Advertisement
E-Paper

পণের ফাঁদে

বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও, ডাক দিয়াছে সরকার। কিন্তু পড়াইলেও কি মেয়ে বাঁচিবে? কন্যাহারা এক পিতা আক্ষেপ করিয়াছেন, মেয়ের উচ্চশিক্ষায় ব্যয় না করিয়া পণের জন্য টাকা জমা করিলে ভাল হইত।

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৭ ০০:০০

বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও, ডাক দিয়াছে সরকার। কিন্তু পড়াইলেও কি মেয়ে বাঁচিবে? কন্যাহারা এক পিতা আক্ষেপ করিয়াছেন, মেয়ের উচ্চশিক্ষায় ব্যয় না করিয়া পণের জন্য টাকা জমা করিলে ভাল হইত। পণপ্রথার কোপে নিহতদের তালিকায় নাম উঠিয়াছে তাঁহার কন্যার। আইআইটি দিল্লি হইতে পিএইচডি-প্রাপ্ত কন্যার পিতাকেও যে এমন আপশোস করিতে হয়, তাহা হইলে কোন অভিভাবক নিশ্চিন্ত হইতে পারে? সংবাদে প্রকাশ, ওই মেয়েটির স্বামী বিশ লক্ষ টাকা পণ চাহিয়াছিল। স্ত্রীকে গবেষণা ছাড়িয়া তাহার সহিত ব্যবসায় যোগ দিতে হইবে, সে দাবিও করিয়াছিল। কোন দাবিটি মেধাবী তরুণীকে অধিক বিপর্যস্ত করিয়াছিল, তাহা স্পষ্ট নহে। কিন্তু বিবাহের সময়ে ও পরে ক্রমাগত পণের দাবি, অনাদায়ে নির্যাতন, বিচ্ছেদ অথবা হত্যার হুমকি, ইহাই নিয়ম হইয়া দাঁড়াইয়াছে। গত বৎসর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর অপমৃত্যুও প্রশ্ন তুলিয়াছিল, কেন উচ্চশিক্ষা, মেধা, স্বরোজগার, কিছুই মেয়েদের সুরক্ষিত দাম্পত্য নিশ্চিত করিতে পারে না? পুলিশের নথি অনুসারে প্রতি বৎসর প্রায় আট হাজার মেয়ে ভারতে পণের জন্য হত্যা বা আত্মহত্যার শিকার হয়। যদিও বেসরকারি নানা সূত্রের দাবি, সংখ্যাটা অন্তত ইহার দ্বিগুণ, কারণ অসংখ্য বধূহত্যা পুলিশের খাতায় দুর্ঘটনা বলিয়া দেখানো হইয়া থাকে। তাহার তদন্তও হয় না।

একশো তিন বৎসর পূর্বে এই কলকাতা শহরেই পণের জন্য গায়ে আগুন লাগাইয়া মরিয়াছিল চৌদ্দো বৎসরের স্নেহলতা মুখোপাধ্যায়। পণের জন্য বারো হাজার টাকা জোগাড় করিতে তাহার পিতার হয়রানি দেখিয়া বিবাহ তথা জীবনের প্রতিই পরাঙ্মুখ হইয়া উঠিয়াছিল সেই কিশোরী। তাহার মৃত্যুতে হাহুতাশ এবং উপদেশ কম বর্ষিত হয় নাই। মেয়েরা লেখাপড়া শিখিলে, নার্সের মতো পেশায় বা দেশের সেবায় নিজেদের নিয়োগ করিলে, নাবালিকা বিবাহ রোধ করিলে, অবিবাহিতাকে ‘অরক্ষণীয়া’ বিবেচনার প্রথা উঠাইয়া দিলে বরপণ দিয়া বিবাহের ন্যায় কুপ্রথা দূর হইবে, অনেকেই তেমন আশা প্রকাশ করিয়াছিলেন। সে সকল শর্ত অনেকাংশেই পূরণ হইয়াছে, কিন্তু মেয়েদের অকালমৃত্যুর সংখ্যায় কোনও ঘাটতি দেখা যায় নাই।

বরং বেঙ্গালুরুর একটি বেসরকারি সংস্থার সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলিতেছে, সেই শহরে পনেরো হইতে চৌত্রিশ বৎসরের মেয়েদের মৃত্যুর প্রধান কারণ আগুনে পুড়িয়া মৃত্যু। প্রসূতিমৃত্যু, যক্ষ্মার জন্য মৃত্যু প্রভৃতিকে তাহা ছাড়াইয়াছে। তাহার একটি বড় কারণ পণের জন্য হত্যা বা আত্মহত্যা। পণবিরোধী আইন পাশ হইবার অর্ধশতাব্দী পরে ভারতের ‘আধুনিকতম’ এক শহরে বৎসরে দেড় হাজারের অধিক মেয়ে পণের জন্য অগ্নিদগ্ধ হইয়া মারা যায়, ইহার অপেক্ষা লজ্জার কথা কী হইতে পারে? স্নেহলতার মৃত্যুর খবর পাইয়া বহু যুবক প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন, তাঁহারা পণ লইয়া বিবাহ করিবেন না। ইদানীং পণের জন্য মৃত্যুর বহু মর্মান্তিক সংবাদ প্রকাশিত হইয়াছে, কিন্তু তেমন কোনও উদ্যোগ দেখা যায় নাই। আজ যুবকেরা প্রযুক্তি-পরিচ্ছদে আধুনিক হইয়াও সাবেকি বরপণের ধ্বজা ধরিয়া রহিয়াছেন। তাই শিক্ষা-বঞ্চিতা স্নেহলতা আর উচ্চশিক্ষিতা মঞ্জুলার পার্থক্য ঘুচিয়া যায়। একবিংশ ফিরিয়া যায় বিংশ, ঊনবিংশ শতাব্দীতে।

Dowry Society
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy