Advertisement
E-Paper

বিরল

অপহরণের চেষ্টার অভিযোগে যে শেষ অবধি বিকাশকে শ্রীঘরে পোরা হইয়াছে, তাহাও কম নহে। ইহা বর্ণিকার জয়। কিন্তু, বর্ণিকা কুণ্ডু আর কয় জন হইতে পারে?

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৭ ০০:০০

বর্ণিকা কুণ্ডু আর কয় জন হইতে পারে? বর্ণিকা সাহসিনী, স্পষ্টবাক, দৃঢ়চেতা। রাজ্যের ক্ষমতাসীন দলের বড়কর্তার ছেলের বিরুদ্ধে অঙ্গুলি তুলিতেও তিনি দ্বিধা করেন নাই। এবং, তাঁহার পিতা, বীরেন্দ্র কুণ্ডু, এক জন আইএএস অফিসার। সমাজের ক্ষমতার উচ্চাবচতার সিঁড়ির সর্বোচ্চ ধাপের বাসিন্দা। তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর চোখে চোখ রাখিয়া কথা বলিতে পারেন। তাঁহার এই ‘ধৃষ্টতা’র মূল্য যে ভবিষ্যতে চুকাইতে হইতে পারে, বীরেন্দ্র তাহা জানেন। তবুও, প্রশ্ন করিবার ক্ষমতা এবং সাহস তাঁহার আছে। বর্ণিকা এবং তাঁহার পিতা যে যুদ্ধ লড়িতেছেন তাহা কতখানি মানসিক দৃঢ়তা দাবি করে, সে কথা বোঝা সম্ভব। কিন্তু, তাঁহাদের সামাজিক অবস্থানের কারণে যে এই যুদ্ধ খানিক হইলেও সহজতর হইয়াছিল— অন্তত, তাঁহাদের কণ্ঠস্বরকে চাপিয়া রাখা যায় নাই— এই কথাটিও অনস্বীকার্য। সেই বর্ণিকারও যুদ্ধের প্রথম জয়টি অর্জন করিতে এতগুলি দিন সময় লাগিল। হরিয়ানা পুলিশ অবশেষে সিসিটিভি-র ফুটেজ ‘খুঁজিয়া পাইয়াছে’, বুঝিয়াছে যে রাজ্যের বিজেপি প্রধানের সুপুত্র বর্ণিকার গাড়িকে ধাওয়া করিয়াছিল। দুর্জনে বলিবে, গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ার চাপেই পুলিশের জ্ঞানচক্ষু খুলিল। শেষ অবধি পুলিশ বিকাশ বরালাকে গ্রেফতার করিয়াছে। বর্ণিকার লড়াই ফুরাইয়াছে ভাবিলে হয়তো ভুল হইবে। গণমাধ্যমের নজর অন্যত্র সরিয়া গেলে কী হইবে, কী হইতে পারে, ভারতীয় সমাজ তাহা বিলক্ষণ জানে। তবুও, অপহরণের চেষ্টার অভিযোগে যে শেষ অবধি বিকাশকে শ্রীঘরে পোরা হইয়াছে, তাহাও কম নহে। ইহা বর্ণিকার জয়। কিন্তু, বর্ণিকা কুণ্ডু আর কয় জন হইতে পারে?

সংখ্যাতত্ত্বের হিসাব বলিবে, ভারতের কার্যত প্রায় কোনও মেয়ের পক্ষেই বর্ণিকা কুণ্ডু হওয়া সম্ভব নহে। দেশের মোট মহিলা জনসংখ্যা এবং বর্ণিকার ন্যায় সামাজিক অবস্থানে থাকা মানুষের সংখ্যার অনুপাত, সংখ্যাতত্ত্বের ভাষায়, অকিঞ্চিৎকর। কিন্তু, বর্ণিকা কুণ্ডু না হইলে কি এই দেশে কোনও মেয়ের পক্ষে ন্যায়বিচার পাওয়াও সম্ভব হইবে না? কেন মেয়েরা রাত্রে রাস্তায় বাহির হইয়াছে— এহেন কুযুক্তি শানাইবার পরিবর্তে পুলিশ মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করিতে সচেষ্ট হইবে না? কোনও প্রভাবশালী পিতার দুষ্কৃতী পুত্রের নামে অভিযোগ পাইলে কি পুলিশ তাহার তদন্ত করিবার বদলে তথ্যপ্রমাণ সরাইতেই ব্যস্ত থাকিবে? এই প্রশ্নগুলির উত্তর ভারতের প্রতিটি শহর, প্রতিটি গ্রাম জানে। বর্ণিকা কুণ্ডুর ন্যায় সাহস, দৃঢ়তা ও সামাজিক অবস্থানের বিরল সংযোগ না থাকিলে এই ভারতে ন্যায়বিচারে মেয়েদের অধিকার নাই। যে অধিকার সংবিধানের প্রাথমিক কথা, তাহাকে ছিনাইয়া আনিতে হইলেও কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে জয়লাভ করিতে হয়।

যতই আদালত স্বপ্রবৃত্ত হইয়া জেসিকা লাল হত্যাকাণ্ডের মামলার পুনর্বিচার করুক, যতই নির্ভয়াকাণ্ডের পর মেয়েদের সুরক্ষা লইয়া আইন তৈরি হউক, ভারতের বাস্তব বলিতেছে, এই দেশ বদলায় নাই। অথবা, ভারত যত বদলায়, ততই অপরিবর্তিত থাকিয়া যায়। রাজনৈতিক নেতাদের স্বার্থরক্ষা করিয়া বেড়ানো যে পুলিশের কাজ নহে, দেশের সর্বত্রই পুলিশ এই কথাটি ভুলিয়াছে। নির্বাচনের পূর্বে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করিবার প্রতিশ্রুতি দিলে তাহাকে রক্ষা করা যে কর্তব্য, নেতারাও তাহা মানিতে বেমালুম অস্বীকার করিয়াছেন। ক্ষমতাসীন দলের নাম যাহাই হউক, তাহার চরিত্রটি অভিন্ন। এই সামগ্রিক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে বর্ণিকা লড়িতে পারিয়াছেন। যাঁহারা পারিবেন না, তাঁহাদের জন্য থাকিল হেনস্তা হইবার সম্ভাবনা, লাঞ্ছিত হইয়া ন্যায়বিচার ভিক্ষায় দোরে দোরে ঘুরিবার গ্লানি। যাঁহারা বর্ণিকা নহেন, তাঁহাদের জন্য থাকিল শুধু অন্ধকার। পুরুষতন্ত্রের অন্ধকার। অচ্ছে দিনেরও।

Varnika Kundu protest exceptional
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy