বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ সংলগ্ন এবং সাঁইথিয়া শহর থেকে বাস পথে ২৩ কিমি পূর্বে রাঢ় বাংলার এক অতিসাধারণ জনপদ রামনগর। গ্রামের দক্ষিণে প্রবাহিত হয়েছে মূয়রাক্ষীর জলের ধারা। এই গ্রামের আরাধ্য দেবতা রামেশ্বর। এই রামেশ্বর মন্দিরের পাশেই পুরাকীর্তির সাক্ষ্য বহন করে চলেছে টেরাকোটা রীতিতে তৈরি একটি শতাব্দী প্রাচীন মন্দির। গ্রামবাসীরা অবশ্য এই মন্দিরটিকে মনসা দেবীর মন্দির হিসাবে মেনে আসছেন। যদিও এই মন্দিরে গর্ভগৃহে একটি শিবলিঙ্গের অস্তিত্ব আছে। অপূর্ব টেরাকোটার কাজ ও স্থাপত্য রীতি এই মন্দিরের পাশাপাশি রামনগর গ্রামকেও স্বতন্ত্রতার পরিচয় দিয়েছে।
এই মন্দির ইতিহাস সম্পর্কে স্থানীয় মানুষেরা সে রকম তথ্য দিতে পারেন না। তবু পাশে থাকা রামেশ্বর মন্দিরকে নিয়ে জনশ্রুতি ও কিংবদন্তি লোকমুখে প্রচলিত আছে। এই সূত্র ধরেই টেরাকোটা মন্দিরটির ইতিহাস সম্পর্কে কিছুটা জানা যায়। রামেশ্বর মন্দিরের কুল পুরোহিত বিশু চট্টোপাধ্যায় জানালেন, রামেশ্বর মন্দির প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই ওই মন্দির অবস্থান করছে। মন্দিরের এক পাশে পোড়া মাটিতে খোদিত এক লিপিতে লেখা আছে শকরাজাদের আমলে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা। লিপির নীচেই ১২৬০ শকাব্দের উল্লেখ আছে এবং লেখা আছে জনৈক মহাদেব দত্তের নাম। গ্রামবাসীদের অনুমান, মহাদেব দত্ত ছিলেন এই মন্দিরের স্থপতি।
রামেশ্বর মন্দির সম্পর্কে এক প্রচলিত কিংবদন্তি আছে যে, জটে গোঁসাই নামক এক সাধকের বর্তমান মন্দিরের স্থানে আস্তানা ছিল। তিনি তাঁর অলৌকিক শক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ করতেন। পরবর্তী কালে তাঁরই সাধনার এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আজকের রামেশ্বর মন্দির। আবার জনশ্রুতি অনুসারে, আজকের রামেশ্বর মন্দির অতীতে বনজঙ্গল পূর্ণ বন্ধ্যা অঞ্চল ছিল। পাশের সাতপুর গ্রাম থেকে এক গাভী রোজ এই জঙ্গলাকীর্ণ স্থানে এসে নিজের দুগ্ধ নিঃসরণ করত। গ্রামবাসীরা এই দৃশ্য দেখে সেখানে খনন কাজ আরম্ভ করেন। খনন কাজের মাধ্যমে এক শিবলিঙ্গের দেখা মেলে। এই শিবলিঙ্গকে কেন্দ্র করে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন তৎকালীন এক বণিক ধনকৃষ্ণ দও। আরও কথিত, ধনকৃষ্ণের পুত্র শিবদাস দত্ত স্বপ্নাদেশ পেয়ে ভক্তদের সুবিধার্থে ও তাঁদের বংশের স্মৃতির রক্ষার্থে রামেশ্বর মন্দিরের সামনে এক নাটমন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন। ধনকৃষ্ণের নাতি বজ্রমোহন দত্ত আজও জীবিত। তাঁর কাছ জানা যায়, তৎকালীন জমিদার ক্ষিতীশ মুখোপাধ্যায়ের কাছে শিবদাস এই নাট মন্দির নির্মাণে কোনও অর্থ সাহায্য নেননি। রামনগরের প্রথমিক বিদ্যালয় ধনকৃষ্ণের নামেই নামাঙ্কিত।