Advertisement
E-Paper

আস্থাশীল হওয়ার কোনও উপায়ই থাকছে না!

দুষ্ট চক্রটাকে যে চিহ্নিত করা এবং ভেঙে দেওয়া গিয়েছে, সে কথা প্রশাসন আগেই জানিয়েছিল। কিন্তু এখন বোঝা যাচ্ছে, প্রশাসনের সে দাবি সারবত্তাহীন ছিল।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৮ ০০:২৫
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

শুধুই ঢক্কানিনাদ! এত হইচই, প্রশাসনিক কাঠিন্যের এত দেখনদারি, এত পদক্ষেপ, এত আশ্বাস— সবই অন্তঃসারশূন্য! বঙ্গবাসীর রসনায় আবার ভাগাড় আতঙ্ক! সুস্থ-সবল যাপনের জন্য যে আস্থাটা প্রশাসনের উপরে রাখতে পারা জরুরি, সে আস্থা ন্যূনতম মাত্রাতেও কি নাগরিকের মধ্যে জাগাতে পারছে প্রশাসন?

অসহনীয় সত্যটা সামনে এসেছিল প্রথম বার দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজে। ক্রমে জানা গিয়েছিল এক সুবিস্তৃত চক্রের কথা, রাজ্যের সীমানা ছাড়িয়ে বহু দূর ছড়িয়ে ছিল যার শিকড়। নামজাদা হোটেল-রেস্তঁরায় দীর্ঘ দিন ধরে ওই অস্বাস্থ্যকর মাংস সরবরাহ করা হচ্ছিল বলে জেনেছিলাম আমরা। আমরা শিউরে উঠেছিলাম, রসনাতৃপ্তির প্রিয় ঠিকানাগুলোকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেছিলাম, কলকাতা ও শহরতলিতে মাংসের পদ কিনে খাওয়া প্রায় বন্ধ হতে বসেছিল।

ভাগাড়ের মাংসের আতঙ্ক কতটা তীব্র, কতটা সন্দিহান হয়ে পড়েছে বাঙালি, পরিস্থিতির প্রভাব কতটা সুদূরপ্রসারী হতে পারে, বুঝতে সময় লাগেনি প্রশাসনের। মাংসের ব্যবসার নামে এই ভয়ঙ্কর প্রতারণা করে চলেছে যে চক্র, তার অন্ধিসন্ধি খুঁজে বার করে সমূল উৎপাটন ঘটানো হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছিল। পর পর গ্রেফতারি শুরু হয়েছিল, তল্লাশি-হানাদারি শুরু হয়েছিল। বিভিন্ন হোটেলে বা রেস্তঁরায় আচমকা হাজির হয়ে খাবারের মান খতিয়ে দেখা শুরু করেছিলেন বিভিন্ন পুরসভার কর্তারা।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

বেশ কিছু দিন এই তৎপরতা দেখার পরে বাঙালি ফের আশ্বস্ত হয়। যত রকমের কাণ্ডকারখানা হয়ে গেল, তাতে এখনই ফের ভাগাড়-মাংস সরবরাহের চক্র সক্রিয় হওয়ার সাহস দেখাবে না, রসনাবিলাসী বাঙালি এমনই ভেবে নিয়েছিল। কিন্তু ফের ধাক্কাটা লাগল। উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গায় ভাগাড় থেকে তুলে আনা পশুদেহ কেটেছেঁটে মাংস সরবরাহ করার আরও একটি ঠিকানা সামনে এল। স্বাভাবিক ভাবেই ফের সচকিত হয়ে পড়তে হল নাগরিককে।

দেগঙ্গার কসাইখানাটার কথা সামনে আসতেই পুলিশ-প্রশাসন ফের সক্রিয় হয়েছে। তল্লাশি, জিজ্ঞাসাবাদ হয়েছে। এই কসাইখানার চাঁইদেরও ধরে ফেলা হবে বলে পুলিশ আশ্বস্ত করতে শুরু করেছে। কিন্তু আর কী ভাবে আশ্বস্ত হব! কী ভাবে বিশ্বাস করব যে, নানা প্রান্তে ঘাপটি মেরে বসে নেই এমনই আরও অনেক ভাগাড়-কসাই? ভাগা়ড়ের মাংস সরবরাহ করার চক্র বহাল তবিয়তে আরও নানান এলাকায় চলছে না, এ কথা কিসের ভরসায় মেনে নেব?

আরও পড়ুন: মাগুর মাছের খাবার তৈরির আড়ালে ভাগাড়ের মাংস পাচার!

দুষ্ট চক্রটাকে যে চিহ্নিত করা এবং ভেঙে দেওয়া গিয়েছে, সে কথা প্রশাসন আগেই জানিয়েছিল। কিন্তু এখন বোঝা যাচ্ছে, প্রশাসনের সে দাবি সারবত্তাহীন ছিল। ভাগাড়-মাংসের কারবার এখনও চলছে, প্রশাসনের চোখ এড়িয়েই চলছে। দুষ্ট চক্রটাকে আদৌ শিকড়সমেত উপড়ে ফেলা যে যায়নি, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। দেগঙ্গার সাধারণ নাগরিকরা সক্রিয় না হলে এই কসাইখানাও চোখের আড়ালে চলতে থাকত দিনের পর দিন। এই কসাইখানা থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া মাংস মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়— এমন একটা তত্ত্ব উঠে আসছে ঠিকই। কিন্তু সে তত্ত্বে বিশ্বাস রাখা আজ খুব কঠিন। কাকে বিশ্বাস করা যাবে, কার কথায় আশ্বস্ত হওয়া যাবে, সত্যিই বোঝা যাচ্ছে না। বাঙালি ফের বিভ্রান্ত। এ পরিস্থিতির দায় প্রশাসন কিছুতেই এড়াতে পারে না। ভাগাড় মাংসের কারবার রুখতে যা কিছু পদক্ষেপ এত দিন ধরে করা হয়েছে, সে সবই আসলে লোকদেখানো ছিল— এমন ধারণা ফের তৈরি হতে শুরু করেছে। হোটেলে-রেস্তঁরায় অস্বাস্থ্যকর, পচা মাংস সরবরাহের শৃঙ্খলকে স্থায়ী ভাবে ছিন্ন করার কোনও পথ যে খুঁজে বার করা যায়নি, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। প্রশাসন সম্পর্কে ফের কতটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হল, তা বলাই বাহুল্য। নাগরিকের আস্থা পুনরুদ্ধার করা কিন্তু খুব সহজ হবে না এ যাত্রায়।

Rotten meat Racket Anjan Bandyopadhyay Newsletter অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy