Advertisement
১১ মে ২০২৪

তারিখ চাই না, নতুন সকাল চাই

নারীকে ‘অর্ধেক আকাশ’ বলে আমরা ডাকি। কিন্তু সমাজে নারীর অবস্থান সংক্রান্ত বাস্তবতাও আমরা জানি। আজও এ দেশে সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হয় বা বিশেষ প্রকল্প ঘোষণা করতে হয় নারীর শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য, নাবালিকাদের বিয়ে রোখার জন্য, নারী নির্যাতন বন্ধ করার জন্য।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৯ ০০:০০
Share: Save:

বিশেষ একটা সকালের জন্য আজকের এই চিঠি। আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। তাই সর্বাগ্রে এই বিশেষ তারিখের শুভেচ্ছা সকলকে। শুভেচ্ছার বার্তা অবশ্য আজ দিনভর উৎসারিত হবে নানা দিক থেকে। সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন বা বিশেষ বিভাগ থাকবে, টেলিভিশনের পর্দায় বারবার শুভেচ্ছা ফুটে উঠবে, ডিজিটাল মাধ্যমে ‘নারীত্ব’ আজ ‘ট্রেন্ডিং’ হয়ে উঠবে। ফোন-এসএমএস-হোয়াটসঅ্যাপে অনেক বার্তার আদানপ্রদান হবে। কোথাও বিতর্ক, কোথাও সেমিনার, কোথাও আলোচনাচক্র বা কোথাও অন্য কোনও কর্মসূচির মাধ্যমে নারীত্বের উদ্‌যাপনের আয়োজন হবে। কিন্তু সে সব আমাদের চিন্তাধারাকে বা জীবনের গতিকে কোনও নতুন সকালে পৌঁছে দেবে কি? নাকি শুভেচ্ছার এই আদানপ্রদান বা নারীত্বের এই উদ্‌যাপন একটা বিশেষ তারিখের আনুষ্ঠানিকতা হয়ে রয়ে যাবে?

নারীকে ‘অর্ধেক আকাশ’ বলে আমরা ডাকি। কিন্তু সমাজে নারীর অবস্থান সংক্রান্ত বাস্তবতাও আমরা জানি। আজও এ দেশে সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হয় বা বিশেষ প্রকল্প ঘোষণা করতে হয় নারীর শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য, নাবালিকাদের বিয়ে রোখার জন্য, নারী নির্যাতন বন্ধ করার জন্য। আজও পণপ্রথার বিরুদ্ধে সচেতনতা তথা জনমত তৈরির জন্য আমাদের লড়তে হয়। আজও কর্মক্ষেত্রে বা রাজনীতিতে বা আইনসভায় আসন সংরক্ষণের মাধ্যমে নারীর প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করতে হয় আমাদের। এই সব সরকারি বা প্রশাসনিক উদ্যোগ নিশ্চয়ই ইতিবাচক। রাষ্ট্রচালনায় নারীর প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করার জন্য আসন সংরক্ষণের বন্দোবস্ত অবশ্যই এ দেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছার পরিচায়ক। কিন্তু সরকারি বা প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক ইতিবাচকতা বা সদিচ্ছা আমাদের কি পৌঁছে দিতে পারবে কাঙ্খিত গন্তব্যে? সামাজিক সদিচ্ছাটা যত দিন না স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে উঠবে, তত দিন সমাজে নারীর অবস্থানের সামগ্রিক উত্তরণ কি ঘটবে?

সমাজের আস্তিনেই যে নানা বিষাক্ত নিশ্বাসের বাস, তা আমাদের অজানা বোধহয় নয়। গলদটা রয়ে গিয়েছে সমাজ মানসেই। নারীর প্রতি আমাদের সাধারণ সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির বদল যত দিন না হবে, তত দিন নারী দিবসের উদযাপন যে শুধু আনুষ্ঠানিকতা হিসেবেই রয়ে যাবে, তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ নেই। প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা যখন রয়েছে, তখন সামাজিক সদিচ্ছা সৃষ্টির লড়াইটা অপেক্ষাকৃত সহজ। সে কথা মাথায় রেখে এই নারীদিবস থেকেই নতুন লড়াইয়ের শপথটা নেওয়া যাক। নারীত্বের বা পৌরুষের উদ্‌যাপন নয়, সামগ্রিক মনুষ্যত্বের উদযাপনের কথা ভাবা শুরু করা যাক অপ্রয়োজনীয় ভেদাভেদ ভুলে। তা হলেই পরবর্তী নারীদিবস শুধু মাত্র একটা তারিখ হিসেবে নয়, প্রকৃত পক্ষে একটা নতুন সকাল হিসেবে ধরা দেবে।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন: নারীবাদের বিবর্তন, চতুর্থ তরঙ্গ আসছে কি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE