Advertisement
E-Paper

জাতিগত ভাবে আমাদের আয়নার মুখোমুখি হওয়া দরকার

ভারতের ভিন্ প্রদেশে গিয়ে দেখুন কী দক্ষিণে কী পশ্চিমে, ইতিহাসকে ধরে রাখার পরম্পরাগত এক অপরিসীম নিষ্ঠার পরিচয় প্রান্তে প্রান্তে ছড়ানো। আর আমাদের এখানে, শশাঙ্কই হোক বা লক্ষ্মণ সেন কারও রাজভূমির অথবা সামগ্রিক ভাবেই জাতির ধর্মীয়-সামাজিক-ঐতিহাসিক পীঠভূমিগুলির হাতে গোনা নিদর্শনও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর বললেও কম বলা হবে।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৯ ০০:৩৭
জরাজীর্ণ অবস্থা গোষ্ঠ পালের পুরস্কারের। —নিজস্ব চিত্র।

জরাজীর্ণ অবস্থা গোষ্ঠ পালের পুরস্কারের। —নিজস্ব চিত্র।

বাঙালি রক্ষণশীল কি না তা নিয়ে বিতর্কের যথেষ্ট পরিসর রয়েছে। কিন্তু বাঙালি যে সংরক্ষণশীল নয় সেটা মেনে নিতে দ্বিধা করবেন না বোধহয় কেউই। বাঙালির সব আছে, বর্তমান ও ভবিষ্যত্‌কে নিয়ে যতটা স্বপ্ন দেখা রয়েছে ততটাই গৌরবের ঘোষণা রয়েছে অতীত নিয়েও। কিন্তু সেই অতীত বা সেই ইতিহাসের রক্ষণাবেক্ষণে যে একাগ্রতা, নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের দরকার হয়, বাঙালি বোধহয় জাতিগত ভাবেই তা থেকে বঞ্চিত। অতএব ভূতের ভবিষ্যত্ যে নিতান্তই সঙ্কটাপন্ন হবে তা বলাই বাহুল্য।

ভারতের ভিন্ প্রদেশে গিয়ে দেখুন কী দক্ষিণে কী পশ্চিমে, ইতিহাসকে ধরে রাখার পরম্পরাগত এক অপরিসীম নিষ্ঠার পরিচয় প্রান্তে প্রান্তে ছড়ানো। আর আমাদের এখানে, শশাঙ্কই হোক বা লক্ষ্মণ সেন কারও রাজভূমির অথবা সামগ্রিক ভাবেই জাতির ধর্মীয়-সামাজিক-ঐতিহাসিক পীঠভূমিগুলির হাতে গোনা নিদর্শনও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর বললেও কম বলা হবে। সে তো না হয় কয়েক শতকের ইতিহাসের কথা, মাত্র ২৭ বছর আগের গরিমাকেও আমরা যে রক্ষা করতে পারি না তার দুর্ভাগ্যজনক প্রমাণ পাওয়া গেল মোহনবাগান তাঁবুতে, দেখা গেল নীরাংশু পালের চোখের জলে। তাঁর বাবা গোষ্ঠ পালের (যে গোষ্ঠ পালের ময়দান কাঁপানো নানান বর্ণনার ফুলঝুরি বাঙালি আড্ডার এখনও অন্যতম অঙ্গ) যাবতীয় মানপত্র, পুরস্কার, মেডেল মোহনবাগান ক্লাবকে দান করেছিলেন তাঁদের পরিবার। পিছনে ছিল একটাই আশা গোষ্ঠ পালের মর্যাদার হানি আর যেখানেই হোক মোহনবাগান তাঁবুতে হবে না। অতীত বিস্মৃত, ইতিহাসের রক্ষণে অলস বাঙালির ক্লাব মোহনবাগান যে ব্যতিক্রম হতে পারে না এটা বোধহয় তাঁদের কল্পনাতেও ছিল না। অতএব এখন ছেলে নীরাংশু পালকে ডেকে ক্লাব কর্তারা ফিরিয়ে দিলেন গরিমার সেই ইতিহাসকে, যার কিছু ইতিমধ্যে হারিয়ে গিয়েছে, যা কিছু স্মারক বেঁচে আছে তা হয় দীর্ণ অথবা ভগ্নপ্রায়। নীরাংশু পাল এ অসম্মানের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন।

গোষ্ঠ পালের স্মারককে ঘিরে মোহনবাগানের এই কাণ্ডকারখানা আরও এক বার প্রমাণ করল আমরা কতটা ইতিহাস অচেতন। ইতিহাসের প্রতি সম্মান থাকলে তার প্রতি যত্ন নেওয়ার তাগিদটুকু আসে, দায় আসে সংরক্ষণেরও এবং জন্ম নেয় ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার অভিপ্রায়। আমরা সহস্রাব্দপ্রাচীন ইতিহাস রক্ষা করতে পারিনি, আমাদের পাঁচশো বছরের ইতিহাস নিতান্তই দীর্ণ, শতাব্দীপ্রাচীন ইতিহাসের রক্ষণেও বাঙালি যে নিজস্ব তাগিদে বিরাট উদ্যোগ দেখিয়েছে এমনটাও বলতে পারা যায় না। এহবাহ্য, ২৭ বছরেই যে ইতিহাসকে আমরা ধ্বংস করে ফেলতে পারি তার শেষতম নমুনা তুলে ধরল মোহনবাগান ক্লাব।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন​

দোষটা শুধু মোহনবাগানকে দিয়ে লাভ নেই। জাতিগত ভাবে আমাদের আয়নার মুখোমুখি হওয়া দরকার। শিকড়ের প্রতি আমাদের টান কতটা নিবিড়, গলা কাঁপিয়ে অতীত বর্ণনা ছাড়াও যে ইতিহাসের প্রতি একটা দায় থাকে সেটা আমরা কতটা উপলব্ধি করি তা বুঝে নেওয়ার সময় এ বার এসেছে। যে জাতি ইতিহাস বিস্মৃত, সে জাতি নিরালম্ব। সে জাতির ভূত মেঘাচ্ছন্ন, বর্তমান কল্পনাশ্রয়ী এবং ভবিষ্যতের অবস্থাও অত্যন্ত করুণ—যেখানে ভূতেদের নেত্য ছাড়া আর কিছু কল্পনা করা দুষ্কর।

আরও পড়ুন: মোহনবাগান তাঁবুতে অবহেলায় ধ্বংস গোষ্ঠ পালের ট্রফি-মেডেল, থানায় গেলেন ছেলে

Newsletter Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Gostho Pal Nirangshu Pal Mohun Bagan Football Footballer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy