Advertisement
E-Paper

দহন

ক্যামেরাতে ধরা পড়িয়াছে, সরকারি বার্ন ইউনিটগুলির ‘জীবাণুমুক্ত’ ঘরের দরজা উন্মুক্ত, সেখানে দাঁড়াইয়া মার্জার। অন্য দিকে, বেসরকারি হাসপাতালের অনেকগুলিতেই বার্ন ইউনিট নাই।

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৮ ০০:০০

দহনক্ষত কত যন্ত্রণাদায়ক, তাহা কাহারও না বুঝিবার কথা নহে। তাহা হইলে যন্ত্রণার উপশম ও চিকিৎসার ব্যবস্থা এমন অকুলান কেন? দগ্ধ রোগীদের সংক্রমণ হইতে বাঁচাইতে বিশেষ পরিচর্যার প্রয়োজন। জীবাণুমুক্ত পরিবেশ এবং সতর্ক শুশ্রূষার জন্য পৃথক ‘বার্ন ইউনিট’ থাকিবার কথা প্রধান হাসপাতালগুলিতে। কিন্তু কলিকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলিতে হয় বার্ন ইউনিট নাই, অথবা থাকিলেও শয্যা অপ্রতুল। অবস্থা এমনই যে, রাজ্যের শীর্ষস্থানীয় হাসপাতাল এসএসকএম হইতে দগ্ধ রোগীকে পাঠানো হইয়া থাকে অন্যত্র। ক্যামেরাতে ধরা পড়িয়াছে, সরকারি বার্ন ইউনিটগুলির ‘জীবাণুমুক্ত’ ঘরের দরজা উন্মুক্ত, সেখানে দাঁড়াইয়া মার্জার। অন্য দিকে, বেসরকারি হাসপাতালের অনেকগুলিতেই বার্ন ইউনিট নাই। কখনও ‘জায়গা নাই’, কখনও ‘অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা নাই’ বলিয়া দায় এড়াইতেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অগ্নিদগ্ধ বা অ্যাসিড-আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা কঠিন ও সময় সাপেক্ষ, ফলে ব্যয় সাপেক্ষও বটে। অনেক ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনও হয় না। ফলে জটিল অস্ত্রোপচারের রোগীর তুলনায় দগ্ধ রোগী হইতে হয়তো হাসপাতালের রোজগারের সম্ভাবনা কম। কিন্তু ‘ব্যবস্থা নাই’ বলিয়া তাহাকে ফিরাইয়া দেওয়া কি অনৈতিক নহে? বেসরকারি হাসপাতালকে ব্যবসা করিতে হইবে। কিন্তু যন্ত্রণাবিদ্ধ রোগীর দায় এড়াইলে চলিবে কেন?

বেসরকারি হাসপাতালও দেশের সরকারের নিকট নানা সুবিধা লাভ করে। যাহাতে রাজ্যবাসীর উপকার হয়, উন্নত পরিষেবা মিলিতে পারে, সেই উদ্দেশ্যে সরকার তাহাদের সহায়তা করে। অতএব তাহাদের নিকট সকল প্রকার আপৎকালীন চিকিৎসা পাইবার অধিকার রাজ্যবাসীর আছে। দগ্ধ রোগীর চিকিৎসা একটি গুরুত্বপূর্ণ জনপরিষেবা। ভারতে প্রতি বৎসর প্রায় সত্তর লক্ষ মানুষ দগ্ধ হইয়া থাকে। প্রায় দেড় লক্ষের মৃত্যু হয়। দেশগুলিতে, বিশেষত দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে মানুষ দগ্ধ হন অধিক। দহনে আক্রান্তদের অধিকাংশ মহিলা ও শিশু। দেশের প্রায় সকল হাসপাতালে পুরুষের তুলনায় মহিলাদের জন্য অধিক শয্যা বরাদ্দ থাকে ‘বার্ন ইউনিট’গুলিতে। ভারতে মেয়েদের অকালমৃত্যুর এক প্রধান কারণ পারিবারিক হিংসার কারণে অগ্নিসংযোগ, রন্ধনশালায় দুর্ঘটনা, এবং আত্মহত্যা। ইহা নূতন কথা নহে। কিন্তু পরিবারের সন্ত্রাসের উপর চিকিৎসা পরিষেবার উদাসীনতা যোগ হইলে তাহা কত দূর প্রাণান্তকর হইতে পারে, বুঝিতে দগ্ধ তরুণীর শয্যাপার্শ্বে দাঁড়াইতে হইবে।

কেন ‘বার্ন ইউনিট’ তৈয়ারিতে সরকারের এমন অনাগ্রহ? সম্ভবত তাহার কারণ পরিষেবার মূল্যায়নে অতিরিক্ত সূচক-নির্ভরতা। উন্নয়নের পরিমাপ করিতে গেলে মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু, সংক্রামক রোগে মৃত্যু প্রভৃতি কয়েকটি সূচক বিচার করা হয়। রাজ্য সরকারগুলি তাহাদের তৎপরতা ও উৎকর্ষ বুঝাইতে এই সূচকগুলির মান উন্নত করিতে যথাসাধ্য ব্যয় করে, অপরাপর পরিষেবাগুলি উপেক্ষিত হয়। দগ্ধ রোগী ‘দুর্ঘটনা’র শিকার, অনুন্নয়নের নহে। তাই তাহার ভাগ্য পোড়া। তাহার মৃত্যুহার কত, কেহ চাহিয়াও দেখে না। সূচকমুখিতা হইতে চিকিৎসাকে এ বার যথার্থ স্বাস্থ্য পরিষেবার অভিমুখে সরিতে হইবে।

Burn Patient Hospital Nusrsing Home
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy