Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Arbitrarily

স্বেচ্ছাচারিতায় সব কিছু আমূল বদলানো অসম্ভব, প্রমাণ করল আমেরিকা

গণতন্ত্র যদি বলিষ্ঠ হয়, তা হলে শাসন ব্যবস্থার কোনও একটি স্তম্ভের পক্ষে অসীম ক্ষমতাধর বা অপ্রতিরোধ্য বা স্বৈরাচারী হয়ে ওঠা সম্ভব হয় না। প্রমাণ করল আমেরিকা।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৭ ০৩:৫২
Share: Save:

গণতন্ত্র যদি বলিষ্ঠ হয়, তা হলে শাসন ব্যবস্থার কোনও একটি স্তম্ভের পক্ষে অসীম ক্ষমতাধর বা অপ্রতিরোধ্য বা স্বৈরাচারী হয়ে ওঠা সম্ভব হয় না। প্রমাণ করল আমেরিকা। দোর্দ্দণ্ডপ্রতাপ ডোনাল্ড ট্রাম্প, তাঁর উপর্যুপরি হুঙ্কার, যে কোনও মূল্যে নিজের মতকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাঁর আক্রমণাত্মক কর্মপদ্ধতি— কোনও কিছুই কাজে এল না। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যে স্বাস্থ্য নীতি চালু করেছিলেন, তা বদলে দিতে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে জোর ধাক্কা খেয়ে গেলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর নিজের দল রিপাবলিকান পার্টিই কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবু হালে পানি পেল না ট্রাম্পের সাধের বিল। বিরোধী ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শাসক রিপাবলিকানদেরই একাংশ রুখে দিলেন স্বাস্থ্য নীতি বদলের চেষ্টা।

নানা বিতর্কিত নীতি এবং আপত্তিকর নির্দেশের কারণে ঘরে-বাইরে যুগপৎ সমালোচিত হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তবে সমালোচনা বা নিন্দা সামনে এলেই ট্রাম্প কয়েক গুণ তীব্রতা নিয়ে প্রত্যাঘাত করছেন, নিদারুণ ঔদ্ধত্যে নস্যাৎ করছেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট তিনি— অতএব তিনি অভ্রান্ত, তিনি সর্বশক্তিমান, তাঁর ভাবনাই শেষ ভাবনা, তাঁর মুখের উপর কথা চলবে না। উচ্চারিত ভাবে হোক বা অনুচ্চারে, রাজনৈতিক বিরোধীদের প্রতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বার্তাটা অনেকটা এমনই। এ হেন প্রেসিডেন্ট নিজের সাধের স্বাস্থ্য বিলটি পাশ করাতে পারবেন না মার্কিন কংগ্রেসে, এমনটা বেশ অপ্রত্যাশিতই ছিল।

ট্রাম্পের দল সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও ট্রাম্প বিল পাশ করাতে পারলেন না, এই ঘটনায় দু’টি বিষয় প্রমাণিত হয়েছে। প্রথমত প্রমাণিত হয়েছে, যতটা বলিষ্ঠ হিসেবে নিজেকে দাবি করেন ট্রাম্প, ততটা বলশালী তিনি নন। গোটা আমেরিকার উপর নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা অনেক দূরের বিষয়, নিজের দলকেই এখনও সম্পূর্ণ বশংবদ বানিয়ে ফেলতে ট্রাম্প পারেননি। দ্বিতীয়ত প্রমাণিত হয়েছে, আমেরিকার গণতন্ত্র নিঃসন্দেহে একটি বলিষ্ঠ গণতন্ত্র, তাই যাবতীয় রীতি-রেওয়াজ, প্রথা-পরম্পরা, নীতি-সিদ্ধান্তকে এক জন ব্যক্তি রাতারাতি আমূল বদলে দেবেন স্রেফ স্বেচ্ছাচারিতায় ভর করে, তা আমেরিকায় সম্ভব নয়।

দীর্ঘ দিনের নানা রীতি-রেওয়াজ, প্রথা-পরম্পরা, নীতি-সিদ্ধান্তকে বদলে দেওয়ার চেষ্টা যে শুধু আমেরিকাতেই হচ্ছে বা শুধু ট্রাম্পই করছেন, তা কিন্তু নয়। একই চেষ্টা কিন্তু আজ আমাদের দেশেও দেখা যাচ্ছে, দেশের বিভিন্ন অংশে দেখা যাচ্ছে। অতএব পরীক্ষার সামনে আজ আমাদের গণতন্ত্রও। বিশ্বের প্রাচীনতম গণতন্ত্র এক বার অন্তত নিজের বলিষ্ঠতা প্রমাণ করল। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র পারবে তো? উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Donald Trump News Letter Anjan Bandyopadhyay USA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE