সেরিনা উইলিয়ামস। ছবি:টুইটারের সৌজন্যে।
সেরিনা উইলিয়ামস ফরাসি ওপেন খেলিতে শুরু করিলেন এক আশ্চর্য পোশাক পরিয়া। সাতিশয় কৃষ্ণবর্ণ ‘বডিস্যুট’, অর্থাৎ সমগ্র শরীরে আঁট হইয়া বসিয়া থাকা পোশাক, তাহার একটি ঘোর লাল কটিবন্ধ। সকলেই চমকাইয়া গিয়াছে, কেহ হাততালি দিতে ব্যস্ত, কেহ ভ্রু কুঁচকাইতে। ইহার পূর্বে এমন পোশাক পরিবার জন্য উইম্বলডনে মার্কিন মহিলা খেলোয়াড় অ্যান হোয়াইটকে প্রবল বিদ্রুপের সম্মুখীন হইতে হইয়াছিল। ১৯৮৫ সালে অ্যান একটি শুভ্র বডিস্যুট পরিয়া একটি ম্যাচ খেলিয়াছিলেন। ম্যাচটি হারিয়াছিলেন পাম শ্রিভারের বিরুদ্ধে, কিন্তু তাঁহার পোশাক লইয়া হইহই পড়িয়া গিয়াছিল। মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা মুখ বাঁকাইয়া বলিয়াছিলেন, যাঁহারা র্যাকেট লইয়া কিছু করিতে পারেন না, তাঁহারা এতাদৃশ উপায়ে মনোযোগ আকর্ষণ করিতে চাহেন। পাম শ্রিভার বলিয়াছিলেন, ইহা টেনিস কোর্টে তাঁহার দেখা উদ্ভটতম ও নির্বোধতম পোশাক। অ্যান বলিয়াছিলেন, ইহা তাঁহাকে খেলিতেও সাহায্য করিতেছে, উষ্ণ থাকিতেও সাহায্য করিতেছে। বলিয়াছিলেন, কার্ল লিউইস বা প্রতিযোগী সাইকেল-চালকদের পোশাক এই রূপ হয়, তাহা হইতেই তিনি প্রেরণা পাইয়াছেন। উইম্বলডন কর্তৃপক্ষ আদেশ জারি করিয়াছিলেন, পরবর্তী ম্যাচে অ্যানকে ওই পোশাক পরিতে দেওয়া হইবে না, তবে অ্যান ওই খেলাতেই হারিয়া যাওয়ায় সেই আদেশ বলবৎ করিতে হয় নাই।
আজ সেরিনা যখন ‘ক্যাটস্যুট’ (পোশাকটিকে এই নামে ডাকা হইতেছে) পরিয়া খেলিতেছেন, কেহ তাহার মধ্যে খুঁজিয়া পাইতেছেন নারীর ক্ষমতায়নের বার্তা, চলচ্চিত্রের অতিমানবী নায়িকাদের প্রতিফলন, সাম্প্রতিক সুপারহিট চলচ্চিত্র ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’-এর (যে ‘সুপারহিরো’ ছবিতে প্রতিটি প্রধান চরিত্রই কৃষ্ণাঙ্গ এবং যাহা প্রবল ব্যবসাসফল ও সমালোচকধন্য) প্রতিধ্বনি। সেরিনাও বলিয়াছেন, তাঁহার নিজেকে মনে হইতেছে এক যোদ্ধা রাজকন্যা, ওই চলচ্চিত্রের কাল্পনিক দেশের বাসিন্দা। সেরিনা গত সেপ্টেম্বরে সন্তানের জন্ম দিয়া এই মে-জুনে তীব্র প্রতিযোগিতায় লড়িতেছেন, সেই চমকপ্রদ সংগ্রাম ও আত্ম-অতিক্রম-অভিযানেরও চিহ্ন হইয়া দাঁড়াইয়াছে এই পোশাক। কয়েক জন সহ-খেলোয়াড় কেবল বলিয়াছেন, তাঁহাদের তো এমন পোশাক পরিতে দেওয়া হয় না, রীতিমতো নিয়ম রহিয়াছে যে লেগিংস পরিলেও তাহা কাফ মাস্লের মধ্যবর্তী অংশ অবধি যাইতে পারে, এবং তাহার উপর স্কার্ট বা শর্টস পরিতেই হইবে। সেরিনাকে চমৎকার লাগিতেছে, কিন্তু নিয়ম কি বদলাইয়াছে?
সেরিনা ২৩টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম বিজয়িনী, বেশ কিছু মাস টেনিস না খেলিয়া এক নম্বরের বদলে তাঁহার র্যাঙ্কিং যতই ৪৫৩-য় নামিয়া যাউক, তিনি বহু মানুষের মতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহিলা টেনিস খেলোয়াড়, এই মুহূর্তের তো বটেই। তিনি গর্ভিণী অবস্থায় খেলিয়া গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতিতে পারেন, কৃষ্ণাঙ্গ বলিয়া দর্শকের সহস্র বিদ্রুপের সম্মুখীন হইয়াও খেলা জিতিয়া তাহার জবাব দিতে পারেন, অপরিসীম শারীরিক-মানসিক ক্ষমতার বিচ্ছুরণ তাঁহার ভাবমূর্তির সহিত ওতপ্রোত। জন্ম দিবার সময় তাঁহার রক্তসঞ্চালনের কিছু অসুবিধা হইয়াছিল, সেই অসুখ থাকিয়া গিয়াছে, এই পোশাক সেই ক্ষেত্রেও তাঁহাকে সাহায্য করিতেছে বলিয়া প্রকাশ। হয়তো এতগুলি কারণেই কর্তৃপক্ষ কঠোর হইতেছেন না। তাঁহারা যদি বলেন এই পোশাক চলিবে না, তবে প্রবল বিরোধিতা শুরু হইতে পারে, সোশ্যাল নেটওয়ার্কে বিচারসভা বসাইয়া তাঁহাদের নারীবিরোধী কৃষ্ণাঙ্গবিরোধী মাতৃবিরোধী রোগীবিরোধী বলিয়া দাগিয়া দেওয়া হইতে পারে। তাহা ব্যতীত, পৃথিবী ১৯৮৫-র তুলনায় বহু ক্ষেত্রেই পরিবর্তিত। গত বৎসর হইতে #মিটু আন্দোলন তেজোদীপ্তা ও গতিময়ী, নারী সম্পর্কে তিরস্কারসূচক কিছু বলিতে যাইলে তাহা যুগলালিত পুংতান্ত্রিক কুধারণাজাত কি না, তাহার বিচার বাধ্যতামূলক হইয়া পড়িয়াছে। তদুপরি, প্রথাবিরুদ্ধ কাজ দেখিলে এক সময় কেবল হাস্যপরিহাস ও নিন্দামন্দ জাগিয়া উঠিত, ইদানীং তাহাকে সাহস-দ্যোতক ও নিয়মভাঙানিয়া নূতনোৎসব বলিয়া প্রশস্তি করা হয়। নব দৃষ্টির মধ্যেও অন্ধতা নাই তা নহে, কিন্তু ইহার মধ্যে গ্রহণপ্রশ্রয় অধিক, ফলে ইহা সভ্যতা ও সহিষ্ণুতার সমীপবর্তী। তাই ১৯৮৫-তে এক শ্বেতাঙ্গিনী শ্বেত পোশাক লইয়া যাহা পারেন নাই, এই ২০১৮-য় এক কৃষ্ণাঙ্গী কৃষ্ণ পোশাক লইয়া তাহা পারিলেন। ইতিহাস নিশ্চয় প্রসন্ন হইয়াছে।
যৎকিঞ্চিৎ
লোকে সারা দিন ফোনে মুখ ডুবিয়ে বসে থাকছে। এ বার নাকি নতুন উন্নত ফোনে থাকবে তার টোটকা। ফোনই হিসেব করে দেবে কী অ্যাপ কত ব্যবহৃত হচ্ছে এবং সতর্কতা শোনাবে: ছি, এত ফোন দেখবেন না, বাইরে ঘুরে আসুন। এই হল সভ্যতা— সমস্যাটা উৎপাদন করব, তার পর সমাধান বেচে আরও পয়সা নেব। যেমন, প্রথমে টিভি, কম্পিউটারে মজার হট্টমেলা বসিয়ে লোকটাকে সোফাবন্দি জবুথবু চর্বিওয়ালা তৈরি করা হল, তার পর ‘স্লিম হও’ জপে, দামি ট্রেডমিল বেচে দেওয়া হল!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy