Advertisement
E-Paper

সমার্থক

এই মানসিকতা উদ্বেগজনক। যে অপরাধ কমানোর কথা ভাবিয়া বয়স-নির্বিশেষে আরও কড়া শাস্তির নিদান দিবার কথা বলা হইতেছে, ইহার ফলে সেই অপরাধ কালে কালে আরও না বৃদ্ধি পায়।

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৮ ০০:৫৬

অপরাধী এবং অপরাধের শিকার— শব্দ দুইটিকে সাদা চোখে দেখিলে একটিকে অন্যটির বিপরীত বলিয়া মনে হয়। যেন সাদা পাতায় একটি রেখা টানিলে তাহার এক দিকে থাকিবে অপরাধী, অন্য দিকে থাকিবে সেই অপরাধের শিকার। চোখ এবং মন এত কাল ধরিয়া এই ছবিটিই দেখিতে এবং ভাবিতে অভ্যস্ত। কিন্তু বাস্তব হইল, এই বিভাজনকারী রেখাটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অতি সূক্ষ্ম, বিশেষত ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক অপরাধী’র ক্ষেত্রে তো বটেই। প্রায়শই দেখা যায়, যে শিশু বা কিশোরটির গাত্রে সমাজ ইতিমধ্যেই অপরাধীর ছাপ লাগাইয়া বসিয়া আছে, সে নিজেই কোনও এক সময় অনুরূপ অথবা অন্য কোনও ঘৃণ্য অপরাধের শিকার হইয়াছিল। তাহার শৈশব পরিচ্ছন্ন, সুস্থিত নহে। পরবর্তী কালে তাহার অপরাধমূলক কর্মে সেই কালো অতীতই ছায়া ফেলে। সেই ক্ষেত্রে তো অপরাধীকে অপরাধের শিকার হইতে আলাদা করিলে চলে না। এই পর্যবেক্ষণটিই সম্প্রতি উঠিয়া আসিয়াছে কলিকাতায় শিশুর অধিকার বিষয়ক এক আলোচনাচক্রে। মূল্যবান পর্যবেক্ষণ, কারণ বর্তমান সময়ের নিরিখে অপ্রাপ্তবয়স্কের অপরাধ লইয়া তাহা একটি নূতন দিকের সন্ধান দেয়, যে দিক লইয়া গবেষণা, ভাবনা, বিতর্ক এখনও যথেষ্ট দানা বাঁধে নাই।

বা বলা ভাল, দানা বাঁধিতে দেওয়া হয় নাই। সাধারণ মানুষ হইতে প্রশাসক— কেহই এই বিষয়ে উদ্যোগ করে নাই। বরং গোড়া হইতেই স্পর্শকাতর বিষয়টিতে পারিপার্শ্বিকতার তুলনায় বয়সকে অতিগুরুত্ব দেওয়া হইয়াছে। যেন একটি নির্দিষ্ট সংখ্যার ফাঁসে অপরাধকে বাঁধিতে পারিলেই সমাজ শুদ্ধ, শুভ্র হইবে। ইহার বাহিরে গিয়া আইনভঙ্গকারী শিশু বা কিশোর কোন পরিবেশে বড় হইয়া উঠিয়াছে বা প্রত্যহ তাহাকে কোন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়া যাইতে হইয়াছে— সেই বিষয়গুলিতে জোর দিবার তেমন আগ্রহ কাহারও নাই। বরং নির্ভয়া-পরবর্তী ভারতে অপ্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীর ক্ষেত্রে শিশুর অধিকারের প্রসঙ্গ তুলিলেই বাঁকা দৃষ্টি ছুটিয়া আসে। সমাজ হইতেই চাপ আসে, অপরাধ বিচারের ক্ষেত্রে মাপকাঠি হিসাবে গণ্য বয়স কমানো হউক। তাহাতে যদি শিশুর অধিকার পড়িয়া মার খায়, আক্ষেপ নাই।

এই মানসিকতা উদ্বেগজনক। যে অপরাধ কমানোর কথা ভাবিয়া বয়স-নির্বিশেষে আরও কড়া শাস্তির নিদান দিবার কথা বলা হইতেছে, ইহার ফলে সেই অপরাধ কালে কালে আরও না বৃদ্ধি পায়। ভয়টি যে অমূলক নহে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই তাহার প্রমাণ। সেই দেশে কিশোর-অপরাধ কমাইতে নব্বইয়ের দশকে অপরাধীর বয়স কমাইয়া আনা হইয়াছিল। উদ্দেশ্যটি বিফলে যায়। আইন করিয়া বয়স কমাইয়া অপরাধ দমনের চেষ্টা সহজ কাজ, অসুস্থ শৈশবের অধিকারীকে একটি সুন্দর পরিবেশ উপহার দিবার তুলনায়। কারণ দ্বিতীয়টিতে প্রাপ্তবয়স্কদের কিছু অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করিতে হয়। নিজেদের শোধরাইবার দায়িত্ব। যে সমাজ এখনও শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা বন্ধ করিতে, তাহার মাথার উপর ছাদ, হাতে বই আর শরীরে পুষ্টির জোগান নিশ্চিত করিতে, এবং পারিবারিক হিংসা বন্ধ করিতে পারে না, সেখানে দাঁড়াইয়া অপ্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীর অপরাধ লইয়া তত্ত্বকথা কিছু অসার ঠেকে।

Severe punishment Criminal offence
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy