Advertisement
০২ মে ২০২৪

স্বাতন্ত্র্যের শক্তি

মা দ্রাজ হাই কোর্ট রায় দিয়াছে, সকল চাষির কৃষিঋণ মকুব করিতে হইবে রাজ্য সরকারকে। আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রাখিয়াও এই রায় সম্পর্কে প্রশ্ন তুলিতে হয়, কৃষিঋণ মকুব করিবার সিদ্ধান্তটি কি একান্তই প্রশাসন বা আইনসভার বিচার্য নহে?

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

মা দ্রাজ হাই কোর্ট রায় দিয়াছে, সকল চাষির কৃষিঋণ মকুব করিতে হইবে রাজ্য সরকারকে। আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রাখিয়াও এই রায় সম্পর্কে প্রশ্ন তুলিতে হয়, কৃষিঋণ মকুব করিবার সিদ্ধান্তটি কি একান্তই প্রশাসন বা আইনসভার বিচার্য নহে? তাহা কি আদালতের বিচার্য হইতে পারে? খুব বেশি হইলে খরাপীড়িত চাষিদের স্বার্থরক্ষার প্রতি রাজ্য সরকারকে সজাগ থাকিতে আদালতের নির্দেশ দেওয়ার কারণ থাকিতে পারে, কিন্তু কী প্রকারে সেই স্বার্থরক্ষার কাজটি করিতে হইবে, তাহা শাসনবিভাগেরই বিবেচ্য। প্রশাসন যদি নাগরিকের উপর কোনও অবিচার করিয়া থাকে, আইন কিংবা বিধির অপপ্রয়োগ করিয়া থাকে, সাংবিধানিক আদর্শ বা নীতির বিপরীতে গিয়া কোনও নির্দেশ দিয়া থাকে, আদালত অবশ্যই প্রশাসনের তেমন সিদ্ধান্ত খারিজ করিতে পারে। আর্ত ব্যক্তিকে পানীয় জল, খাদ্য বিতরণের মতো নির্দেশও আদালত দিয়া থাকে, যে হেতু তাহা জীবনের অধিকারের সহিত সরাসরি যুক্তি। সংবিধান যে বিষয়গুলিকে মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দিয়াছে, যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা রোজগার নিশ্চয়তা, সেগুলি লঙ্ঘিত হইলেও আদালত তাহার প্রতিকার করিতে নির্দেশ দিয়া থাকে প্রশাসনকে।

কিন্তু কৃষি ঋণ মকুবের বিষয়টি কি এমন কোনও যুক্তিতেই সিদ্ধ হইতে পারে? ঋণ লইয়া থাকিলে শোধ করিতে হইবে, ইহাই সাধারণ নিয়ম। অতএব অধিকারভঙ্গের প্রসঙ্গ এখানে নাই। আবার ঋণ মকুবের নির্দেশকে সত্বর ত্রাণ সরবরাহের নির্দেশের সহিত এক করিয়া দেখা চলে না। খরাগ্রস্ত চাষিকে বাঁচাইতে এখনই ঋণ মকুব করিতে হইবে, এমন নহে। ঋণ তৎক্ষণাৎ শোধ করিতে হয় না। বিশেষত কৃষিঋণের সময়সীমা দীর্ঘ, তাহা আরও নমনীয় করিবার সুযোগও রহিয়াছে। অনেক ক্ষেত্রেই সুদ মাফ করিয়া, ঋণ শোধের সময় বাড়াইয়া, পরবর্তী ঋণের সহিত পূর্বের ঋণ জুড়িয়া ক্রমে শোধ করিবার ব্যবস্থা করিয়া ব্যাঙ্ক ও সমবায় চাষিদের সুবিধা করিয়া দেয়। পানীয়-খাদ্য সরবরাহের বিকল্প নাই, বিলম্বের উপায়ও নাই, কিন্তু ঋণ মকুবের নানা বিকল্প রহিয়াছে। তাহার মধ্যে কোনটি সর্বাধিক কার্যকর হইবে, তাহা স্থির করা সরকার ও ব্যাঙ্কের কাজ। লক্ষণীয়, তামিলনাড়ু সরকার ইতিমধ্যেই ছোট চাষিদের কৃষিঋণ মাফ করিয়াছে। সকল চাষির জমির খাজনা মকুব করিয়াছে।

এই সূত্রে একটি গভীরতর প্রশ্ন উঠিতে পারে। সকল সমস্যাই রাষ্ট্র বনাম নাগরিক অধিকারের বিষয় নহে। বহু ক্ষেত্রে নানা স্বার্থের সামঞ্জস্য সাধন করিয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতে হয়। বাস্তব পরিস্থিতিও বুঝিবার প্রয়োজন হইতে পারে। যেমন, গত মাসে সুপ্রিম কোর্ট কর্নাটককে নির্দেশ দিয়াছিল তামিলনাড়ুর জন্য দৈনিক দু’হাজার কিউসেক জল ছাড়িতে। কর্নাটক জানাইয়াছে, জলাভাবের জন্য সেই নির্দেশ পালন সম্ভব নহে। প্রশ্ন ওঠে, এমন পরিস্থিতিতে কি নির্দেশের বাস্তবসম্মতি আরও গভীর ভাবে বিবেচনার প্রয়োজন নাই? তেমন বিবেচনাই কিন্তু বিচারপ্রক্রিয়ার যৌক্তিকতাকে দৃঢ়তর করিয়া তুলিতে পারে। বিচারব্যবস্থার স্বাতন্ত্র্য সেই বিবেচনার পক্ষেও জরুরি। ওই স্বাতন্ত্র্যই তাহার শক্তি। জনস্বার্থ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু শাসনকাঠামোর চরিত্রবিভ্রাট শেষ বিচারে জনস্বার্থের প্রতিকূল হইতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Individual Power
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE