Advertisement
০২ মে ২০২৪
State News

সত্যে পৌঁছতে এত ঘুরপথ ধরতে হচ্ছে কেন?

এখনও নতুন নতুন প্রশ্ন উঠে আসছে, নতুন করে আরও নানা ধোঁয়াশা জাগছে, একেবারে বুনিয়াদি জিজ্ঞাসাগুলোর উত্তরও হাতড়াতে হচ্ছে। দুর্ঘটনাটার পর দু’সপ্তাহ কাটল। কিন্তু নিতান্ত প্রাথমিক জিজ্ঞাসাগুলোর নিরসন ঘটাতে পারলেন না আমাদের তদন্তকারীরা।

ছবি:সংগৃহীত।

ছবি:সংগৃহীত।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৭ ০৪:৪৫
Share: Save:

এখনও নতুন নতুন প্রশ্ন উঠে আসছে, নতুন করে আরও নানা ধোঁয়াশা জাগছে, একেবারে বুনিয়াদি জিজ্ঞাসাগুলোর উত্তরও হাতড়াতে হচ্ছে। দুর্ঘটনাটার পর দু’সপ্তাহ কাটল। কিন্তু নিতান্ত প্রাথমিক জিজ্ঞাসাগুলোর নিরসন ঘটাতে পারলেন না আমাদের তদন্তকারীরা। তদন্তকারীদের মনে জিজ্ঞাসাই জাগেনি? নাকি নেপথ্যচারী কোনও উদ্দেশ্য বা অনিচ্ছা জিজ্ঞাসাগুলোকে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিল? প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও।

বিক্রম চট্টোপাধ্যায় আর সোনিকা সিংহ চৌহান ভয়াবহ এক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন। তা নিয়ে উত্তুঙ্গ চর্চা নানা পরিসরে। সোনিকা দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আর ফিরলেন না। কিন্তু বিক্রম ফিরেছেন, মোটের উপর সুস্থ এবং স্থিতিশীলই রয়েছেন। তা সত্ত্বেও এখনও স্পষ্ট জানা গেল না, ঠিক কী হয়েছিল, কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, কেন দুর্ঘটনা ঘটেছিল? পুলিশ-প্রশাসনের তরফে রহস্য ভেদের চেষ্টা কতখানি সদিচ্ছার সঙ্গে হচ্ছে, স্পষ্ট নয়। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের তরফ থেকে অবশ্যই সে চেষ্টা হচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়া নানা প্রশ্ন তুলছে, সত্য সামনে আনার দাবিতে বিক্রম-সোনিকার অনেক সহকর্মীও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। অতএব অবধারিত ভাবে রোজ নতুন নতুন পরিসরে আলো পড়ছে, আনকোরা কোনও তথ্য উঠে আসছে, আলো-আঁধারিতে মোড়া অধ্যায়টার নতুন কোনও পরিচ্ছেদ উন্মোচিত হচ্ছে। এই উন্মোচনগুলো যে খুব কঠিন ছিল, তা কিন্তু নয়। তা সত্ত্বেও বড় জটিল পথ ধরে, থেমে থেমে সামনে আসছে সত্য। প্রথমে এক বয়ান শোনা যাচ্ছে। পরে তা বদলে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট নানা পক্ষ বার বার যেন নিজেদের অবস্থান বদলে ফেলছেন। রহস্য উন্মোচনের ভার যাঁদের উপর, তাঁদের তরফে অবর্ণনীয় অকর্মণ্যতা না থাকলে এত জটিল হয়ে উঠতে পারত না ছবিটা। তবে আবার বলছি, অকর্মণ্যতাই এর জন্য দায়ী, নাকি কোনও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অনিচ্ছা, তা নিয়েও সংশয়ের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।

রক্তের নমুনা পরীক্ষা করাতে দেওয়ার আগেই ন’দিন কেটে যায়। মিডিয়ার হাত ধরে কোনও পানশালা বা কোনও নৈশ আসরের টুকরো টুকরো ছবি ভেসে না ওঠা পর্যন্ত কিছুতেই তদন্তকারীরা জানতে পারেন না, বিক্রম চট্টোপাধ্যায় মদ্যপান করে গাড়ি চালাচ্ছিলেন কি না। গাড়ির গতিবেগ কি আদৌ নিয়ন্ত্রণে ছিল? সিটবেল্ট কি বেঁধেছিলেন আরোহীরা? খুব সহজে এবং অনেক আগেই এমন অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নেওয়া সম্ভব ছিল। অনেক ঘুরপথে উত্তরগুলো সামনে এল।

বিক্রম চট্টোপাধ্যায় যে বয়ান সাংবাদিক বৈঠকে দিয়েছিলেন, পরে তিনি সে বয়ান বদলে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন। সৌজন্যে অনেকাংশেই সংবাদমাধ্যম। এই অসঙ্গতি কেন? দু’জনে একসঙ্গে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন। এক জন আর ফিরে আসেননি। কিন্তু যিনি ফিরে এসেছেন এবং সজ্ঞানে রয়েছেন, তিনি সত্যটা এক বারে উন্মোচন করবেন না কেন? সহজে সবটা জানতে দেবেন না কেন? তা হলে কি ধরে নিতে হবে, কোথাও একটা খুব বড় গরমিল রয়েছে? প্রশ্নচিহ্নের সামনে বিক্রম নিজে তো রয়েছেনই। প্রশ্নচিহ্ন ক্রমশ বড় হচ্ছে পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও।

আরও একটা প্রশ্ন বার বার ঘুরে-ফিরে আসছে। দুর্ঘটনায় কালিকাপ্রসাদের মৃত্যুর পর তাঁর গাড়ির চালককে গ্রেফতার করা হয়েছিল ঠিক কী কারণে? তাঁর কি কোনও অপরাধ ছিল? যদি তাই হয়, তা হলে বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ও নিশ্চয়ই একই দোষে দুষ্ট। বিক্রমকে গ্রেফতার করার বিন্দুমাত্র চেষ্টাও কি হয়েছে? এই প্রশ্নচিহ্নটাও কিন্তু ক্রমশ বড় হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE