Advertisement
E-Paper

পুরস্কারের পথ

অ পরাধ নিবারণে শাস্তি জরুরি, কিন্তু যথেষ্ট নহে। লালবাজার তাহার অভিজ্ঞতা হইতে প্রবাদবাক্যটি হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করিয়াছে। অভিজ্ঞতা, শহরে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত।

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৭ ০০:০০

অ পরাধ নিবারণে শাস্তি জরুরি, কিন্তু যথেষ্ট নহে। লালবাজার তাহার অভিজ্ঞতা হইতে প্রবাদবাক্যটি হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করিয়াছে। অভিজ্ঞতা, শহরে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত। কলকাতার রাস্তায় দুর্ঘটনা ক্রমবর্ধমান। এবং তাহা লালবাজারের বিস্তর দুশ্চিন্তার কারণ। ইহা কমাইবার জন্য কড়া ট্র্যাফিক আইন চালু করিয়া দোষী চালকের উপর জরিমানার অঙ্ক বৃদ্ধি-সহ নানা শাস্তি চাপাইবার প্রস্তাব করা হইয়াছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গিয়াছে, দুর্ঘটনা তাহাতে যথেষ্ট কমে নাই। সুতরাং, শাস্তির পাশাপাশি লালবাজার এখন পুরস্কার প্রদানের কথা ভাবিতেছে। কেমন সেই পুরস্কার? এক বৎসর কোনও ট্র্যাফিক আইন অমান্য না করিলে গাড়ির এক বৎসরের বিমা মকুবের প্রস্তাব দেওয়া হইয়াছে। আশা, ইহাতে উৎসাহিত চালক বাড়তি সতর্ক হইবেন।

প্রস্তাবটি তাৎপর্যপূর্ণ। কলিকাতা পুলিশ তথা রাজ্য প্রশাসন এতদ্দ্বারা মনে করাইয়া দিয়াছে যে, শাস্তির একটি বিপরীত শব্দও আছে। পুরস্কার। কার্যক্ষেত্রে যাহার ব্যবহার ক্রমশ কমিতেছে। কারণ, প্রচলিত ধারণা, এক বার শাস্তি পাইলে দ্বিতীয় বার সেই কাজটি করিতে সে বিরত থাকিবে। সেই কারণে অপরাধীকে, বিশেষত যে স্বভাবতই অপরাধপ্রবণ, তাহাকে শাস্তি দিবার ক্ষেত্রে যে বিপুল উৎসাহ দেখা যায়, তাহার বিন্দুমাত্র নজরে পড়ে না ভাল কাজ করিলে তাহাকে পুরস্কৃত করিবার ক্ষেত্রে। ইহা শুধুমাত্র গাড়ির চালকদের ক্ষেত্রে নহে, সমাজের সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ক্লাসের দুষ্টু ছাত্রটির কপালে তিরস্কার ব্যতীত বিশেষ কিছুই জোটে না। পুরস্কার তো বরাদ্দ যাহারা ‘ভাল’ ছাত্র বলিয়া প্রমাণিত, তাহাদের জন্য। অথচ, তুলনায় কম ভাল, পিছাইয়া পড়াদের ক্ষেত্রে সামান্য উৎসাহ, পুরস্কার বা প্রশংসা অনেক কিছুরই বদল ঘটাইতে পারে। এই ‘পরিবর্তন’-এর চেষ্টার এক উল্লেখযোগ্য নিদর্শন সংশোধনাগারগুলি। ‘জেলখানা’ হইতে ‘সংশোধনাগার’-এ উত্তরণ শুধুমাত্র নামের ক্ষেত্রেই হয় নাই। বিভিন্ন কাজ এবং পুরস্কারের মাধ্যমে অপরাধীদের সেখানে স্বীয় ‘অপরাধ’-এর বাহিরের দুনিয়াটিও দেখানো হয়, যাহাতে কালক্রমে সে নিজেই নিজের পরিবর্তন ঘটাইবার চেষ্টা করিতে পারে। এই নীতিটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

সংশোধনাগারের উদাহরণ হইতে বলা চলে, পরিবর্তনের জন্য শাস্তি এবং পুরস্কার উভয়েরই প্রয়োজন। শুধুই শাস্তি দিবার মানসিকতাটি আসলে বাহির হইতে এক ধরনের ভয় দেখাইবারই নামান্তর, যাহার লক্ষ্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তুলনায় দুর্বল এবং ক্ষীণকণ্ঠ। ইহার অর্থ অবশ্য এমন নহে যে, ভয় অপ্রয়োজনীয়। ভয়েরও প্রয়োজন আছে, বিশেষ করিয়া আইনশৃঙ্খলা সুষ্ঠু ভাবে বজায় রাখিতে হইলে তো বটেই। কিন্তু ক্রমাগত ভয় দেখাইবার প্রবণতার মধ্যে অনেক সময় এক ধরনের অত্যাচারী মানসিকতার প্রতিফলন প্রকট হইয়া ওঠে। পরিশেষে ইহা শাস্তিদাতার মানসিক অসুখকে নিশ্চিত করিবার কাজটি ভিন্ন অন্য কিছুই করিতে পারে না, অপরাধ কমাইতে তো নয়ই। কারণ, অপরাধ হইতে নিজেকে দূরে রাখা অর্থাৎ আত্মনিয়ন্ত্রণের কাজটি বাহির হইতে হয় না। ইহা অন্তরের উপলব্ধিমাত্র। ঠিক এইখানেই পুরস্কারের প্রয়োজন। উৎসাহ এবং পুরস্কার ভিতরের উপলব্ধিটুকু আঁচে বাতাস দেয়। লালবাজার সেই সত্যটি ধরিতে পারিয়াছে। আশার কথা।

punishment Prize
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy