Advertisement
E-Paper

অবিবেচনা

চাষির ক্ষোভ বিস্ফোরক হইয়া উঠিয়াছে, অতএব বাজেটে নিশ্চয়ই বড়সড় ঘোষণা হইবে, এই প্রত্যাশা দানা বাঁধিয়াছে।

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৩১

যাহার ঘরে আগুন লাগিয়াছে, তাহাকে ঘরের ভিত্তি সুদৃঢ় করিবার কৌশল শুনাইলে কেমন লাগিবে?
এ বারের আর্থিক সমীক্ষায় কৃষির অধ্যায়টি পড়িলে তেমনই অনুভূতি হইতে পারে চাষিদের। পরিবেশে পরিবর্তনের ফলে অতিরিক্ত শুষ্কতা অথবা অতিরিক্ত আর্দ্রতা চাষির রোজগার কত কমাইতে পারে, কী করিয়া ভূগর্ভস্থ জলের ভাণ্ডার ক্ষয় না করিয়া সেচের ব্যবস্থা করা সম্ভব, তাহার দীর্ঘ আলোচনা করিয়াছে আর্থিক সমীক্ষা। সংকট বিপুল, তাহার সমাধানও জরুরি, কিন্তু ইহা কি তাহার সময়? গত সাড়ে তিন বৎসরে কৃষিক্ষেত্রে বৃদ্ধি ক্রমাগত নিম্নমুখী। বর্তমানে তাহা দুই শতাংশেরও কম, তিন দশকে সর্বনিম্ন। নীতি আয়োগের হিসাব, গত পাঁচ বৎসরে চাষির প্রকৃত আয় প্রতি বৎসর নামিয়াছে ১.৩ শতাংশ। ইহার কারণ কেবল চাষির দুর্ভাগ্য নহে, সরকারি নীতির ব্যর্থতা। সরকারের পরামর্শেই চাষি অধিক ডাল, সয়াবিন উৎপাদন করিয়াছিল। ভাল বর্ষণ, উত্তম উৎপাদন সত্ত্বেও সেগুলির দাম পড়িয়াছে। এই তিক্ত সত্যকে সমীক্ষা ‘আধিক্যের সমস্যা’ বলিয়া এড়াইয়া গিয়াছে!

চাষির ক্ষোভ বিস্ফোরক হইয়া উঠিয়াছে, অতএব বাজেটে নিশ্চয়ই বড়সড় ঘোষণা হইবে, এই প্রত্যাশা দানা বাঁধিয়াছে। কী প্রকারে চাষির রোজগার দ্বিগুণ হইবে, তাহার দিশাও নাকি মিলিতে পারে বাজেটে, এমনই আশা দেশবাসীর। সরকার-নিয়োজিত অশোক দলওয়াই কমিটির হিসাব ছিল, ২০২২ সালে চাষির আয় দ্বিগুণ করিতে হইলে প্রতি বৎসর তাহা বাড়াইতে হইবে অন্তত দশ শতাংশ হারে। এখন হইতে হিসাব কষিলে, ২০২২ সালে কৃষির আয় দ্বিগুণ করিতে স্বভাবতই বার্ষিক বৃদ্ধির হার আরও অনেক বেশি হওয়া দরকার। কী রূপে তাহা সম্ভব, তাহার ইঙ্গিত আর্থিক সমীক্ষাতে অন্তত মিলিল না। সমীক্ষাকর্তাদের দুশ্চিন্তা, সেচ না বাড়াইলে খরা বা বর্ষণের আধিক্যে চাষির রোজগার পঁচিশ শতাংশও কমিতে পারে। অর্ধেকেরও অধিক জমিতে সেচ পৌঁছায় নাই। অতএব এখনই সেচের প্রসার প্রয়োজন। কিন্তু কী রূপে? এখনও অবধি এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার তাহার ঘোষিত লক্ষ্যে পৌঁছাইতে পারে নাই। প্রধানমন্ত্রী সেচ যোজনার অধীনে নিরানব্বইটি প্রকল্প আগামী বৎসর সম্পূর্ণ হইবার আশ্বাস মিলিয়াছিল। এ বৎসর অবধি তাহার মাত্র দশটি সম্পূর্ণ হইয়াছে। এই মন্দগতির কারণ না বুঝিয়া অনবরত সেচ বাড়াইবার নিদান হাঁকিয়া কী লাভ?

আর্থিক সমীক্ষা দুইটি নিদান দিয়াছে। এক, সারে সরকারি ভরতুকি কিংবা ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য না দিয়া সরাসরি চাষির অ্যাকাউন্টে টাকা দিতে হইবে। দুই, কৃষিকে রাজ্য তালিকা হইতে কোনও ভাবে যৌথ ব্যবস্থায় আনিতে হইবে। হয়তো এই দুটি প্রস্তাবের পক্ষে যথেষ্ট যুক্তি আছে। কিন্তু এগুলি বর্তমান সংকট কাটাইবে কী করিয়া, তাহার যুক্তি মেলে নাই। বর্তমানে উনিশটি রাজ্যে বিজেপি সরকার। কৃষিপ্রধান রাজ্যের অধিকাংশই নরেন্দ্র মোদীর দলের দখলে। কৃষিতে সংস্কারের ইহাই তো সময়। কেন কৃষিকে যৌথ তালিকায় আনিবার জন্য অপেক্ষা করিতে হইবে? কৃষির উৎপাদন ও বিপণনে নানা প্রকার পরিবর্তন প্রয়োজন। কেন্দ্রের চোখে তাহার কোনগুলি গুরুত্বপূর্ণ হইতে পারে, আর্থিক সমীক্ষায় তাহার সংকেত নাই।

Farmers agriculture production
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy