Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ক্ষতি

প্রত্যুত্তরে বেদম প্রহার জুটিয়াছে। তাহার পর, অভিযুক্তরাই তাঁহার নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করিয়া আসিয়াছে। থানা নাকি নাচার— কেহ অভিযোগ দায়ের করিতে আসিলে পুলিশ তাহা গ্রহণ করিতে আইনত বাধ্য।

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৭ ০০:১৬
Share: Save:

কসবা-র কমলেশ্বর গঙ্গোপাধ্যায় জানেন, প্রতিবাদ করিলে শুধু শারীরিক নিগ্রহেই হেনস্তা ফুরাইয়া যায় না, থানা-পুলিশের হ্যাপাও সহ্য করিতে হয়। ঠাকুরপুকুর-আনন্দনগরের সরস্বতী বাল্মীকিও কথাটি ঠেকিয়া শিখিয়াছিলেন। আরও অনেকেই শিখিতেছেন। বাড়ির সম্মুখে প্রকাশ্যে মদ্যপানের প্রতিবাদ করিয়াছিলেন কমলেশ্বরবাবু। প্রত্যুত্তরে বেদম প্রহার জুটিয়াছে। তাহার পর, অভিযুক্তরাই তাঁহার নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করিয়া আসিয়াছে। থানা নাকি নাচার— কেহ অভিযোগ দায়ের করিতে আসিলে পুলিশ তাহা গ্রহণ করিতে আইনত বাধ্য। অভিযোগ গ্রহণ না করিতে পুলিশের এহেন অপারগতার কথা শুনিলে অনেকেই বিস্মিত হইবেন, কারণ কোনও প্রভাবশালীর (অস্যার্থ, শাসক দলের স্নেহধন্য) বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করিবার কাজটি এই রাজ্যে অন্তত সহজসাধ্য নহে। তবু, পুলিশ আইনের পথে চলিবে, তাহাই কাম্য। কেহ অভিযোগ দায়ের করিতে আসিলে পুলিশ তাহা গ্রহণ করুক— মূল অভিযুক্তরা আসিলেও। কিন্তু, অভিজ্ঞরা জানিবেন, প্রতিবাদকারী ও মূল অভিযুক্তদের কাহিনি বহু ক্ষেত্রেই উভয় পক্ষের অভিযোগ গ্রহণে ফুরায় না। পাল্টা অভিযোগটিকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়া, প্রতিবাদকারীকে যারপরনাই হেনস্তা করিয়া পুলিশ কর্তব্য পালন করে। অবশ্য, তাহার জন্য মূল অভিযুক্তদের খুঁটির জোর থাকা আবশ্যিক। সেই জোর যাহাদের আছে, তাহাদের নিকট, অতএব, প্রতিবাদীকে শায়েস্তা করিবার সহজ পথ পুলিশকে ব্যবহার করা। যে ভাবে এই পথটির ব্যবহার বাড়িতেছে, তাহাতে আঁচ করা সম্ভব যে এই পথে কাজ হইতেছে। কমলেশ্বর গঙ্গোপাধ্যায়রা বুঝিতেছেন, প্রতিবাদ করিতে হইলে তাহা নিজের দায়িত্বে করাই বাঞ্ছনীয়, সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামিলে প্রশাসনকে পার্শ্বে পাওয়া যাইবে না।

ইহাই সর্বাপেক্ষা মারাত্মক সংবাদ। আইনের শাসন বজায় রাখাই পুলিশের সর্বপ্রথম কর্তব্য। যে ঘটনায় কোনও নাগরিকের অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়, তাহা নিবারণ করা আইনের শাসন বজায় রাখিবার অংশ। অর্থাৎ, কাহারও বাড়ির সম্মুখে মদ্যপানের আসর বসাইলে, অথবা কাহারও উদ্দেশ্যে নিয়মিত কটূক্তি করা হইলে রাজনৈতিক রং বিচার না করিয়াই সেই অভিযোগকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়া যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করাই পুলিশের কর্তব্য। পশ্চিমবঙ্গের অভিজ্ঞতা বলিবে, পুলিশ সেই কর্তব্য পালনে ব্যর্থ। এবং, সেই ব্যর্থতার বড় অংশ ইচ্ছাকৃত। সেই কারণেই একের পর এক এমন ঘটনা ঘটিতে থাকে, পুলিশের শাসন বজায় থাকা কোনও পরিসরে যাহা ঘটা অসম্ভব। দুষ্কৃতীরা জানে, খুঁটি ধরা থাকিলে পুলিশকে ভয় পাইবার কোনও কারণ নাই। বরং, নিজেদের দাপট বৃদ্ধির কাজেই পুলিশকে ব্যবহার করা চলে। ভুলক্রমে কোনও সাংসদকে হেনস্তা করিয়া ফেলিলে অন্য কথা, নচেৎ সাধারণ মানুষকে হেনস্তা করিতে কোনও সমস্যাই নাই।

দলের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখিতে গিয়া রাজ্যের পুলিশবাহিনী এই ক্ষতিটিই করিল। তাহাদের বিশ্বাসযোগ্যতা গিয়াছে, সাধারণ মানুষের মনে তাহাদের প্রতি সম্ভ্রমও গিয়াছে। দুষ্কৃতীরা পুলিশকে ভয় পাইতে ভুলিয়াছে। কিন্তু, ক্ষতি তো শুধু বাহিনীর নহে। সামগ্রিক ভাবে রাজ্যের ক্ষতি। অধিকাংশ মানুষই এখন মুখ বুজিয়া দুষ্কৃতীদের অত্যাচার সহিয়া লন, পুলিশের দ্বারস্থ হন না। প্রতি দিন তাঁহারা জীবনযাত্রার মানের সহিত, নিজেদের নাগরিক অধিকারের সহিত সমঝোতা করিতে বাধ্য হন। কারণ, তাঁহারা জানেন, সেই অধিকাররক্ষায় তাঁহাদের পার্শ্বে দাঁড়াইবার সামর্থ্য বা ইচ্ছা পুলিশের নাই। কেন তাঁহারা মানুষকে ভরসা জোগাইতে ব্যর্থ, সে বিষয়ে পুলিশবাহিনীর নিশ্চয়ই নিজস্ব যুক্তি আছে। কিন্তু, তাঁহারা রাজ্যের যে ক্ষতি করিয়াছেন, কোনও যুক্তিতেই তাহা ঢাকা পড়িবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police Law Miscreant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE