Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

ফোন এবং প্রেম

তবে প্রেমের সহিত স্মার্ট ফোনের একটি বড় পার্থক্যও রহিয়াছে। প্রেম নিজের সহিত সময় কাটাইতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। নিজেকে আবিষ্কার করিবার, ভালবাসিবার উপাদান জোগায়, সাহস জোগায়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৭ ০০:১১
Share: Save:

সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষা বলিতেছে, স্মার্ট ফোন মস্তিষ্কের বোধশক্তিকে খর্ব করে। এমনকী তাহা বন্ধ করিয়া হাতের কাছে রাখিলেও মনের উপর তাহার কুপ্রভাব পড়ে, মন আপন সংযোগের সামর্থ্য অনেকাংশে হারায়। এই বিষয়ে স্মার্ট ফেনের সহিত প্রেমের সাদৃশ্য আছে। বিশেষত প্রথম প্রেমের। তাহা মস্তিষ্ক বিকল করিয়া দেয়, চিন্তাশক্তি প্রায় হরণ করিয়া লয়। প্রাত্যহিক জীবনে প্রেমাস্পদ ছাড়া কাহারও অস্তিত্ব প্রাসঙ্গিক থাকে না। প্রেম না থাকিলে জীবন স্থবির প্রায়। স্মার্ট ফোন না থাকিলে মাথায় বজ্রাঘাত, কোনও কাজ সুসম্পাদনের সম্ভাবনা কমিয়া যায়। উভয় ক্ষেত্রেই মন, যথাক্রমে প্রেম ও ফোনের দিকেই, পড়িয়া থাকে। আধুনিক মানবকে স্মার্টফোনই নিয়ন্ত্রণ করে, ঠিক যেমন প্রেমে পড়িলে প্রেমই মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাহারা তখন চাঁদের কথা ভাবিবে না পার্কের কথা, প্রেমই তাহা স্থির করিয়া দেয়। এমনকী প্রেমাস্পদের সহিত না থাকিলেও। স্মার্ট ফোনের মতোই, অনুপস্থিত প্রেমিক বা প্রেমিকা মনের অগোচরেই মনকে চালনা করে, তাহাই নির্ধারণ করিয়া দেয়— মস্তিষ্ক কতটা আকুল ও বিহ্বল হইবে। এমনই চরম সেই অনুপস্থিতিও।

তবে প্রেমের সহিত স্মার্ট ফোনের একটি বড় পার্থক্যও রহিয়াছে। প্রেম নিজের সহিত সময় কাটাইতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। নিজেকে আবিষ্কার করিবার, ভালবাসিবার উপাদান জোগায়, সাহস জোগায়। প্রেমাস্পদের কথা চিন্তা করিয়া মস্তিষ্ক বিকল হইলেও প্রেম নিজের সঙ্গে নিজেকে মিলাইয়া দেয়, আপনাতে নিমগ্ন থাকিবার উপকরণ আনিয়া দেয় মনের কাছে। আত্মনিমগ্ন শব্দটি সজীব হইয়া উঠে। অপর দিকে স্মার্ট ফোনও আত্মনিমগ্ন করিয়া রাখে, কিন্তু তাহার অতিরিক্ত কার্যকারিতায় বিস্মৃতির পথে চলিয়া যায় আপন সত্তাটি। তখন, সে কী ভালবাসিত, কী কারণে আনন্দিত হইত, তাহা সে নিজে স্থির করে না, স্থির করে স্মার্টফোন। নিজস্বতা বলিতে তখন রকমারি স্মার্টফোন, তাহার আচ্ছাদন এবং রিংটোন। বাকিটা থান কাপড়ের ন্যায় বৈচিত্রহীন। প্রেমে পড়িলে মানুষ নিজেকে নিজের কাছে আনিতে শেখে, স্মার্টফোনে পড়িলে নিজেকে দূরে ঠেলিতে।

এই বিড়ম্বনা হইতে মুক্তির উপায়? আছে একখানি। স্মার্ট ফোনের ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আবশ্যক। ফোনের ব্যবহার সীমিত করা অত্যন্ত জরুরি। ইহাতে মন ও মস্তিষ্ক আপন চিন্তাশক্তির বশে থাকিবে এবং সেই অনুযায়ী মানুষকে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতে সাহায্য করিবে। মানুষের নিজেরই ঠিক করা উচিত, সে কত ক্ষণ ও কী রূপে ফোন ব্যবহার করিবে। সমীক্ষাটিতে আরও দেখা গিয়াছে, প্রত্যহ একটি নির্দিষ্ট সময় ধরিয়া ফোন বন্ধ রাখিয়া দিলে, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা, ভাবিবার ক্ষমতা বহুলাংশে উন্নত হইতেছে। অর্থাৎ মনকেও শাসনে ও নিয়ন্ত্রণে রাখিবার প্রয়োজন। ঠিক যেমন পরীক্ষার সময় অভিভাবকরা প্রেমিক-যুগলকে শাসন করিয়া থাকেন, পড়াশোনায় মন দিয়া ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করিতে বলেন, তেমনই। প্রেম ভাল, স্মার্ট ফোনও খারাপ নহে, কিন্তু উভয়কেই কী ভাবে বাগে আনিতে হয়, বশ মানাইতে হয়, তাহা না জানিলে বিপদ। তবে কিনা, হাজার হাজার বছরের উপদেশেও প্রেমের বেগ ও আবেগ সামাল দেওয়া যায় নাই। স্মার্ট ফোনের ক্ষেত্রেও অন্যথা হইবে, তাহার ভরসা কম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE