Advertisement
E-Paper

কুকুর সঙ্কট

নৃশংসতার পরিমাণ সত্যই স্তম্ভিত করিবার মতো। অবশ্য, যে পরিস্থিতিতে এমন নৃশংসতা ঘটিল, তাহাও অবজ্ঞা করিবার মতো নহে। এবং সেখানেই ‘মানবিক’ ঔদাসীন্যের ভূমিকা বিরাট। নতুবা সরকারি হাসপাতাল চত্বরে কুকুর-বিড়ালের এমন সংখ্যাধিক্য, রোগীর শয্যার পার্শ্বে তাহাদের এমন অবাধ বিচরণ ঘটে কী করিয়া?

শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:০০
এসএসকেএম-এ মৃত কুকুরছানাগুলি। —ফাইল চিত্র

এসএসকেএম-এ মৃত কুকুরছানাগুলি। —ফাইল চিত্র

নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে সম্প্রতি যাহা ঘটিয়াছে, তাহা শুধুমাত্র ষোলোটি কুকুরশাবকের কাহিনি নহে। তাহা মানুষের কাহিনি। নিতান্ত ‘মানবিক’ হিংস্রতার কাহিনি। যে ‘মানুষ’ এমন ভয়ঙ্কর অসংবেদনশীল আচরণ করিতে পারে নিরস্ত্র, অসহায়, দুর্বল প্রাণীর উপর, তাহার কাহিনি। নৃশংসতা তো শুধুমাত্র ষোলোটি কুকুরছানাকে বধ করিবার মধ্যেই আবদ্ধ নহে। সাম্প্রতিক ঘটনাটি দৃষ্টান্তমাত্র। আসলে বিভিন্ন মনুষ্যেতর জীব মানুষের নিয়মিত নৃশংসতার শিকার। অদ্ভুত এক আক্রোশ লইয়া তাহাদের পরিকল্পনামাফিক আঘাত, অত্যাচার ও নিধন করা হইতেছে। অথচ এই দেশে পশু অধিকার রক্ষা সংক্রান্ত আস্ত একখানি কেন্দ্রীয় মন্ত্রক রহিয়াছে। আইনও আছে। কিন্তু ‘মানবিক’ হিংস্রতা দমন করিবার ক্ষমতা সেই আইনের নাই। পশুপ্রাণীদেরও যে অধিকার থাকিতে পারে, সেই বোধটিই সম্পূর্ণ হারাইয়াছে ‘মানুষ’ নামক এই শ্রেষ্ঠ জীবটি। প্রসঙ্গত, পশুর ‘অধিকার’ অতি আধুনিক কথা। পূর্বে অধিকারের ধারণাটি ঢাকঢোল পিটাইয়া প্রতিষ্ঠিত ছিল না, পৃথক মন্ত্রকের তো প্রশ্নই ছিল না। অথচ তখনও অবোলা প্রাণীর উপর অত্যাচার যে পাপ— সেই স্বাভাবিক বোধটুকু ছিল। এখন ভারতীয় আইনে অবোলারা স্বীকৃতি পাইয়াছে। কিন্তু পাপবোধ অন্তর্হিত হইয়া মানুষের চোখে তাহাদের স্থানটি নিকৃষ্ট হইতে নিকৃষ্টতর হইয়াছে। এনআরএস-এর ঘটনাটি তাহাই মনে করাইয়া দেয়।

নৃশংসতার পরিমাণ সত্যই স্তম্ভিত করিবার মতো। অবশ্য, যে পরিস্থিতিতে এমন নৃশংসতা ঘটিল, তাহাও অবজ্ঞা করিবার মতো নহে। এবং সেখানেই ‘মানবিক’ ঔদাসীন্যের ভূমিকা বিরাট। নতুবা সরকারি হাসপাতাল চত্বরে কুকুর-বিড়ালের এমন সংখ্যাধিক্য, রোগীর শয্যার পার্শ্বে তাহাদের এমন অবাধ বিচরণ ঘটে কী করিয়া? তাহাদের দাঁত-নখে প্রসূতি, সদ্যোজাতরা আক্রান্ত হয় কী ভাবে? যে রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে যথেষ্ট শয্যার অভাবে বহু রোগী ভূমিশয্যায় থাকিতে বাধ্য হয়, সেখানে তো সংক্রমণের আশঙ্কা হইতেই প্রাণীগুলির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা উচিত ছিল। কিন্তু নিয়ন্ত্রণের জন্য যাহা একান্ত ভাবেই প্রয়োজন, সেই ‘মানবিক’ উদ্যোগ এই রাজ্যের মানুষের কাছে আশা করা যায় না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরের সমন্বয় প্রত্যাশা করা যায় না। বাস্তবিক, ইহা যে একটি গুরুতর সমস্যা এবং বহু রোগীর স্বাস্থ্যের প্রশ্ন যে ইহার সঙ্গে জড়িত, তাহা গুরুত্বই পায় না। আক্রান্ত রোগীদের আতঙ্ক, পরিজনদের ক্ষোভ থামিয়া গেলেই কুকুরবিড়ালদের সঙ্গে রোগীরা নিজেরা জুঝিয়া লইবেন, এই ব্যবস্থায় ফিরিতে হয়। অথচ যথার্থ ব্যবস্থা করা হইলে এনআরএস-এর ঘটনা ঘটিবার মতো পরিস্থিতির জন্মই হইত না।

প্রসঙ্গত, এখনও অবধি সারমেয়দের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করিবার প্রচলিত উপায়গুলি যথেষ্ট সংবেদনশীল নহে। অবৈজ্ঞানিক উপায়ে নির্বীজকরণ অথবা নির্মম হত্যা— কোনওটিই ‘সভ্য’ সমাধান নয়। বিকল্প পথ খুঁজিবার দায়িত্বটি থাকিয়াই যায়। কিন্তু বিকল্প পথ হাতের কাছে নাই বলিয়া নৃশংস ভাবে তাহাদের হত্যা করিতে হইবে, এই কথাও মানা যায় না। মানুষ-কুকুর বিরোধ কমাইবার আগাম ব্যবস্থাটি জরুরি ভিত্তিতে ভাবা দরকার।

NRS Hospital Violence Puppies
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy