রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরস বলেছেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার পরিকল্পনার কেন্দ্রে রাখতেই হবে কন্যাশিশু ও মহিলাদের কথা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্ব ব্যাঙ্কের মতো সংস্থাগুলিও কার্যত একই কথা বলছে বারে বারে। এই উদ্বেগ কেন? অতিমারির মতো আর্থসামাজিক অনিশ্চয়তার আবহ বিশ্ব জুড়েই মহিলা ও কন্যাশিশুদের ওপর অনেক গুরুতর ও সুদূরপ্রসারী আঘাত হানে, সমাজ সংসারে লিঙ্গবৈষম্য বাড়িয়ে তোলে এক লাফে অনেক গুণ।
২০১৪ সালে ইবোলা সংক্রমণ, ২০১৫-১৬’র জ়িকা ভাইরাসের আক্রমণ, বা সাম্প্রতিক সার্স ভাইরাস, সোয়াইন ফ্লু বা বার্ড ফ্লু-তে আক্রান্ত অঞ্চলগুলিতে দেখা গিয়েছিল, মহামারির ধাক্কায় প্রাথমিক ভাবে সবার আর্থিক অবনতি হলেও, পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের আয় স্বাভাবিক স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সময় লেগে যায় ঢের বেশি। মহিলাদের গর্ভকালীন জটিলতাজনিত বা অন্যান্য সংক্রামক ব্যাধিজনিত মৃত্যুহার যেমন সাধারণ অবস্থার থেকে অনেক গুণ বেড়ে যায়, বাড়ে গার্হস্থ্য হিংসার ঘটনাও। মহিলাদের গার্হস্থ্য শ্রমের পরিমাণও অনেক গুণ বাড়ে। আবার সংক্রমণ-উত্তর সময়ে বাল্যবিবাহ, কুমারীমাতৃত্ব তথা নারী অপুষ্টির মতো বিষয়গুলি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
ইনস্টিটিউট ফর উইমেন’স পলিসি রিসার্চ-এর গবেষণা অনুযায়ী, এ বছর এপ্রিলে মহিলারা কাজ হারিয়েছেন পুরুষদের তুলনায় তিন গুণ। মেয়েদের প্রাধান্য আছে এমন কিছু ব্যবসাবাণিজ্য, যেমন ভ্রমণ, বা অতিথি-পরিষেবামূলক ব্যবসাগুলি বিপুল ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায়; এবং বিভিন্ন অসংগঠিত মহিলাপ্রধান ক্ষেত্রে যেমন কৃষিকাজ, গেরস্থালির ঠিকে কাজ, ঘরোয়া আয়ার কাজ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিপুল কর্মহ্রাসের ফলে বহু মহিলা উপার্জনের সুযোগ হারিয়েছেন। ইউনেস্কোর পূর্বাভাস বলছে, লকডাউনের জেরে স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলির প্রায় ১১ কোটি ছাত্রীর পড়াশুনা সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ হতে চলেছে। জাতীয় মহিলা কমিশন জানাচ্ছে, লকডাউনের সূচনাকাল থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি অবধি এ দেশে গার্হস্থ্য হিংসার ঘটনা ১০০% বৃদ্ধি পেয়েছে। ইনস্টিটিউট ফর সোশ্যাল স্টাডিজ় ট্রাস্টের গবেষণা অনুযায়ী, মহিলাদের গার্হস্থ্য শ্রমের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৬%।