Advertisement
E-Paper

এ মরণকালে ‘হরিত্-নাম’ জপা ছাড়া পথ নেই

অবিলম্বে পৃথিবীকে কার্বন নিরপেক্ষ করে তোলার দিকে অগ্রসর হতে না পারলে আগামী এক দশক বা তার একটু বেশি সময়ের মধ্যেই আরও অনেকটা বে়ড়ে যাবে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা— রিপোর্ট তেমনই বলছে।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৩৯
পৃথিবীর রংটাকে আরও অনেক সবুজ করে তোলায় এবং নিজেদের আশপাশের পরিবেশটাকে নির্মল রাখায় আমাদের সুনির্দিষ্ট ভূমিকা নিতে হবে।

পৃথিবীর রংটাকে আরও অনেক সবুজ করে তোলায় এবং নিজেদের আশপাশের পরিবেশটাকে নির্মল রাখায় আমাদের সুনির্দিষ্ট ভূমিকা নিতে হবে।

ভয়ানক বিপদ যখন একেবারে শিয়রে এসে দাঁড়ায়, তখন আমরা বলি ‘ত্রাহি মধুসূদন’। মরণকালে পৌঁছে সেই হরিনাম উচ্চারণে আদৌ কোনও লাভ হয় কি না, সে কথা হলফ করে কে বলতে পারবেন জানা নেই। তবে পৃথিবী এখন যে বিপন্নতার মুখে দাঁড়িয়ে, তাতে ‘হরিত্-নাম’ জপ করাই নিস্তার পাওয়ার সবচেয়ে সহজ পন্থা হিসেবে প্রতীত হচ্ছে।

পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতে পারে অমুক তারিখে, সৃষ্টির লয় ঘটে যাবে তমুক বছরে, সভ্যতার বিনাশ কোনও এক নির্দিষ্ট তিথিতে— এমন ভবিষ্যদ্বাণী বা পূর্বাভাস বা নিদান অনেক বারই উচ্চারিত হয়েছে। খুব দায়িত্বশীল কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ওই সব নিদান এসেছিল, এমন নয়। তা সত্ত্বেও অনেক বার হইচই হয়েছে ওই সব পূর্বাভাস ঘিরে। গল্প, উপন্যাস, চলচ্চিত্র— অনেক কিছুই হয়েছে সে সব নিয়ে। তবে ঠিক কোন সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক বা ভূ-প্রাকৃতিক ভিত্তির উপরে দাঁড়িয়ে ওই সব নিদান দেওয়া হয়েছিল, সে কথা সম্ভবত কারও কাছেই খুব স্পষ্ট ছিল না। নিদান যে সব বিফলে যাবে, যুক্তিবাদী মানুষের বোধহয় তাও অজানা ছিল না। ফলে কালক্রমে ওজন কমছিল ওই সব পূর্বাভাসের। ইদানীং ওই ধরনের নিদান আসা বন্ধও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জের ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) উষ্ণায়নজাত বিপদের যে আভাস দিয়েছে, তাকে আগের নানা ভিত্তিহীন জল্পনা-কল্পনার সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে কিন্তু খুব বড় ভুল হবে।

আইপিসিসি যে রিপোর্ট তৈরি করেছে, তা কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই শিয়রে শমন। যে হারে বাড়ছে বা ইতিমধ্যেই বেড়ে গিয়েছে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা, তাতে সমূহ বিপদ আমাদের অপেক্ষায়, জানাচ্ছে আইপিসিসি রিপোর্ট। সামগ্রিক ভাবে ভূপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা গত দেড়শো বছরে তুলনায় ১ ডিগ্রি বেড়ে গিয়েছে বলে রিপোর্টে জানানো হয়েছে। অবিলম্বে পৃথিবীকে কার্বন নিরপেক্ষ করে তোলার দিকে অগ্রসর হতে না পারলে আগামী এক দশক বা তার একটু বেশি সময়ের মধ্যেই আরও অনেকটা বে়ড়ে যাবে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা— রিপোর্ট তেমনই বলছে।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

তাপমাত্রা এ ভাবে বাড়লে অদূর ভবিষ্যতে কী হতে পারে? ক্রান্তীয় অঞ্চলের বরফ গলে গিয়ে সমুদ্রের জলস্তর বেশ খানিকটা বেড়ে যাতে পারে। তাতে কী হতে পারে? তাতে অনেক দ্বীপরাষ্ট্র ডুবে যেতে পারে, উপকূলীয় এবং উপকূলের নিকটবর্তী এলাকাগুলোও জলমগ্ন হয়ে পড়তে পারে, বিপুল সংখ্যক মানুষ ভিটেমাটিহীন-উদ্বাস্তু হয়ে পড়তে পারেন, পৃথিবীর নানা অংশে তাপপ্রবাহ শুরু হতে পারে, একের পর এক ঝড় আঘাত হানতে পারে। মহাপ্রলয় হয়ত বলা যাবে না একে। কিন্তু আইপিসিসি যে রিপোর্ট তৈরি করেছে, তাতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, আমরা এক অমোঘ গতিতে প্রলয়ের দিকেই অগ্রসর হচ্ছি। কোথাও জমিজমা-সম্পত্তি-জনবসতি জলের তলায় চলে যাবে, কোথাও গোটা রাষ্ট্রই সমুদ্রে তলিয়ে যাবে, কোথাও ক্রমবর্ধমান তাপের প্রকোপ ভূপৃষ্ঠের শস্য-শ্যামলা আবরণকে পুড়িয়ে ছারখার করে দেবে, কোথাও দুর্যোগ উপর্যুপরি হানা দবে, কোথাও মহামারী ছায়া ফেলবে— এই সব কিছুর যোগফলের নাম ‘প্রলয়’ ছাড়া অন্য কী হতে পারে।

আরও পড়ুন: মহাবিপদ! সর্বনাশের থেকে মাত্র ১২ বছর দূরে দাঁড়িয়ে পৃথিবী

যে হারে কার্বন ডাই- অক্সাইডের নির্গমন ঘটছে রোজ, তাতে এই মুহূর্তে রাশ টানা না গেলে ২০৩০ সাল নাগাদই পৃথিবীর সামনে ভয়াবহ বিপদ। আইপিসিসি এমন জানিয়েছে।

নিস্তার পাওয়ার পথ কী? একমাত্র পথ কার্বন নির্গমন কমানো। ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে বিপদের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছতে দিতে না চাইলে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষ হতে হবে এ গ্রহকে। অর্থাত্ রোজ যে পরিমাণ কার্বনের নির্গমন ঘটবে, সেই পরিমাণ কার্বনই রোজ বাতাস থেকে শুষে নেওয়ার ব্যবস্থাও থাকবে। তবেই পৃথিবী কার্বন নিরপেক্ষ হবে।

কী ভাবে সম্ভব এই লক্ষ্যে পৌঁছনোর? পৃথিবীর জিডিপির আড়াই শতাংশ অর্থ প্রতি বছর বিনিয়োগ করতে হবে শক্তিক্ষেত্রে। অথবা গাছ লাগাতে হবে বিপুল সংখ্যায়, হরিত্ বর্ণে মুড়ে ফেলতে হবে পৃথিবীকে।

আপাতত প্রতি বছর পৃথিবীর জিডিপির আড়াই শতাংশ অর্থ শক্তিক্ষেত্রে খরচ হচ্ছে কি না, তা সম্পূর্ণ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আমার-আপনার নেই। সবকটি দেশের সবকটি সরকারকে এতে বাধ্য করা যাবে কি না, সে বিষয়েও আমরা নিশ্চিত নই। কিন্তু সব বিষয়ে বোধহয় শুধু সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকলে চলে না। ব্যক্তিরও করণীয় থেকে যায় অনেক কিছুই। শক্তিক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়ানোয় প্রত্যক্ষ ভূমিকা নিতে না পারলেও, পৃথিবীর রংটাকে আরও অনেক সবুজ করে তোলায় এবং নিজেদের আশপাশের পরিবেশটাকে নির্মল রাখায় আমরা সুনির্দিষ্ট ভূমিকা নিতেই পারি। শুধু নিতেই পারি বললে চলবে না, ‘মরণকালে’ এই ‘হরিত্-নাম’টুকু করতেই হবে।

Newsletter Anjan Bandyopadhyay Global warming Climate অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় উষ্ণায়ন গ্লোবাল ওয়ার্মিং
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy