Advertisement
১১ মে ২০২৪
Iron Factory

দ্রুত দূষণে লাগাম টানার দাবি উঠছে

স্পঞ্জ আয়রন উৎপাদনে ভারত প্রথম স্থানে রয়েছে। কিন্তু স্পঞ্জ আয়রন কারখানার বিরুদ্ধে দূষণ ছড়ানোর নানা অভিযোগ উঠেছে। লিখছেন উৎপল পাতর স্পঞ্জ আয়রন কারখানা নিয়ে নানা গবেষণাধর্মী লেখায় দাবি করা হয়েছে, দূষণের মাত্রায় এই কারখানাগুলি ‘রেড ক্যাটিগরি’-র অন্তর্ভুক্ত। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে বিশ্বের বেশিরভাগ প্রান্তে স্পঞ্জ আয়রন কারখানায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় প্রাকৃতিক গ্যাস।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২০ ০২:২১
Share: Save:

গত কয়েক দশকে ভারতে স্পঞ্জ আয়রনের উৎপাদনের পরিমাণ লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। এই আয়রন উৎপাদনে ভারত প্রথম স্থানে রয়েছে। ২০০৩ সাল থেকেই ভারত প্রথম স্থানে রয়েছে। ২০১৯ সালে ভারতে মোট তিন কোটি ৪০ লক্ষ মেট্রিক টন স্পঞ্জ আয়রন উৎপাদন হয়েছে। গোটা বিশ্বে উৎপন্ন স্পঞ্জ আয়রনের প্রায় ২০ শতাংশের উৎপাদক ভারত। কিন্তু ভারতে স্পঞ্জ আয়রন কারখানার সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে দূষণের সমস্যাও। ২০০৫ সালে ভারত সরকারের ইস্পাত দফতরের ‘জয়েন্ট প্ল্যান্ট কমিটি’র একটি সমীক্ষায়ই দেখাচ্ছে সারা ভারতে প্রায় ৩৩০টি স্পঞ্জ আয়রন কারখানা রয়েছে। পরিবেশ কর্মীদের অভিযোগ, স্পঞ্জ আয়রনের থেকে দূষণের সমস্যা বর্তমানে তীব্র আকার ধারণ করেছে। যার প্রভাবে ব্যাহত হচ্ছে শহরাঞ্চল ও কারখানার লাগোয়া এলাকার বাস্তুতন্ত্র।

স্পঞ্জ আয়রন কারখানা নিয়ে নানা গবেষণাধর্মী লেখায় দাবি করা হয়েছে, দূষণের মাত্রায় এই কারখানাগুলি ‘রেড ক্যাটিগরি’-র অন্তর্ভুক্ত। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে বিশ্বের বেশিরভাগ প্রান্তে স্পঞ্জ আয়রন কারখানায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় প্রাকৃতিক গ্যাস। কিন্তু সেখানে ভারতের কারখানাগুলিতে জ্বালানি হিসেবে কয়লাই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। গবেষকদের দাবি, এর জেরে পরিবেশ দূষণের সমস্যা অনেকটাই বেড়েছে। কারখানায় বিষাক্ত বর্জ্য উৎপাদনের জেরে বাড়ছে জলদূষণের সমস্যাও। পরিসংখ্যান বলছে, স্পঞ্জ আয়রন কারখানার আশপাশের এলাকায় বায়ুদূষণের কারণে গত কয়েক দশকে অ্যাজমা, অ্যালার্জি, ফুসফুসের নানা অসুখ বেড়েছে। এ নিয়ে সক্রিয় হয়েছে সরকারও। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি খুব একটা পাল্টায়নি বলে অভিযোগ পরিবেশবিদদের। আসানসোল শিল্পাঞ্চলে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় শতাধিক এই ধরনের কারখানা রয়েছে। সালানপুর ও কুলটি অঞ্চলের দেন্দুয়া, ন্যাকড়াজোড়িয়া ও কল্যাণেশ্বরী এলাকায় বেশ কয়েকটি কারখানা রয়েছে। পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ব্লকের নিতুড়িয়া, সাঁতুড়ি, পাড়া ব্লকেও রয়েছে কয়েকটি স্পঞ্জ আয়রন কারখানা। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি কারখানার সম্পর্কে বারবার অভিযোগ করেছেন পরিবেশবিদেরা। আসানসোলের পরিবেশকর্মীরা জানান, যে সব কারখানা লাগোয়া এলাকায় ধান ও গমের চাষ হয়, সেখানে রাসায়নিক মিশ্রিত জল ও দূষিত ধোঁয়া ফসলের ক্ষতি করে। ক্ষতি হচ্ছে বাসিন্দাদেরও। আসানসোলের দেবীপুর, লছমনপুর, কাদভিটা গ্রামে এই সমস্যা রয়েছে বলে জানান তাঁরা। পরিবেশকর্মীদের দাবি, কারখানায় বিষাক্ত ধোঁয়াকে পরিশোধন করার জন্য ‘ইলেকট্রনিক স্ট্যাটিক প্রেসিপিটেটর’ (ইএসপি) ব্যবস্থা ব্যবহার করাই নিয়ম। কিন্তু পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ খরচের ভয়ে কর্তৃপক্ষ তা ব্যবহার করেন না। অনেক সময়ে উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক কর্তারা কারখানা পরিদর্শনে গেলে ইএসপি যন্ত্রটি চালু করা হয়। প্রশাসনিক আধিকারিকেরা ফিরে গেলে আবার ইএসপি যন্ত্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

পরিবেশকর্মী হরিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায়, পরিবেশবিদ সুভাষ দত্তের মতে, অবিলম্বে এ বিষয়ে পদক্ষেপ করা না হলে আগামী দিনে স্পঞ্জ আয়রন কারখানা লাগোয়া এলাকায় বায়ুদূষণ আরও বাড়বে। ফলে নানা রোগও বাড়বে। বায়ুর দূষণের পাশাপাশি, অভিযোগ রয়েছে জলদূষণ নিয়েও। আসানসোলের পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, এই অঞ্চলের কারখানাগুলির বর্জ্য জল কল্যাণেশ্বরী মন্দির লাগোয়া এলাকায় হয়ে গিয়ে পড়ছে বরাকর নদীতে। এর জেরে জলজ প্রাণীর ক্ষতি হচ্ছে। দূষণের জেরে বাড়ছে হাঁপানি ও চর্মরোগও। গবেষকেরা জানান, বরাকরের জল অনেকে ব্যবহার করেন। এই জল গবাদি পশুও ব্যবহার করে। এবং তাদের মধ্যে নানা রোগের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর মহকুমাতেও কারখানায় স্থানীয় জলসম্পদ ব্যবহার করা হয় বলে জানান সেখানকার বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, বর্জ্য জলের জেরে দূষিত হচ্ছে এখানকার জলাশয়গুলি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, রঘুনাথপুরে কারখানার বর্জ্য জল ও উড়ে আসা ছাই পুকুরের উপরে পড়ে তৈরি হচ্ছে এক ধরনের আস্তরণ। পুকুরের জলের উপরের স্তরের এই আস্তরণের জেরে এলাকায় চর্মরোগের প্রকোপ বাড়ছে।

যদিও একটি স্পঞ্জ আয়রন কারখানার মালিক অরুণ আগরওয়ালের দাবি, দূষণ রোধ তারা ব্যবস্থা নেন। সব কারখানাতেই ‘ইএসপি’ ব্যবস্থা রয়েছে। দূষিত ধোঁয়াকে পরিশোধন করে চিমনির মাধ্যমে বের করা হয়। আসানসোলের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আধিকারিক স্বরূপ মণ্ডল বলেন, ‘‘কারখানাগুলিতে নিয়মিত পরিদর্শন হয়। যদি কেউ অভিযোগ জানান, তবে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হবে।’’ পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, ‘‘অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Iron Factory Pollution Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE