Advertisement
E-Paper

শব-উৎসব

শ্রীনগর হইতে কুপওয়ারা, বড় ছোট সকল শহরে একই দৃশ্য, একই উত্তাপ। এ বার আর কলেজ ক্যাম্পাস নহে, প্রতি শহরের কোণে কোণে জড়ো হইতেছে বিভিন্ন কলেজের ছাত্রছাত্রীরা।

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৩৭

এক দিনে তেরো জঙ্গি ও চার অসামরিক নাগরিকের নিধন— কাশ্মীর উপত্যকার উত্তপ্ত পরিস্থিতিকে উত্তপ্ততর করিবার জন্য, কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রীদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটাইবার জন্য যথেষ্ট। সুতরাং কলেজে কলেজে আপাতত তীব্র সংঘর্ষ, এক দিকে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী, অন্য দিকে কলেজপড়ুয়া ছেলেমেয়ের দল। এতটাই হিংসা-উদ্দীপ্ত এই ছেলেমেয়েরা যে, লাঠিচার্জ-রত পুলিশের দিকে লাগাতার পাথর ছোড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ পিকেটে অগ্নিসংযোগও চলিতেছে। শ্রীনগর হইতে কুপওয়ারা, বড় ছোট সকল শহরে একই দৃশ্য, একই উত্তাপ। এ বার আর কলেজ ক্যাম্পাস নহে, প্রতি শহরের কোণে কোণে জড়ো হইতেছে বিভিন্ন কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি স্বয়ং নিহতদের বাড়ি যাইবার পরও সংঘর্ষের তীব্রতা এতটুকু কমে নাই। সব মিলাইয়া ছবিটি ভয়ঙ্কর উদ্বেগজনক। এত অল্প বয়সি ছেলেমেয়েদেরও যখন পুলিশ ভয় দেখাইয়া থামাইতে পারে না, মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস শান্ত করিতে পারে না, পারিবারিক সদস্যরা যাহাদের বুঝাইয়া ঘরে ফিরাইতে পারেন না, তখন বুঝিতে হয়, পরিস্থিতি আক্ষরিক ভাবেই হাতের বাহিরে যাইবার জোগাড়। ছাত্র-আন্দোলন তীব্র হইলে কতখানি মাত্রাছাড়া হইতে পারে, ইতিহাসই বলিয়া দেয়। এমনকী কাশ্মীরের সাম্প্রতিক ইতিহাসও।

মনে পড়িবে, গত বৎসর ঠিক এই সময় উপত্যকার পুলওয়ামা অঞ্চলের কলেজগুলিতে ছাত্রবিক্ষোভ কেমন ভয়াল আকার লইয়াছিল। নিরাপত্তা বাহিনী জঙ্গি সন্দেহে ছাত্রদের খোঁজে তল্লাশির নামে কলেজ ক্যাম্পাসে যথেচ্ছ অত্যাচার চালায় বলিয়া ক্ষোভে ফাটিয়া পড়িয়াছিল ছাত্ররা। তাহাদের রোষের সামনে আরও বড় আক্রমণ শানাইয়াছিল সামরিক বাহিনী। বিরোধী নেতা ওমর আবদুল্লা প্রশ্ন তুলিয়াছিলেন, কোন অধিকারে ছাত্রদের সহিত সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর এই ব্যবহার। সব দেখিয়াও মুখ্যমন্ত্রী কেন আপত্তি করিতেছেন না। কেন কলেজ বন্ধ করিয়া দিতেছেন না। এই অমূল্য তরুণ প্রাণের দাম কাশ্মীর কী ভাবে মিটাইবে ইত্যাদি। কাজ হয় নাই। বিজেপি-পিডিপি সরকারের নিজস্ব বাধ্যতার কারণেই মুখ্যমন্ত্রীর মৌখিক আশ্বাস সত্ত্বেও পুলিশ ক্রমাগত ছাত্রদের আঘাত করিতে ইতস্তত করে নাই। যে দু’একটি জায়গায় পুলিশ কিছুটা পিছাইয়া গিয়াছিল, সেনাবাহিনী সেই সব স্থানে দ্বিগুণ আক্রমণপরায়ণ হইয়া ওঠে।

এই বৎসর পরিস্থিতি সঙ্গিনতর। সরকারের পিডিপি অংশটি যে নেহাত শরিক বিজেপির হাতের পুতুল, সমস্ত সিদ্ধান্তই যে কেন্দ্রীয় সরকারের অঙ্গুলিহেলনে চলমান, তাহা এখন উপত্যকার শিশু বাসিন্দারাও জানে। আর কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান তো সেনাবাহিনীর কর্মপদ্ধতিতেই পরিষ্কার। সাধারণ নাগরিক এবং জঙ্গি বাহিনীকে আলাদা করিতে তাহারা অনিচ্ছুক এবং অপারগ। জঙ্গি দমনে যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, অসামরিক সমাজের ক্ষোভ-বিক্ষোভ যে সেই একই ভাবে সামলানো যায় না, কাশ্মীরে এই আন্তর্জাতিক ভাবে মান্য নীতিটির কোনও অস্তিত্ব নাই। সমস্ত জঙ্গি আক্রমণকেই এখানে ধরিয়া লওয়া হয় ‘পাকিস্তান-পরিকল্পিত’। ভারত সরকার যখন সর্বত্র পাকিস্তানের ভূত দেখিতেছে, সেই ভূত-দর্শনের ঠিক নীচেই অন্ধকারের মতো জমিয়া উঠিতেছে কাশ্মীরের যুবসমাজের ক্রোধবিষ, নিহত জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানির রক্তবীজ হইতে জাত অগণিত জঙ্গিমনস্ক তরুণ। দুই দশক আগেও কাশ্মীরের তরুণরা এত আন্তরিক ভাবে ভারতবিদ্বেষী ছিল না। আজ তাহারা আক্ষরিক অর্থেই ‘ভারত’-এর সঙ্গে যুদ্ধে প্রবৃত্ত, অথচ ভারত সরকার এই যুদ্ধবাজদের লইয়া মাথা ঘামাইবার প্রয়োজনটিও অনুভব করিতেছে না। মনে করিতেছে, বেদম মারিলেই নাগরিক সমাজ শায়েস্তা হইবে। যত বেশি রক্ত, যত বেশি শব, ততই এই রাষ্ট্রদর্শনের আত্মতৃপ্তি।

Kashmir Agitation Terrorist Gunbattle
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy