Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
t n ninan

ইয়ে তেরা ঘর, ইয়ে মেরা ঘর: ভাঙতে হবে প্রোমোটার-নেতার দুষ্টচক্র

মনে রাখতে হবে, ২০১১ সালের জনগণনা থেকে জানা গিয়েছিল, দেশের ২৩ কোটি বাসগৃহের মাত্র অর্ধেক ‘ভাল’ অবস্থায় রয়েছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

টি এন নাইনান
টি এন নাইনান
শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২১ ১৯:২৬
Share: Save:

‘স্বপ্নে দেখি একটি নতুন ঘর...’

ভারতে আবাসনের বাজার অনেকটাই বাড়ির মালিকানার ভিত্তিতে পরিচালিত। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে ‘বাড়িভাড়া’ ব্যাপারটাই যথেষ্ট বিরল। এমনকি, দেশের শহরাঞ্চলেও ৭০ শতাংশ বাড়ি ব্যক্তি মালিকানাধীন। শহরাঞ্চলে বাড়িভাড়ার ব্যাপারটা মেরেকেটে সামগ্রিক আবাসনের এক-চতুর্থাংশ হবে। তবু সেই সংখ্যাটাকেও অবহেলা করা যাবে না। সুতরাং যদি কেন্দ্রীয় সরকার বাড়িভাড়া সংক্রান্ত কোনও মডেল আইন প্রণয়ন করে এবং রাজ্য সরকারগুলিকে তা অনুসরণ করতে নির্দেশ দেয়, তা হলেও সেই আইন প্রণয়ণ করতে এবং বিশেষ আদালত তৈরি করতে রাজ্যগুলির বেশ কয়েক বছর লেগে যাবে বলেই মনে হয়। তবুও এই কথাটা বলা প্রয়োজন যে, সেই মডেল আইন বাড়িভাড়া সংক্রান্ত ব্যবসা, এবং এমনকি, আবাসনের বাজারেও সামগ্রিক ভাবে একটা ভিত্তিগত পরিবর্তন আনতে পারে।

দশক তিনেক আগেও গৃহনির্মাণ দেশের অর্থনীতির একটা প্রান্তিক জায়গায় ছিল। বেশির ভাগ শহরেই বিষয়টা ছিল রাষ্ট্রের একচেটিয়া অধিকারভুক্ত। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই নির্মাণকাজের গুণমান দাঁড়াত একান্তই নীরস। নির্মাণকাজ ছিল ঢিমে লয়ে আর বহুলাংশে তা চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত হত না। যে-ই সেখানে ব্যক্তিগত উদ্যোগের প্রবেশ ঘটল, তখনই দিল্লিকেন্দ্রিক নতুন উপনগরী গড়ে ওঠার ছবিটা স্পষ্ট হয়ে উঠল। কিন্তু কলকাতা বা পুণের মতো নগরীর শহরতলিতে তখন সেটা দেখা যায়নি। হায়দরাবাদ বা বেঙ্গালুরুর ‘হাউজিং বুম’-এর স্বপ্ন তখন সুদূরপরাহত। স্বভাবতই ১৯৯১ নাগাদ ভারতেরর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) বড় জোর ১ শতাংশ জুড়ে ছিল আবাসন অর্থনীতি।

ক্রমে বন্ধকী ব্যবসার রমরমা শুরুর পর সেই অনুপাত দ্রুত বেড়ে গিয়ে ২০০৫ নাগাদ জিডিপি-র ৭ শতাংশ হয়ে দাঁড়াল। এখন সেই পরিসংখ্যানটা পৌঁছেছে ১০ শতাংশে। খুব সামান্য ত্রুটি আছে বটে। কিন্তু এই ব্যবসা যাবতীয় ভাড়াসংক্রান্ত ব্যবসার মধ্যে অন্যতম নিরাপদ। যথাযথ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে এই ব্যবসার দেশীয় অর্থনীতির ভিত্তি হয়ে ওঠার সম্ভাবনাও রয়েছে। শুধু আর্থিক দিক নয়, এর মধ্যে নিহিত রয়েছে উৎপাদন ও পরিষেবাগত বিবিধ দিকও।

কিন্তু পাশাপাশিই, যুক্তিহীনতারও অভাব নেই। কৃত্রিম ভাবে জমির দাম বাড়ানোর খেলায় আবাসনের মূল্যবৃদ্ধি বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়। এক বা দুই কামরার বাসগৃহের মূল্য প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ক্রেতার বেশ কয়েক বছরের বেতনের সমান। অবধারিত ভাবেই বাড়িভাড়া থেকে আয় বাড়ি বানানোর মূল্যের তুলনায় নগণ্য— বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাত্র ২ শতাংশ।

বিপরীতধর্মী বাড়িভাড়া আইনে ভাড়াটের তরফে অতিমাত্রায় সুরক্ষা প্রদান কোনও কাজে আসে না। হিসেব মোতাবেক প্রায় ১ কোটি বাড়ি ফাঁকা পড়ে রয়েছে। বাড়িওয়ালা স্রেফ সম্পত্তি হারানোর ভয়ে বাড়িটি ভাড়া দিতে রাজি নন। নিঃসন্দেহে এই প্রবণতা স্থাবর সম্পত্তির নিদারুণ অপচয়। জার্মানির সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, সেখানে ৬০ শতাংশ মানুষ তাঁদের বাড়ি ভাড়া দেন এবং আবাসন খাতে বিনিয়োগ আটকে রাখা দরকার মনে করেন না। ভাড়া সংক্রান্ত মডেল আইন বস্তুত বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটের স্বার্থরক্ষার মধ্যে যথাযথ ভারসাম্য নিয়ে আসতে পারে।

মোদী সরকার এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণ উল্লেখযোগ্য কাজ করেছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্প দেশের গ্রামীণ এলাকায় ১ কোটি ২০ লক্ষ বাড়ি তৈরি করতে সাহায্য করেছে। অর্থনীতির অপ্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে অভিবাসী এবং শ্রমিকদের জন্য আবাস নির্মাণের নতুন পরিকল্পনা আবাসনের বাজারকে আমূল বদলে দিতে পারে। বর্তমানে অতি নিম্ন মানের জীবন যাপনকারীদের জীবনযাত্রায় ভিত্তিগত পরিবর্তন আনতে পারে। রিয়েল এস্টেট রেগুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাক্ট (আরইআরঅএ) নির্মাণ বাণিজ্যের নিয়মনীতিগুলিকেই বদলে দিয়েছে। অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট ক্রেতাদের বেশি সুরক্ষা দিতে পেরেছে। ভাড়া সংক্রান্ত মডেল আইনও একই কাজ করতে পারে।

মনে রাখতে হবে, ২০১১ সালের জনগণনা থেকে জানা গিয়েছিল, দেশের ২৩ কোটি বাসগৃহের মাত্র অর্ধেক ‘ভাল’ অবস্থায় রয়েছে। এই পরিসংখ্যানের মধ্যেই কিন্তু সুযোগের সম্ভাবনা সুপ্ত রয়েছে। যদি প্রোমোটার-রাজনীতিক দুষ্টচক্র ঘিরে গড়ে ওঠা জমি-বাড়ির বাণিজ্যকে সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তবে এই সুযোগের সদ্ব্যবহারও সম্ভব। এখনও পর্যন্ত দিল্লির খালি জমি দিল্লি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির হাতে। যার প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব হয়নি। মুম্বইয়ের বস্তি পুনর্বাসন প্রকল্পও আশানুরূপ ফলদানে ব্যর্থ। আবাস-ঘনত্ব সংক্রান্ত আইন কানুন ঘেঁটে রয়েছে। সর্বত্রই খুব সামান্য পরিমাণ জমি আবাসন বাজারে লভ্য। ফলে কৃত্রিম অভাব তৈরি হচ্ছে এবং কিছু খরবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ তার ফায়দা লুটছেন (যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ রবার্ট বঢরা)।

পরিবর্তন যতটুকু হচ্ছে, তার গতি অতি ধীর। কারণ সরকারের তিনটি প্রশাসনিক স্তর— পৌর, রাজ্য এবং জাতীয়, এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। প্রত্যেকটি স্তরেই কিছু না কিছু করার রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ দায় কেন্দ্রীয় সরকার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে। রাজ্য ও পৌর প্রশাসনিক স্তরগুলি দায় নিতে শুরু করলেই প্রকৃত পরিবর্তন ঘটবে। যদি আবাসন বাণিজ্যে উন্নয়নকে পরিদৃশ্যমাণ করে তুলতে হয়, এই ক্ষেত্রটিকে বিনিয়োগের যোগ্য করে তুলতে হবে। তবে বহু কিছু করা বাকি থেকে যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Housing Sector t n ninan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE