এত দিনে জানা গেল, হরধনু কে ভাঙিয়াছেন। প্রচলিত রঙ্গকাহিনির ছাত্রটি নহে, ভাঙিয়াছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তিনি রাবণ-বধের কেরদানি দেখাইতে গিয়াছিলেন। কিন্তু তাহা লইয়া হাসিবার কী আছে? মানুষটির শ্বাস ফেলিবার সময় নাই, দেশবাসীর অর্থে সমগ্র দুনিয়া ঘুরিয়া বেড়াইতেছেন, জমকালো পোশাক পরিয়া সাহেবদের সম্মুখে নিরামিষ খাইবার সংযম ও স্পর্ধা প্রদর্শন তাঁহার অভ্যাস ও অহংকার, তাহারই মধ্যে ভাবিয়া বাহির করিতেছেন, কোন আশ্চর্য ঘোষণায় দেশকে পুনরায় তাক লাগাইয়া দিতে পারিবেন, ইহার পরেও লোকে তাঁহার নিকট অতিরিক্ত লক্ষ্যভেদ আশা করিতেছে? ছাপ্পান্ন ইঞ্চি ছাতি রক্ষার্থে তাঁহাকে নিয়মিত যোগাসন করিতে হয়, প্রাচীন প্লাস্টিক সার্জারির ইতিহাস রচনার্থে তাঁহাকে রাত জাগিয়া পুরাণ বিশ্লেষণ করিতে হয়, তাহার পরেও মানুষ তাঁহার নিকটে খুচরো যথাযথতা দাবি করে? তাহা ব্যতীত তাঁহার এমন দুরন্ত উপস্থিত বুদ্ধি, ধনুকটি ভগ্ন হওয়ামাত্র শরটিকে বর্শার মতো করিয়া ছুড়িয়া দিয়াছেন। নিন্দুক বলিবে, শর কখনওই বর্শা নহে, ইহার কাজ উহাকে দিয়া করাইতে গেলে লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়া অনিবার্য। এইগুলি অনাধুনিক মন্তব্য। আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি বলে, লক্ষ্যভেদ বড় কথা নহে, বড় কথা হইল ব্যর্থতার পরেও গণমাধ্যমের সম্মুখে সপ্রতিভ থাকা। বড় কথা, ভুজুংভাজুং ও সমর্থকদের চিৎকার দিয়া অবিশ্বাসীদের কলরোল ঢাকিয়া প্রমাণ করা, সব ঠিক চলিতেছে। রাবণ অবশ্যই বিদ্ধ হইবে। তাহার জন্য জ্যা-রোপণও প্রয়োজন নাই, নিখুঁত দৃষ্টি ও মনোযোগও অবান্তর, প্রয়োজন কেবল কায়দা ও কেরামতি, বীরত্বব্যঞ্জক হুংকার।
ইহার পূর্বে তিনি বিমুদ্রাকরণের মাধ্যমে ইতিহাস স্থাপন করিয়াছেন। লোকে তাঁহার নাটকীয় সাহসের প্রশস্তিতে মথিত হইয়া এটিএম-এ লাইন দিয়াছে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠায় দাঁড়াইয়া নিজ কষ্টের সমানুপাতে দেশের উন্নতি মাপিয়াছে, এমনও দেখা গিয়াছে যে, দেশবাসী সম্মুখে ধুঁকিয়া মরিতেছে, তাহাকে জল দিতে গিয়া কেহ লাইনে নিজ স্থান নষ্ট করে নাই, পাছে কোনও দুষ্ট ধনীর কালো টাকা বাঁচিয়া যায়। আজ যখন বহু পণ্ডিত পরিসংখ্যান হানিয়া বলিতেছেন এই কার্য বিনা পরিকাঠামোয় সমাধা করিতে গিয়া মোদী সকলটি পণ্ড করিয়াছেন, তখনও সাধারণ লোক তাঁহাকে দুষিতেছেন না। কারণ, তাড়াহুড়া করিতে গিয়া ধনুক ভাঙিতেই পারে, তাহাতে শরসন্ধানের সদিচ্ছাকে প্রশ্ন করা যায় না। যে দেশে বারংবার সতর্কীকরণ সত্ত্বেও স্টেশনে ফুটব্রিজগুলি প্রশস্ত করিবার কথা কাহারও মনে পড়ে না আর পদপিষ্ট হইয়া মানুষ মরিয়া যায়, সেই দেশে বুলেট ট্রেন চালাইবার জন্য কতটা দূরদর্শিতা প্রয়োজন, তাহা কি আমজনতা বুঝিবে? শরের অন্তিম লক্ষ্য কী, ইহা ভাবিতে হইবে। ধনুকটি যদি তাহার পক্ষে যথেষ্ট না হয়, তবু সেই অবাস্তব নিশানার প্রতি আন্তরিক লম্ফ দিতে হইবে, ‘আকাঙ্ক্ষায় চড়িয়া ঠিক তরিয়া যাইব’ বিশ্বাসে প্রাণপণ অপটু টানিয়া জ্যা রোপণ করিতে যাইতে হইবে। অবধারিত মটাৎ-টিকে পাত্তা দিলে চলিবে না। ধনুক মজবুত করিবার, রণকৌশল ঠিক করিবার, নিজ অগ্রাধিকার নিজ ক্ষমতা সম্পর্কে সমীক্ষা করিবার বহু সমস্যা। আসল কথাটি বাস্তব নহে, বিজ্ঞাপন। পরিকল্পনা নহে, কল্পনা। কল্পস্বপ্নে চড়িয়া অচ্ছে দিন আসিয়া গেলে, কয়েকটি অচ্ছে ধনু সস্তায় কিনিলেই চলিবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy