‘ভাল দিন’-এর দ্বিতীয় ইনিংস আরম্ভ হল। আরম্ভ হল ভক্ত-বাহিনীর দ্বিতীয় ইনিংসও! মধ্যপ্রদেশের সিবনী জেলায় গোমাংস বহন করার অভিযোগে তিন জন সংখ্যালঘু মানুষের উপর আক্রমণ। উপরন্তু ‘জয় শ্রীরাম’-এর গা-জোয়ারির মাধ্যমে তাদের ‘জাতীয়তাবাদ’ সম্বন্ধে লিটমাস টেস্টও গ্রহণ!
হরিয়ানার গুরুগ্রামে একক সংখ্যালঘু পথচারী যুবকের উপর নির্যাতন! সে কেন ফেজ টুপি পরবে! তাকে বাধ্যতামূলক ভাবে ‘ভারতমাতার জয়’ বলতেই হবে!
বিহারের বেগুসরাই জেলায় মহম্মদ কাশিমকে শুধু পাকিস্তানে যাওয়ার নির্দেশই দেওয়া হয়নি, সঙ্গে গুলির ‘উপহার’ও দেওয়া হয়েছে!
ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুরে জিতরায় হাঁসদাকে গ্রেফতার করা হল দু’বছর আগে পোস্ট করা গোমাংস-কেন্দ্রিক এক লেখার জন্য!
দিল্লিতে প্রাতঃভ্রমণকারী পুণের জনৈক ডাক্তারবাবু অরুণ গাদরে-কে ঘিরে ধরে ‘জয় শ্রীরাম’ বলার আদেশ দেওয়া হয় এবং তাঁর দ্বিধাগ্রস্ত আদেশ পালন দেখে প্রশ্ন করা হয় তিনি আদৌ হিন্দু কি না! তার পর উচ্চৈঃস্বরে সেই স্লোগান দিয়ে তিনি কোনও ক্রমে পরিত্রাণ পান! যদি উনি এই বাধ্যতামূলক স্লোগান দিতে অস্বীকার করতেন, উপরন্তু মুসলিমও হতেন, তাঁর কী পরিণতি হত, সহজে অনুমেয়। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ-সহ বিজেপি নেতাদের কাছে বিনীত প্রশ্ন, সিবনী, গুরুগ্রাম বেগুসরাই জামশেদপুর দিল্লি কি তৃণমূল-শাসিত পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত! গত দু’মাস যাবৎ পশ্চিমবঙ্গের বুকে এসে কত গালমন্দই তো করা হল, ‘‘এটা দুষ্কৃতীদের রাজ্য যেখানে গণতন্ত্রের মৃত্যু হয়েছে’’!
কাজল চট্টোপাধ্যায়
সোদপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
দল ও তিনি
দলে একাধিকের ক্ষমতা ছেঁটে ফেললেন মুখ্যমন্ত্রী। বিভিন্ন এলাকায় নেতৃত্বের স্থানবদল হল, এমনকি সরকারি কর্মী সংগঠন থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সরিয়ে দিতেও এক মুহূর্ত লাগল না। অথচ, মমতার মুখ্যমন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগের প্রশ্নটি যখন এল, আমরা শুনলাম, ‘দলীয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত’ তাঁকে অনুমতি দেয়নি। তৃণমূলে মমতার নিজের সিদ্ধান্তের উপরে কোনও দলীয় সিদ্ধান্তের স্থান থাকতে পারে, কোনও দিন শুনিনি!
সায়ক সিনহা
কলকাতা-১১০
লাভ কী হল?
আমরা, পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষ, স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, বামফ্রন্টের মৃত্যুর কারণ যারা, তারাই কিন্তু তৃণমূলের পতনের মূল কারণ। আবার তাদের হাত ধরেই বিজেপির উত্থান হতে চলেছে। সমীকরণ পাল্টাল না। সেই সব তৃণমূলের নেতা যথারীতি বিজেপিতে যোগ দিয়েছে, দিচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত তৃণমূলের আরও নেতা ভাঙিয়ে নিয়ে আসবে বলে দিল্লির সর্বভারতীয় নেতাদের আশ্বস্ত করছে। লাভটা কী হল?
পরীক্ষিৎ ব্রহ্মচারী
কলকাতা-৬৪
কুকথা
মতান্তর যার যতই থাক, রাজনৈতিক দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের সকলের মুখ্যমন্ত্রী। শান্তি, শৃঙ্খলা শুধু নয়, রাজ্যের উন্নয়নের স্বার্থে এই সাংবিধানিক আস্থা অত্যন্ত জরুরি। এ দিকে তাঁর আচরণ আস্থা নষ্ট করছে।
শুভ্রাংশু কুমার রায়
ফটকগোড়া, হুগলি
অভিযোগ ভুল
নরেন্দ্র মোদীর শপথগ্ৰহণ অনুষ্ঠান যে অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রী বয়কট করলেন, তার থেকেও গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে তিনি তো ক্ষমতায় এসেছিলেন। জঙ্গলমহলে রক্ত ঝরার দিনে ছত্রধরের মাথায় কাদের ছাতা ছিল? তবুও জনগণের রায় মেনে বুদ্ধবাবুরা তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন। এটাই সংসদীয় রীতি। নইলে তো নির্বাচনের ফলকেই অস্বীকার করতে হয়।
ধীরেন্দ্র মোহন সাহা
কলকাতা-১০৭
শুধু বাম নয়
একটা দল, যার সেই অর্থে দৃঢ় সংগঠন নেই, অনেক বুথে এজেন্ট পর্যন্ত বসাতে পারেনি, সে পুরো রাঢ়বাংলা দখল করে নিল! বর্তমান রাজ্যের শাসক দলের আমলে গ্রামের উন্নয়ন হয়নি, এ কথা বিরোধীরাও জোর গলায় বলতে পারবে না। তা হলে এই দশা কেন? প্রথমত, নিম্নস্তরে দুর্নীতির ফলে বহু নেতার আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয়ত, পঞ্চায়েত ভোট দিতে না পারার ক্ষোভ যে গ্রামে কী ভয়ানক জায়গায় পৌঁছেছিল, তা শাসক দল বুঝতে পারেনি। তাই লোকসভা নির্বাচন চলাকালীনও অনেক বুথে গিয়ে হম্বিতম্বি করার অভ্যাস তাদের বন্ধ হয়নি। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে জেলাশাসকের অফিসের সামনে, বিডিও অফিসের সামনে লাঠিসোঁটা হাতে গুন্ডা বসিয়ে রাখা, বিরোধীরা মনোনয়ন দাখিল করতে গেলে এমনকি সবার সামনে বাস থেকে নামিয়ে মার, এর পরেও যেখানে মনোনয়ন দাখিল করা গেল সেখানে ভোটের নামে প্রহসন, ছাপ্পা — এই সব চোখের সামনে দেখে জনতা চুপচাপ গদি উল্টে দিয়েছেন। তাই শুধু বামের ভোট বিজেপিতে পড়েছে তা-ই নয়, তৃণমূলের ভোটও পাইকারি হারে বিজেপিতে পড়েছে।
সৈকত রায়
বাঁকুড়া শহর
কান দেবেন না
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়ের সামনে কয়েক জন ‘জয় শ্রীরাম’ বলায় ক্ষিপ্ত হয়েছেন তিনি। এর আগেও এক বার এই ঘটনা ঘটেছিল। তাঁর এই একের পর এক ভ্রান্ত, ছেলেমানুষি-ভরা পদক্ষেপেই বিজেপির এ রাজ্যে বাড়বাড়ন্ত হয়েছে। অন্ধ ভাবে বিজেপির সমালোচনা এবং গালমন্দ করতে করতে উনিই বিজেপিকে এ রাজ্যে প্রাসঙ্গিক করে তুললেন। ‘জয় শ্রীরাম’ বলায় খেপে উঠে গাড়ি থেকে নেমে আসা বা চেঁচামেচি করার বদলে, কান না দিয়ে, নিতান্ত অবহেলা ভরে চুপচাপ চলে যাওয়াটাই ছিল উপযুক্ত জবাব। বিজেপি কর্তৃক অনুষ্ঠিত রামনবমী বা হনুমান জয়ন্তীর পাল্টা রামনবমী বা হনুমান জয়ন্তী করারও দরকার ছিল না।
প্রিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা-১২৬
এসেছে ফিরিয়া
কী বলা যায় একে, আবার সে এসেছে ফিরিয়া ? লোকসভায় ১৮টি আসনে পদ্ম ফোটা মাত্র শাসক দলের সব কিছু বেআব্রু হয়ে পড়ছে, যেমনটি ঘটেছিল এক দশক আগে ২০০৯ সালে বাম শাসনের অন্তিম পর্বের সূচনায়। বিধায়ক, কাউন্সিলরদের পদ্ম শিবিরে যোগদানের হিড়িক পড়ে গিয়েছে। ২০১১-১৬ পর্বে ২১১টি আসন জেতা সত্ত্বেও শাসক দল, বিরোধী দল থেকে ১২ জন বিধায়ক ভাঙিয়ে নিয়েছিল। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছিল কংগ্রেসের (৯ জন)। ৩৭টি পুরসভা বিরোধীদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল তৃণমূল। এই কাজে প্রধান সেনাপতি ছিলেন মুকুল রায়, যিনি সে সময় পাইকারি হারে বিরোধী দলের নেতাদের হাতে জোড়াফুলের পতাকা তুলে দিতেন। তখন যদি বিষয়টা অনৈতিক না হয়ে থাকে, তবে আজ অগণতান্ত্রিক হয় কী করে?
অন্য দল থেকে নিজের দলে আসা হল ‘হৃদয় পরিবর্তন’, আর নিজ দল থেকে অন্য দলে চলে যাওয়া হল ‘বিশ্বাসঘাতকতা’!
রাজশেখর দাস
কলকাতা-১২২
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy