Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
প্রবন্ধ ২

কেউকেটা ও ঘেউকেটা

উরিশ্লা! কুত্তাকে কুত্তা বলা যাবে না! কী যুগ পড়ল মাইরি! গরিব লোকগুলো কুত্তা না তো কী? অ্যালসেশিয়ান? এই পৃথিবী কাদের? বড়লোকদের। হ্যাঁ, এট্টু-আধটু মধ্যবিত্তদেরও। মধ্যবিত্তদের কাজ হল বড়লোকদের খিদমতগারি করা, আর কবে ও-রকম বাথটবে শুয়ে আমি ভি ফেনা থাবড়াব, সে ফ্যান্টাসি পোষা। অর্থাৎ পৃথিবীর প্রভু বড়লোকরা। আর মধ্যবিত্তরা তাদের চাকর। প্রভু আর চাকর, এই বাদ দিলে বিশ্বে কী পড়ে রইল? অব কোর্স কুত্তা।

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

উরিশ্লা! কুত্তাকে কুত্তা বলা যাবে না! কী যুগ পড়ল মাইরি! গরিব লোকগুলো কুত্তা না তো কী? অ্যালসেশিয়ান? এই পৃথিবী কাদের? বড়লোকদের। হ্যাঁ, এট্টু-আধটু মধ্যবিত্তদেরও। মধ্যবিত্তদের কাজ হল বড়লোকদের খিদমতগারি করা, আর কবে ও-রকম বাথটবে শুয়ে আমি ভি ফেনা থাবড়াব, সে ফ্যান্টাসি পোষা। অর্থাৎ পৃথিবীর প্রভু বড়লোকরা। আর মধ্যবিত্তরা তাদের চাকর। প্রভু আর চাকর, এই বাদ দিলে বিশ্বে কী পড়ে রইল? অব কোর্স কুত্তা। যেগুলোর কাজ ভেউভেউ করে আমাদের স্ট্রেস-ফ্রি মোমেন্টগুলো মাটি করা, আর মাঝে মাঝে গাড়ির তলায় চাপা পড়ে টায়ার নোংরা করা। আমি তো বলব, ভিখিরিগুলো চাপা পড়লে বেশি ক্ষতি গাড়িটার। একটা ইমপোর্টেড গাড়ির টায়ার থেকে বিচ্ছিরি রক্তের দাগ ধুতে কত নেয় জানেন? এই থিমে কথাবাত্তা সোজাসুজি বলেছি, তাই নিয়ে কত্ত আঁতেলের কী গোসা! আরে, কোদালকে কোদাল বলতে ধক চাই রে। এ দেশে সে খ্যামতা যে হাতে-গোনা জিনিয়াসের আছে, তার সেরা জুয়েল এই আমি!

হ্যাঁ, আমায় বহুত দিন হল কেউ গান গাইতে নেয় না। তা বলে আমি ফুরিয়ে গেছি না কি? এখনও কী গলা! বাথরুমে যখন গাই, নিজেরই ভুল হয়, কিশোরজি ঢুকে পড়লেন না তো? তাড়াতাড়ি গামছা জড়িয়ে নিই। এই সোনার গলাকে যারা ইগনোর করে তারা মানুষ না। মানে, মানুষ তো অবশ্যই, অ্যাকচুয়ালি সুপ্পার-মানুষ, কারণ তারা বড়লোক, তারা বলিউড কন্ট্রোল করে, ভগবানের চেয়ে বহুত ঝলমল তাদের মহিমা ও মস্তিবাজি, কিন্তু, ইয়ে, তাদের একটা কেয়ারলেস মিসটেক হয়ে গেছে আর কী। তা, আমার তো বসে থাকলে চলবে না। প্রত্যেক বছর দুগ্গাপুজো লাগিয়ে সবক’টা সেলেবকে পেট পুরে খাওয়াচ্ছি, ঢাকের তালে কোমর দোলাবার, অন্যের দুলন্ত কোমরের ঠুমকা চোখ ভরে চাটার দেড়শো চান্স দিচ্ছি, তাও ড্যাকরাগুলোর মন পাওয়া যায় না। এ বার দেখ না, সলমনের সুনজরে পড়ি, ওর ক্যাম্পে ঢুকে যাই, তাপ্পর তোদের মুখে মুক্কা মেরে ড্যাং ড্যাং করে মাইক মুখে নাচব, ফিলিমফেয়ার রাখার জন্যে গুদোম ভাড়া করতে হবে!

তবে গান অর নো গান, সত্যের স্বার্থে এমন নির্ভীক কথাটা বলে হৃদয়ের ব্যারিটোনে নিজেই তালি বাজাচ্ছি। আরে, এটা সারা দেশের তাবৎ ঠিকঠাক লোকের প্রাণের কথা। কিন্তু কেউ বুক বাজিয়ে বলে না, সাহস নেই, কারণ টক-শো’র ওই পমেটম-মাখা পুতপুতেগুলো কাউন্টার করবে। বয়েই গেল! ওরা কারা? শিক্ষিত? শিক্ষা নিয়ে কী হবে? খোঁজ করে দেখ, নিকিরিগুলো অটো চড়ে! যদি সত্যিই ট্যালেন্ট থাকে, কোটি কোটি টাকা হয়নি কেন? পৃথিবীর গোল্ডেন রুল: হয় টাকা করবি, নয় মাথা লুটিয়ে চুপ থাকবি। ঘেউ করবি না, কুত্তা হতভাগা!

বুকে হাত দিয়ে বলুন তো, গরিবদের দেখলে আন্তরিক ওয়াক ওঠে না? পাঁজরা বের করা চেহারা, গায়ে গয়নার মতো দগদগে ঘা, চুলে থিকথিক করছে উকুন আর বদ-মতলব! এক-একটা মূর্তিমান অ্যান্টি-জীবন। আর রক্তবীজের ঝাড়! একটা উড়াল পুল করো, ঠিইক তার নীচে এসে শুয়ে পড়বে। একটা বাগানবাড়ি বানিয়ে ফেলে রাখো, হয়তো বাইজিটা ফাইনাল হয়নি, ঠিইক শয়তানরা লন-এ তেরপল আর চট খাটিয়ে আস্তানা গাড়বে। একটা গল্‌ফ কোর্স কেনো, শুয়োরগুলো তাতে পায়চারি মারতে মারতে নাক খুঁটবে। আ বে, তোদের বাবার জমি? রেললাইন থেকে গানের লাইন, তোরা পিলপিলিয়ে জুড়ে বসিস কোন সাহসে? আজ আমাদের অ্যাত্ত প্রোগ্রেস, রিমোট টিপলে কমোড থেকে হাত বেরিয়ে ছুঁচু করে দিচ্ছে, গোটা ইন্ডিয়া ঝকঝক করছে যেন ডিও-মারা বগল, তার মধ্যে বিচ্ছু-ব্রণ’র মতো তোরা ঢুকে পড়লি কোত্থেকে? আমার প্রেসক্রিপশন, শালাদের ঝাড়েবংশে বোম মেরে উড়িয়ে দাও, এক সেকেন্ডে স্বচ্ছ ভারত বেরিয়ে আসবে। নতুন ভারত বেরোক, বেরোক বড়লোকদের বৈঠকখানা থেকে, ব্যাংকের লকার থেকে, হাই-ফাই জিম থেকে, ট্যাটু-পার্লার থেকে, জাকুজি থেকে, রিসর্ট থেকে, নাইটক্লাব-ডিজে’র ধাকচাক ধাকচাক মিক্সিং থেকে, আশি হাজার টাকার মোবাইল থেকে, হিরেকুচি-বসানো জাঙিয়া থেকে।

কারণ সেটাই সিভিলাইজেশন। প্রোলেতারিয়েত-দরদের ফ্যাশন উঠে গেছে, ও-সব ন্যাকামি এখন কৌতুক নকশা। আমাদের স্মার্ট ঝক্কাস ইয়ুথ, আমাদের রিয়েল ভবিষ্যৎ, অডি চড়ে সাঁআঁআঁ বেরিয়ে যাচ্ছে, কোনও লাল সিগনালের বাপ তাকে ঠেকাতে পারছে না। তারা আজ আসলি বিপ্লব করুক! চাপা দিক এই ঘেয়ো নেড়িগুলোকে! যে হাঘরেগুলো কোনও কাজ করে না, দেশটাকে হেগেমুতে নোংরা করে। হ্যাঁ, ওরা খেতে পায় না, সে তো নিজের দোষে। ক্যালি থাকে তো পড়েশুনে সিইও হোক না। ফাঁকি মারবে, গতর খাটাবে না, ট্যাক্স ফাঁকি দিতে বাড়ি না বানিয়ে ফুটপাতে শুয়ে মাগনা হাওয়া খেতে খেতে ঘুম মারবে, আবার চাপা দিলে কামড়াতে আসবে! অকৃতজ্ঞের দল! বড়লোকরা আছে বলে তো ভিক্ষে চেয়ে দিন চালাচ্ছিস, চুরিচামারি করে পেট ভরাচ্ছিস। আবার সামান্য একটা-আধটা লোক মারা গেলে তাই নিয়ে আদালতে যাচ্ছিস! আস্পদ্দা! হ্যাঁ, আমার কথা হয়তো তেতো লাগছে, যে কোনও নয়া দর্শন প্রথমটা তা-ই লাগে, কিন্তু সব আড়ষ্টতা ভেঙে আসুন আমরা ভাল গাড়ির ভারী চাকায় সবক’টাকে পিষে দিই। বস্তি-ঝুপড়িগুলোকে আরামসে পোড়াই। হত্যা এমনিতে ভাল নয়, কিন্তু রান্নাঘরে আরশোলা ঢুকলে আমরা তাকে মারি না? গরিবগুলো তো জঞ্জালের ভ্যাট। শপিং মল-এ যাওয়ার রাস্তায় ওরা ভড়ভড় করলে ফুরফুরে মনটা খিঁচড়ে যায় না? তাই জোতদার নয়, সর্বহারাদের কোতল করুন, দেশ হয়ে উঠবে বলিউডের সং-সিকোয়েন্সের মতো বিন্দাস। সেই দেশে মোড়ে মোড়ে সল্লুভাইয়ের স্ট্যাচু, সব মানুষের নাস্তায় পাস্তা, ট্র্যাফিক সিগনালে আমার গান, আর পোষা ডগির নাম ‘পুয়োর পিপু’!

লেখাটির সঙ্গে বাস্তব চরিত্র বা ঘটনার মিল থাকলে তা নিতান্ত অনিচ্ছাকৃত, কাকতালীয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE