ফাইল চিত্র।
ভিডিয়োয় ধরা ছবি আন্তর্জালপথে ভাসিয়া আসিয়া কাঁপাইয়া দিতেছে, অনতিঅতীতে এমন অভিজ্ঞতা কম নয়। তাহার মধ্যেও বালুচিস্তানের সাম্প্রতিকতম ভিডিয়োটি আলাদা করিয়া মন্তব্যের দাবি রাখে। সম্পূর্ণ নিরস্ত্র একটি মানুষকে ঘর হইতে টানিয়া বাহির করিয়া নির্বিচারে তাহার উপর গুলিবর্ষণ— এমন ঘটনা যখন তালিবান কিংবা সিরিয়ার কোনও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী চালায়, তখন তাহার এক রকম অর্থ। আর যখন এমন কাজ করিতে দেখা যায় একটি সার্বভৌম ‘গণতান্ত্রিক’ দেশের রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনীকে, তখন তাহার অর্থ সম্পূর্ণ ভিন্ন, ভয়ঙ্করতর। স্মরণে রাখা দরকার যে এমন নৃশংস ঘটনা এত বার বালুচিস্তানে ঘটিয়াছে ও ঘটিতেছে যে ভিডিয়ো দেখিয়া বহির্বিশ্ববাসী বিস্মিত হইলেও বালুচ অধিবাসীরা ইহা এত দিনে তাঁহাদের নিয়মিত নিয়তি বলিয়া মানিয়া লইয়াছেন। তাঁহারা জানেন, তাঁহাদের প্রদেশের যে কোনও স্থান হইতে যে কোনও অধিবাসীর মৃতদেহ পাওয়া যাইতে পারে, এবং সেই মৃতদেহ যৎপরোনাস্তি ক্ষতবিক্ষত হওয়া সম্ভব। তাঁহারা জানেন, বালুচ বালকবালিকাদের জ্ঞানোন্মেষের আগেই অত্যাচারের লক্ষ্য হইতে হইবে, তাঁহারা কোনওমতেই পুত্রকন্যাদের রক্ষা করিতে পারিবেন না। দুর্ভাগ্য এইখানেই। বালুচিস্তানের অবাধ হত্যালীলা লইয়া আন্তর্জাতিক মহলে ভাবনাচিন্তা অতি অল্প, প্রায় অনুপস্থিত বলিলেই চলে। পাকিস্তান বিষয়ে যাহা কিছু আলোচনা তাহা তালিবান ও কাশ্মীর প্রশ্নগুলিকে ঘিরিয়াই ঘুরিয়া থাকে। অথচ পাকিস্তানের একটি প্রদেশে রাষ্ট্রীয় সৈন্য যে কী ন্যক্কারজনক ভূমিকায় অবতীর্ণ হইয়াছে, তাহার তথ্যপ্রমাণ সহজে মিলে না বলিয়া সে বিষয়ে মুখ খুলিবারও অবকাশ থাকে না।
যে একটিমাত্র দেশ মাঝেমধ্যে মুখ খোলে, তাহার নাম ভারত। কিন্তু পাকিস্তানের সহিত ভারতের অহিনকুল সম্পর্কধারায় বালুচিস্তান একটি জটিল খেলার একটি ঘুঁটি হিসাবে প্রতিপন্ন হয়। পাক রাষ্ট্রের ব্যবহারকে কাশ্মীরে ভারতীয় রাষ্ট্রের ব্যবহারের সহিত তুলনা ব্যতীত পাকিস্তানি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের আর কোনও প্রাসঙ্গিকতা থাকে না। ভারতের ভূমিকাও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নম্বর তুলিবার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। কয়েক দশক ধরিয়া বালুচিস্তান এই ভাবেই ভারত-পাকিস্তান-কাশ্মীর ত্রিভুজ অক্ষের একটি অদৃশ্য চতুর্থ ভুজ হিসাবে বিরাজ করিতেছে, এবং সেই পরিস্থিতিতে অসহায় নিরস্ত্র চরম অত্যাচারিত বালুচ অধিবাসীরা বিশ্ব-মানচিত্রে অদৃশ্যতর ভূমিকায় থাকিতে বাধ্য হইতেছেন।
বালুচিস্তানের দুর্দশা বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলি কদাচিৎ প্রশ্ন তুলিলে পাক সরকার সেগুলিকে ভুয়া বলিয়া প্রতিপন্ন করে। বাস্তবিক যে ফাঁদে বালুচ সমস্যা আটকাইয়া আছে, একদা পাকিস্তানের আরও একটি প্রদেশ এমন বিপন্নতার মধ্যে বাঁচিতেছিল: তাহার নাম পূর্ব পাকিস্তান। সাম্প্রতিকতম ভিডিয়োটি পূর্ব পাকিস্তানে ‘খানসেনা’দের দুঃসহ অত্যাচারের ছবি স্মরণ করায়। একটি সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাহির হইতে হস্তক্ষেপ করা সহজ নয়, উচিতও নয়। তাহাতে যে নিশ্চিত ভাবে উপকার সাধন হইবে, তাহাও হলফ করিয়া বলা যায় না, উদাহরণ সিরিয়া। কিন্তু প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ না করিয়া পরোক্ষ পন্থায় পাকিস্তানের এই অভ্যন্তরীণ সঙ্কটের কিছু প্রতিকার করা যায় কি না, সেই বিবেচনা অত্যন্ত জরুরি হইয়া পড়িয়াছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy