Advertisement
০৬ মে ২০২৪

বাঙালিকে নাস্তানাবুদ করার জঘন্য চেষ্টায় পাকিস্তান

মাত্র পঁয়তাল্লিশটা বর্ষা পেরিয়েছে। পৃথিবীর গায়ে যে পরিমাণ রক্ত ঢেলেছিল পাকিস্তান, এই ক’টা বর্ষায় তার দাগ ধুয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আরও অনেক বর্ষাতেও হয়তো সম্ভব নয়। ইসলামাবাদ কি সে সত্য ভুলে যাচ্ছে? নাকি অন্য কাউকে ভুলিয়ে দিতে চাইছে?

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৩৩
Share: Save:

মাত্র পঁয়তাল্লিশটা বর্ষা পেরিয়েছে। পৃথিবীর গায়ে যে পরিমাণ রক্ত ঢেলেছিল পাকিস্তান, এই ক’টা বর্ষায় তার দাগ ধুয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আরও অনেক বর্ষাতেও হয়তো সম্ভব নয়। ইসলামাবাদ কি সে সত্য ভুলে যাচ্ছে? নাকি অন্য কাউকে ভুলিয়ে দিতে চাইছে?

মানবতার ভয়ঙ্কর নিধন যজ্ঞ। লক্ষ লক্ষ হত্যা। নারীর সম্ভ্রমের অবাধ ভূলুণ্ঠন। বঙ্গবন্ধু কথা দিয়েছিলেন, এ অপরাধের বিচার হবেই। আজ কথা রাখছে বাংলাদেশ। জাতির জন্মই হতে দিতে চায়নি যে জঘন্য ঘাতকরা, জাতি এতগুলো বছর পার করে তাদের পাওনাগণ্ডা মিটিয়ে দিতে প্রত্যয়ী।

বিষয়টি বাংলাদেশের একান্ত নিজস্ব, বাঙালি জাতির নিতান্ত অভ্যন্তরীণ। বাঙালির অন্দরমহলে হঠাৎ পাকিস্তান কেন উঁকি দেওয়ার চেষ্টায়, কেন ইসলামাবাদের নাক গলানোর এমন অদম্য প্রয়াস, কেন বার বার হুঁশিয়ারি নওয়াজ শরিফদের? পাকিস্তানের এই অনাকাঙ্খিত হস্তক্ষেপের চেষ্টা, এই অযাচিত পরামর্শ এবং এই নিষ্ফল আস্ফালন দুর্বোধ্য যতটা, ততটাই বিরক্তির উৎপাদন এতে।

বাংলাদেশের বিষয়ে কোনও মতামত ব্যক্ত করার বা ঢাকার সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করার কোনও অধিকার কি পাকিস্তানের রয়েছে? ভাঙনের আগের ইতিহাস কি বিস্মৃত হয়েছে ইসলামাবাদ? আজকের বাংলাদেশ যখন ইসলামাবাদ থেকে প্রসারিত শাসনতন্ত্রের অধীনে ছিল, সে সময় কোটি কোটি বাঙালিকে দাবিয়ে রাখতে বার বার কী ভাবে গণ-রায়কে সপাটে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, সে ইতিহাস বাঙালি জাতি ভুলে যায়নি। লক্ষ লক্ষ হত্যা, অগণিত ধর্ষণ, অবাধ লুঠতরাজের একাত্তরে বাঙালির মুক্তির মরিয়া লড়াইকে যে পরিমাণ রক্তের উচ্ছ্বাসে ভাসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল, সে পরিমাণ রক্তের দাগ মাত্র পঁয়তাল্লিশটা বর্ষায় ধুয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশের জন্মই রুখে দিতে চেয়েছিল যে পাকিস্তান, কোন অধিকারে সে আজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ায় নিজের মত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে? হলফ করে বলা যায়, এ প্রশ্নের জবাব পাকিস্তানের কাছেও নেই। তবু থামতে নারাজ ইসলামাবাদ।

যুদ্ধাপরাধ আর মানবতা বিরোধী ভয়ঙ্কর অপরাধের আসামিদের কাঠগড়ায় টেনে আনছে বাংলাদেশ। বিচারবিভাগের দণ্ড যত বার নেমে আসছে অপরাধীর উপর, তত বারই চিৎকৃত বিরোধিতায় সরব হচ্ছে ইসলামাবাদ। ঢাকা বার বার কঠোর বার্তা দিচ্ছে। ইসলমাবাদের বিদ্বেষের পরোয়া যে ঢাকা করে না, তাও বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবু আবার। মির কাসেম আলির ফাঁসি হতেই আবার অযাচিত বিদ্বেষ-বিবৃতি নওয়াজ শরিফের বিদেশ মন্ত্রকের।

বার বার মুখের উপর প্রত্যাখ্যান মেলা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে পাকিস্তান যে ‘উদ্বেগ’ দেখাচ্ছে, তার নেপথ্যে অন্ধকারে মোড়া উদ্দেশ্য এক। যে বাঙালি জাতির হাতে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছিল, সেই জাতিকেই এ বার নাস্তানাবুদ করার চেষ্টা। বাংলাদেশের অন্দরে বিভেদরেখা টেনে।

আবার হলফ করে বলে দেওয়া যায়, অসাফল্যই অপেক্ষায় রয়েছে পাকিস্তানের জন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE