Advertisement
০৪ মে ২০২৪

বৃত্তিহীন

অতি বিলম্বে, অতি সামান্য। দলিত-আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের অনুদান দিবার ইহাই যেন নীতি নরেন্দ্র মোদী সরকারের।

নরেন্দ্র মোদী

নরেন্দ্র মোদী

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

অতি বিলম্বে, অতি সামান্য। দলিত-আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের অনুদান দিবার ইহাই যেন নীতি নরেন্দ্র মোদী সরকারের। সংবাদে প্রকাশ, ২০১৫ সাল হইতে পর পর তিন বৎসর তফসিলি জনজাতির জন্য উচ্চশিক্ষায় জাতীয় বৃত্তি দেওয়া হয় নাই। ভূতপূর্ব প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীর নামাঙ্কিত ওই বৃত্তিটির নাম পরিবর্তন করিয়া গত বৎসর ফের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। কিন্তু যত জনকে বৃত্তি দিবার ঘোষণা ছিল, তালিকায় নাম উঠিয়াছে তাহার অর্ধেকের। বৃত্তি পাইবার আশায় যাঁহারা ইতিমধ্যে গবেষণা শুরু করিয়াছিলেন, তাঁহাদের অধিকাংশই নিরাশ হইয়াছেন। অনেকেই গবেষণা সম্পূর্ণ করিতে পারিবেন না, তাহা প্রায় নিশ্চিত। মোদীর শাসনকালে দলিত-আদিবাসীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদানে সরকারের কার্পণ্য ও দীর্ঘসূত্রিতা লইয়া বারংবার অভিযোগ উঠিয়াছে। দলিত-আদিবাসীদের উন্নয়ন ও সামাজিক সহায়তার বরাদ্দ পড়িয়া আছে, অথচ সেই অর্থ তাঁহাদের নিকট পৌঁছাইতে সরকার ব্যর্থ। ‘পোস্ট-ম্যাট্রিক স্কলারশিপ’ খাতে বিপুল অঙ্ক বকেয়া রাখিয়াছে কেন্দ্র। সামাজিক ন্যায় ও সক্ষমতা বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট অনুসারে, ওই খাতে আট হাজার কোটি টাকারও অধিক বকেয়া রহিয়াছে কেন্দ্রের। বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, দলিত ও আদিবাসী মিলিয়া দরিদ্রতম ছাত্রদের উচ্চশিক্ষায় বৃত্তির খাতে তিন বৎসরে বকেয়া ছাড়াইয়াছে তেরো হাজার কোটি টাকা। ‘প্রি-ম্যাট্রিক স্কলারশিপ’ লইয়াও একই অভিযোগ। দলিতদের ছাত্রাবাস নির্মাণের জন্য নির্দিষ্ট বরাদ্দের এক-তৃতীয়াংশও রাজ্যগুলিকে পাঠায় নাই কেন্দ্র। এই হিসাব গত আর্থিক বৎসরের।

কিন্তু অর্থের অঙ্ক দিয়া ক্ষতির হিসাব করিয়া লাভ কী? প্রকৃত ক্ষতি মানবসম্পদের অপচয়ে। দলিত-আদিবাসীরা সমাজের দরিদ্রতম দুই বর্গ। সন্তানকে উচ্চশিক্ষিত করিতে হইলে যে দীর্ঘ বিনিয়োগ প্রয়োজন, তাহা জোগান দিবার সামর্থ্য অধিকাংশ দলিত-আদিবাসী পরিবারের নাই। তাহা স্পষ্ট হইয়াছে ২০১১ সালের জনগণনার ফলেও। দলিতদের মধ্যে স্নাতকের হার দেশের গড় হারের অর্ধেক, আদিবাসীদের মধ্যে তাহার চাইতেও কম। দুই সম্প্রদায়েই তরুণীদের মধ্যে সে হার আরও সামান্য। নানা সমীক্ষায় দেখা গিয়াছে, দলিত-আদিবাসী ছাত্রদের অধিকাংশই আসে গ্রাম হইতে, তাহারা পড়াশোনা করে ভারতীয় ভাষায়। স্বভাবতই, উচ্চশিক্ষা সম্পূর্ণ করিতে হইলে নানা প্রকার সহায়তা তাহাদের একান্ত প্রয়োজন।

বিশ্ববিদ্যালয়-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দলিত-আদিবাসী ছাত্রদের জন্য সংরক্ষণ নূতন সুযোগ তৈরি করিয়াছে, কিন্তু সরকারি অসহযোগিতা ও সামাজিক অমর্যাদা তাহাদের মুখের উপর দরজা বন্ধ করিতেছে। ২০১৬ সালে হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের ছাত্র রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যা সেই বঞ্চনা ও অমর্যাদার পরিণাম। কত দলিত ছাত্রের এই পরিণাম হইয়াছে, কেন হইতেছে, তাহাদের কী সহায়তা প্রয়োজন, সে বিষয়ে সরকারি তরফে অনুসন্ধান করিয়া রিপোর্টও জমা পড়িয়াছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সরকারের যাহা ন্যূনতম কর্তব্য, ছাত্রছাত্রীদের প্রাপ্য সহায়তা যথাসময়ে তাহাদের নিকট পৌঁছাইয়া দেওয়া, সে কাজটুকু করিতে সরকার ব্যর্থ। অপর দিকে, দূরশিক্ষার সুযোগকে সঙ্কুচিত করিয়াছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। ইহা নিঃসন্দেহে দরিদ্র ও প্রান্তবাসী ছাত্রছাত্রীদের সর্বাধিক বিপন্ন করিবে। শিক্ষায় সংস্কার আনিতে হইবে ঠিকই, কিন্তু এই কি তাহার উপায়? ভারতে দরিদ্রের উচ্চশিক্ষার সুযোগ প্রসারিত হইবার পরিবর্তে সঙ্কুচিত হইতেছে। তফসিলি জাতি ও জনজাতির প্রতি মোদী সরকারের বঞ্চনা বহুমুখী। কিন্তু শিক্ষাবঞ্চনার ফল দেশের পক্ষে সর্বাধিক সুদূরপ্রসারী হইবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE