে কোনও পরিবর্তনই মারাত্মক হইতে পারে।

কিন্তু, ভারতীয় অর্থব্যবস্থার সম্মুখে এই মুহূর্তে বৃহত্তম সমস্যাটির নাম বেলাগাম মূল্যস্ফীতি নহে— আর্থিক মন্দা। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন রাজকোষ ঘাটতির হার সম্বন্ধে যে কথাটি বলিয়াছেন, মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রেও সেই কথাটিই কি প্রযোজ্য নহে যে, আপাতত এই দিকগুলিতে যাহাই ঘটুক, সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক সর্বশক্তিতে জিডিপি-কে বৃদ্ধির স্বাভাবিক কক্ষপথে ফিরাইয়া আনিবার চেষ্টা করিবে? রাজকোষ ঘাটতির হার নিয়ন্ত্রণে রাখা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, মূল্যস্ফীতির হারে লাগাম পরানোও তেমনই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, আপাতত সেই কাজগুলি অপেক্ষা করিতে পারে। এখন এক দিকে রাষ্ট্রীয় ব্যয়ের পরিমাণ বাড়াইতে হইবে, অন্য দিকে সুদের হার কম রাখিয়া ঋণ সুলভ করিতে হইবে। অর্থাৎ, এক দিকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি, এবং অন্য দিকে বাজারে জোগান বৃদ্ধি— এই জোড়া পন্থাই আর্থিক বৃদ্ধির হারকে তাহার বর্তমান লজ্জাজনক অবস্থা হইতে উদ্ধার করিতে পারে। অস্বীকার করিবার উপায় নাই, উভয় পন্থাই প্রাথমিক ভাবে বাজারে মূল্যস্ফীতির পরিমাণ বাড়াইবে। কিন্তু, সেই প্রাথমিক ধাক্কাটি সামলাইয়া লইতে পারিলে উচ্চতর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের স্তরে প্রবেশ করা সম্ভব, যেখানে চাহিদা ও জোগানের সামঞ্জস্য ফের মূল্যস্ফীতির হারকে নিয়ন্ত্রণ করিবে। সেই পর্যায়ে ব্যাঙ্ক ও সরকার প্রয়োজন অনুসারে আর্থিক ও রাজস্ব নীতি নির্ধারণ করিতে পারে, যাহাতে মূল্যস্ফীতির হারটি ব্যাঙ্কের সহনসীমার মধ্যে থাকে। ব্যাঙ্কের পর্যবেক্ষণ যে কথাটি বলিয়াছে, বিপরীত কথাটিও সমান সত্য— যাহা ভাঙিয়াছে, তাহাকে অবিলম্বে মেরামত করা প্রয়োজন। নচেৎ, সেই ভাঙন ক্রমে বাড়িতে থাকিবে। এই মুহূর্তে বৃদ্ধির হার মেরামতের জন্য যাহা প্রয়োজন, তাহা করাই বিধেয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Inflation RBI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE