ছবি পিটিআই।
বাস্তব ক্ষেত্রবিশেষে কল্পনা অপেক্ষাও ভয়ঙ্কর। যেমন, প্রায়শই, কাশ্মীরে। প্রায় তিন দশক ধরিয়া এই উপত্যকায় প্রতিনিয়ত ভয়াবহ নিপীড়নের অভিযোগ জমিয়া আসিতেছে। রাষ্ট্রযন্ত্রের নিপীড়ন। এই তিন দশক কাশ্মীরে স্বশাসন ও স্বাধিকারের দাবিতে আন্দোলনের জন্ম এবং সন্ত্রাস দমনের যুক্তিতে সেনাবাহিনীর হাতে কার্যত যথেচ্ছাচারের চাবিটি তুলিয়া দেওয়ার এক সুদীর্ঘ ও অন্তহীন পর্ব। এই পর্বে জঙ্গি সন্দেহে ধৃত বন্দিদের উপর পীড়ন কোন মাত্রায় পৌঁছাইয়াছে, তাহার কিঞ্চিৎ ধারণা দেয় দুইটি মানবাধিকার সংগঠনের তৈয়ারি সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট। ৫৬০ পৃষ্ঠার বিশদ রিপোর্টটিতে নির্যাতিত ৪৩২ জন নারী-পুরুষের উদাহরণ পেশ করা হইয়াছে। যে সব নিপীড়নের অভিযোগ করিয়াছেন তাঁহারা, তাহাদের মধ্যে আছে শরীরে রড প্রবেশ করানো, বিদ্যুতের শক, ধর্ষণ, পায়ুসঙ্গম, ওয়াটার বোর্ডিং (হাত-পা-মুখ বাঁধিয়া জলের নীচে বসাইয়া রাখা), অভুক্ত রাখা, ঘুমাইতে না দেওয়া ইত্যাদি। নির্যাতন চলাকালীনই ৪০ জনের মৃত্যু হইয়াছে।
এই বিবরণ পড়িয়া কেহ যদি গুয়ান্তানামো বে কারাগারের কথা স্মরণ করেন, বিস্ময়ের কিছু নাই। কিউবা-স্থিত এই মার্কিন বন্দিশিবির অবৈধ ভাবে, শুধুমাত্র সন্দেহের বশে আটক করা বন্দিদের উপর অত্যাচারের নিরিখে একদা মাইলফলক রচনা করে। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার আক্রান্ত হইবার পর তৎকালীন বুশ প্রশাসনের ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই’-এর এক অন্যতম মুখ গুয়ান্তানামো বে বন্দিশিবিরে সাতশোর অধিক সন্দেহভাজনকে আটক করিয়া তাঁহাদের উপর জিজ্ঞাসাবাদের এক ‘আধুনিকতম পদ্ধতি’ প্রয়োগ করা হয়। পদ্ধতিগুলির সঙ্গে রিপোর্টে উল্লিখিত কাশ্মীরের ২০৬টি গোপন শিবিরে চলা বন্দিদের উপর নির্যাতনের আশ্চর্য মিল। মিল আরও এক জায়গায়, গুয়ান্তানামোর বন্দিদের এক বৃহৎ অংশকে শেষ পর্যন্ত কোনও অপরাধে অভিযুক্ত করা হয় নাই। দীর্ঘ সময় তাঁহারা কার্যত বিনা বিচারে নির্যাতিত হইয়াছিলেন। কাশ্মীরেও অত্যাচারিত বন্দিদের সত্তর শতাংশই সাধারণ মানুষ বলিয়া দাবি করিয়াছে রিপোর্টটি। অর্থাৎ, জঙ্গি প্রমাণিত না হইয়াও তাঁহারা চরম রাষ্ট্ররোষের শিকার।
উপদ্রুত অঞ্চলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা অস্বাভাবিক নহে। কিন্তু আটক ব্যক্তির সঙ্গে কেমন ব্যবহার করিতে হইবে তাহার সুস্পষ্ট নিয়ম আছে। দুর্ভাগ্য, কাশ্মীরে সেই নিয়ম লঙ্ঘনের বিপুল অভিযোগ। এবং দুর্ভাগ্য, কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রসঙ্গটি আলোচনাতেও ভারত সরকারের তীব্র আপত্তি। সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার পরিষদের (ইউএনএইচআরসি) তরফে জানা গিয়াছে, নব্বইয়ের দশক হইতে জম্মু এবং কাশ্মীরে ৭৬টি হত্যা ও নির্যাতনের উল্লেখ করিয়া গত মার্চ মাসে ভারত সরকারের কাছে তিনটি চিঠি প্রেরিত হয়। জানিতে চাওয়া হয়, ঘটনাগুলিতে জড়িতদের শাস্তিদানের এবং নির্যাতিত ও তাঁহাদের পরিবারদের ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে সরকার কী ব্যবস্থা করিয়াছে। ভারত জবাব দিতে অস্বীকার করে। সংশয় হয়, মানবাধিকার শব্দটিই বুঝি কাশ্মীর উপত্যকার জন্য নহে, সেখানে নিখোঁজ হওয়া মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাইবে, ছররার অবাধ ব্যবহারও চলিবে। স্বয়ং রাষ্ট্র যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনে অভিযুক্ত এবং সেই অভিযোগ মানিতে নারাজ, সেখানে বিচার মিলিবে কাহার কাছে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy