Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ১

বিস্ফোরণ বার্তা

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্যই তাঁহার স্বভাবসিদ্ধ মূঢ়তায় সপাট বলিয়া দিয়াছেন, তাঁহার হাতে তিন অস্ত্র: সোজাসুজি সামরিক অভিযান, চিনকে শাস্তিদান এবং কূটনৈতিক কথোপকথন। তিনি বোধহয় অনুধাবন করেন নাই যে তিনটি অস্ত্রই বেদম ভোঁতা।

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

শক্তিশালী হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণ ঘটাইয়া যিনি বলেন উপহারের উপঢৌকন পাঠাইলাম, আর বলেন, আরও উপহার আসিতে চলিয়াছে নিকট ভবিষ্যতেই, তেমন এক রাষ্ট্রনেতাকে লইয়া বিশ্বদুনিয়ার করণীয় কী? আপাতত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হইতে রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী পুতিন, সকলেই এই ভাবনায় পর্যুদস্ত। সত্যই যুদ্ধ বাধাইয়া দেওয়া যায় না, কিন্তু উত্তর কোরিয়ার মাথায় বসিয়া কিম জং উন এই মুহূর্তে যুদ্ধ বাধাইবার জন্য রীতিমত পীড়াপীড়ি করিতেছেন বলিলে ভুল হয় না। উত্তর কোরিয়ার পরমাণু বোমার আকস্মিক পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণের চোটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও নড়িয়াচড়িয়া বসিতেছে, মুখে সাহসিক বুলি কপচাইলেও চিন্তার ভাঁজ মার্কিন প্রতিনিধিদের কথায় ধরা পড়িতেছে। স্বাভাবিক। উত্তর কোরিয়ার হুমকি, আমেরিকার ভূখণ্ড তাঁহাদের ক্ষেপণাস্ত্রের সাক্ষাৎ নাগালের মধ্যে, সুতরাং কোনও কথা নয়! প্রসঙ্গত, রবিবারে উৎক্ষিপ্ত হাইড্রোজেন বোমার ক্ষমতা ছিল ৫০ কিলো টন, অর্থাৎ হিরোশিমায় আমেরিকার ফেলা বোমা হইতে অন্তত তিনগুণ বেশি শক্তিশালী। বারংবার বারণ, হুমকি, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষেধাজ্ঞা, একমাত্র শুভৈষী দেশ চিনের পক্ষ হইতে একাধিক সতর্কবার্তা কিছুই যেখানে কাজ করিতেছে না, সেখানে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হওয়া সংগত, বিশ্বের প্রধান দেশগুলি এই লইয়া মস্তক-কন্ডূয়নে ব্যস্ত, কিন্তু উপায় এখনও ঠাহর হয় নাই।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্যই তাঁহার স্বভাবসিদ্ধ মূঢ়তায় সপাট বলিয়া দিয়াছেন, তাঁহার হাতে তিন অস্ত্র: সোজাসুজি সামরিক অভিযান, চিনকে শাস্তিদান এবং কূটনৈতিক কথোপকথন। তিনি বোধহয় অনুধাবন করেন নাই যে তিনটি অস্ত্রই বেদম ভোঁতা। সামরিক অভিযান যদি সমাধান হইত, তবে সংকট এত গভীর হইত না। এমনকী সার্জিক্যাল স্ট্রাইকও উত্তর কোরিয়ায় বাস্তবসম্মত নহে। আক্রমণের আগে প্রথম কাজ, হয় জাপান, নয় দক্ষিণ কোরিয়া, নতুবা ওই অঞ্চলে মার্কিন বন্ধু এই দুই দেশকেই মার্কিন প্রস্তাবে রাজি করাইয়া তাহাদের সহযোগিতা কামনা। অথচ এমন প্রস্তাবে দুই দেশের কেহই রাজি হইবে না, কেননা তাহারাই পিয়ংইয়ং-এর মিসাইলের সন্নিকটে। কী জাপান, কী দক্ষিণ কোরিয়া, গোটা গোটা দেশ মানচিত্র হইতে মুছিয়া যাইতে পারে কিম জং উনের একটি সিদ্ধান্তের ধাক্কায়। পিয়ংইয়ংকে কথোপকথনে রাজি করানো এত দিন অসম্ভব থাকিয়াছে, আজও কোনও আশা নাই। আর পুতিন ঠিক বলিয়াছেন, নিষেধাজ্ঞা বস্তুটি একেবারে এলেবেলে হইয়া পড়িয়াছে।

বাকি রহিল চিনকে জুতা মারিয়া পিয়ংইয়ংকে শিক্ষা দেওয়া। ট্রাম্প ইহা ভাবিতেই পারেন, কিন্তু হোয়াইট হাউসে আর কেহ কি এই অর্বাচীনতায় কালক্ষেপ করিতেছেন? প্রথমত, চিনের সহিত সরাসরি টক্করে নামিবার আন্তর্জাতিক জোর আমেরিকার এই মুহূর্তে নাই। দ্বিতীয়ত, কয়েক মাস ধরিয়া চিন বার বার পিয়ংইয়ংকে সংযত হইবার উপদেশ দিয়াছে, বৃথা উপদেশ! বস্তুত, পিয়ংইয়ং-এর গত তিনটি বিস্ফোরণের সময় খেয়াল করিলে বোঝা যায়, প্রতিটির সহিত চিনের একটি যোগ আছে, চিন যখনই বড় কোনও আন্তর্জাতিক বৈঠকে নেতৃত্ব দিয়াছে, উত্তর কোরিয়া বিস্ফোরণ ঘটাইয়াছে। উদাহরণ: গত বছরের সেপ্টেম্বরে জি-২০ বৈঠক, গত মে মাসের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড বৈঠক, এবং এই সেপ্টেম্বরের সদ্য-সমাপ্ত ব্রিকস বৈঠক। ইহার প্রকৃত মর্মার্থ দুই ‘মিত্র’ দেশই বলিতে পারিবে। বাহির হইতে শুধু দ্রষ্টব্য, ব্রিকস বৈঠকের সমাপনী ভাষণে উত্তর কোরিয়া বিষয়ে নীরব থাকাই শ্রেয় মনে করিয়াছে বেজিং। বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তর কোরিয়াকে চিন সংযত হইবার বার্তা দিতেছে বলিয়াই এই উপর্যুপরি প্রতি-বার্তা! এহেন পরিস্থিতিতে বেজিংকে চাপ দিয়া কোনও লাভ আছে কি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE