Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

স্বাস্থ্যোদ্ধার

শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়াইবার জন্য দুইমুখী ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন— এক দিকে বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি করিতে হইবে, অন্য দিকে শিল্পে ঋণ সহজলভ্য করিতে হইবে।

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৯ ০০:৫০
Share: Save:

নির্বাচনের অগ্নিও যাহাকে দহন করিতে পারে না, তাহার নাম অর্থনীতির সঙ্কট। ভারতীয় অর্থনীতিকে যে অবস্থায় রাখিয়া নরেন্দ্র মোদী ভোটযুদ্ধে গিয়াছিলেন, ভারতজয়ের পর মসনদে ফিরিয়া অর্থনীতিকে তিনি সেই ভগ্নস্বাস্থ্যেই ফিরিয়া পাইবেন। অতএব, দ্বিতীয় দফায় তাঁহার প্রথম কর্তব্য হইবে অর্থনীতির স্বাস্থ্যোদ্ধার। এক্ষণে একটি ভয়ানক আশঙ্কা থাকে। বিপুল জনাদেশে পুনর্নির্বাচিত হইবার পর নেতার প্রত্যয় হইতেই পারে, কোথাও কোনও ভুল ছিল না। গত পাঁচ বৎসরে তিনি যত সিদ্ধান্ত লইয়াছেন, যে ভঙ্গিতে দেশ চালাইয়াছেন, জনতার কষ্টিপাথরে সবই উত্তীর্ণ হইয়াছে। প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিতে হইবে, নির্বাচনের রায় যাহাই বলুক না কেন, তাহাতে অর্থনীতির স্বাস্থ্য সম্বন্ধে সত্যগুলি বদলায় না। কর্মসংস্থানের হার তলানিতে, কৃষিক্ষেত্র বিপর্যস্ত, শিল্পে চাহিদা নাই। অধিকাংশ ব্যাঙ্কের অবস্থা উদ্বেগজনক। অর্থনীতির কেন এমন অবস্থা হইল, গত কয়েক বৎসর সেই তর্ক চলিয়াছে। পুরাতন বিতর্কগুলি আপাতত বকেয়া রাখিয়া সংশোধনে মনোনিবেশ করাই বিধেয়। নির্বাচনী ফলাফলের আলোকে এই অন্ধকার ঢাকিবে না। বস্তুত, ভারতের ভোট যে শক্তিশালী রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করিয়াছে, সেই ইচ্ছা পূরণ করা উচিত কি না, সে তর্ক পাশে সরাইয়া রাখিলে বলিতে হয়, মজবুততর শক্তি হইয়া উঠিবার জন্যও অর্থনীতির স্বাস্থ্যোদ্ধার প্রয়োজন।

কী ভাবে সেই কাজ শুরু করা সম্ভব, অর্থনীতির পাঠ্যপুস্তক তাহার হদিস দিতে পারে। শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়াইবার জন্য দুইমুখী ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন— এক দিকে বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি করিতে হইবে, অন্য দিকে শিল্পে ঋণ সহজলভ্য করিতে হইবে। বাজারের চাহিদা কী ভাবে বাড়ে, প্রায় আট দশক পূর্বে জন মেনার্ড কেইনস সেই হদিস দিয়াছিলেন: রাষ্ট্রকে প্রয়োজনে মাটি খুঁড়িবার জন্য ব্যয় করিতে হইবে, এবং সেই গর্ত ফের ভরাট করিবার জন্যও ব্যয় করিতে হইবে। অত দূর যাওয়ার দরকার নাই, তবে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি একটি সাময়িক অস্ত্র হইতে পারে। সেই পথে বিপদও আছে— ভারতের রাজকোষের পরিস্থিতি সুবিধাজনক নহে। আন্তর্জাতিক বাজারও অস্থির ও অনিশ্চিত। ঋণের উপর সুদের হার কমাইবার কথাও রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক ভাবিয়া দেখিতে পারে। এখনও মূল্যস্ফীতির হার অত্যন্ত কম, এই একটি সুবিধা রহিয়াছে। তবে, দীর্ঘমেয়াদি সমাধানসূত্রের কথা ভাবিতে হইলে সংস্কার ভিন্ন গতি নাই। গত পাঁচ বৎসরে ভারত বিশেষ আর্থিক সংস্কার প্রত্যক্ষ করে নাই। এই বার নূতন উৎসাহে সংস্কারের পথে হাঁটুন।

গভীরতম সমস্যাটি কৃষিক্ষেত্রে। গত পাঁচ বৎসরে যত জন কৃষক আত্মহত্যা করিয়াছেন, যত কৃষি-বিক্ষোভ হইয়াছে, তাহাতে সেই সমস্যার মাপটি বোঝা সম্ভব। স্পষ্টতই, এত দিন অবধি যাহা হইয়াছে, তাহা যথেষ্ট নহে। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বৃদ্ধি অথবা ঋণ মকুবের রাজনীতিতে কৃষির সমস্যা মিটিবে না। কৃষিক্ষেত্রেও সংস্কার অতি জরুরি। কৃষি বিপণনকে একটি সংগঠিত রূপ দেওয়া প্রয়োজন। ফসল বিমা বাধ্যতামূলক হওয়া বিধেয়। কৃষিক্ষেত্রে সংগঠিত ঋণ সহজলভ্য হওয়া প্রয়োজন। এবং, চুক্তিচাষ বিষয়ক ছুতমার্গ এই বার ঝাড়িয়া ফেলা ভাল। এই একটি প্রশ্নে ভারতে প্রায় সব রাজনৈতিক দলই সহমত হইয়া ভুল পথে হাঁটিয়াছে। তাহাতে কৃষকের উপকার হয় নাই। এই বার বাস্তবের সম্মুখীন হওয়া দরকার। দ্বিতীয় দফায় নরেন্দ্র মোদীর মূল চ্যালেঞ্জই হইল, রাজনীতির হিসাবগুলি ভুলিয়া অর্থনীতিকে তাহার প্রাপ্য গুরুত্ব দেওয়া। ভোটের খাতায় অর্থনীতি আপাত ভাবে যতই গুরুত্বহীন হউক না কেন, তাহাকে অবহেলা করা মারাত্মক। সাধারণ মানুষ তাহার জটিল সমীকরণ না-ও বুঝিতে পারে, মানুষের সর্বোচ্চ প্রতিনিধি হিসাবে সেই অঙ্কে মনোনিবেশ করা প্রধানমন্ত্রীর কর্তব্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

India Economy Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE