Advertisement
E-Paper

অবোধ

রাহুল গাঁধী এই নির্বাচনী ভরাডুবির নৈতিক দায় স্বীকার করিয়াছেন। কংগ্রেস এতখানি অপ্রাসঙ্গিক না হইয়া পড়িলে হয়তো কেহ জানিতে চাহিতেন, এই স্বীকারোক্তি লইয়া আমরা কী করিব? গত নির্বাচনে যে দল ২০৬টি আসন পাইয়াছিল, তাহা কেন পঞ্চাশ আসনের গণ্ডিও পার করিতে পারিল না, সে বিষয়ে চর্চা হইতেছে, হইবে, হয়তো কংগ্রেসের অবশিষ্ট অভ্যন্তরেও হইবে। কিছু কারণ ইতিমধ্যেই বহু-আলোচিত। ইউপিএ সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ এবং দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত।

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৪ ০০:০৫

রাহুল গাঁধী এই নির্বাচনী ভরাডুবির নৈতিক দায় স্বীকার করিয়াছেন। কংগ্রেস এতখানি অপ্রাসঙ্গিক না হইয়া পড়িলে হয়তো কেহ জানিতে চাহিতেন, এই স্বীকারোক্তি লইয়া আমরা কী করিব? গত নির্বাচনে যে দল ২০৬টি আসন পাইয়াছিল, তাহা কেন পঞ্চাশ আসনের গণ্ডিও পার করিতে পারিল না, সে বিষয়ে চর্চা হইতেছে, হইবে, হয়তো কংগ্রেসের অবশিষ্ট অভ্যন্তরেও হইবে। কিছু কারণ ইতিমধ্যেই বহু-আলোচিত। ইউপিএ সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ এবং দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। গত পাঁচ বৎসর দল এবং সরকারের মধ্যে কোনও তালমিল ছিল না, নীতিপঙ্গুত্বই সরকারের অভিজ্ঞান হইয়াছিল। কর্তৃত্বহীন প্রধানমন্ত্রী এবং দায়িত্বহীন জোটনেত্রী— যুগলবন্দিটি প্রাণঘাতী। কথাগুলি সবই সত্য, কিন্তু এই কারণগুলি বহিরঙ্গের। দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া কোনও দলের কৌশল হইতে পারে, কিন্তু তাহাকে নীতিগত অবস্থান ভাবিলে ভুল হইবে। কাজেই, হয়তো অন্য কোনও প্রধানমন্ত্রী অন্য ভাবে পরিস্থিতি সামলাইতে চেষ্টা করিতেন। বহিরঙ্গের সব ব্যর্থতাই সংশোধনযোগ্য, কাল না হউক পরশু তাহা শুধরাইয়া লওয়া সম্ভব। বদলানো কঠিন মন, সেই মনের মধ্যে গাঁথিয়া থাকা ছবি। কংগ্রেস সেই ছবির মরীচিকায় পথ হারাইয়াছে।

কংগ্রেসের মনে ভারতের একটি ছবি আছে। ‘প্রজা ভারত’-এর ছবি। সেই প্রজারা রাজার সামান্য বদান্যতার মুখাপেক্ষী, এবং সেটুকু পাইলেই ধন্য হইয়া যায়। কংগ্রেস শাসকের সিংহাসন হইতে সেই প্রজাদের জন্য ভর্তুকির ব্যবস্থা করিয়াছিল। সস্তায় চাল-গম, অকৃষি ক্ষেত্রে মজুরের কাজ আর ভাগ্য সুপ্রসন্ন হইলে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা। প্রজারা হয়তো এই খুদকুড়াতেই সন্তুষ্ট হইত, কিন্তু কংগ্রেস টের পায় নাই যে, একুশ শতকের ভারতীয়রা আর প্রজা থাকিতে নারাজ, তাঁহারা নাগরিক। রাষ্ট্রের নিকট তাঁহাদের বদান্যতার প্রত্যাশা নাই, সুযোগের দাবি আছে। ভর্তুকিতে তাঁহাদের আপত্তি নাই, কিন্তু সেই প্রাপ্তিকে তাঁহারা নিতান্তই প্রাপ্য হিসাবে জানেন। কাজেই, যাহা নিতান্তই ‘প্রাপ্য’, তাহাই আংশিক ভাবে দেওয়ার পর বড় গলায় দাতা সাজিবার দাবি করিলে নাগরিকদের কানে তাহা বিসদৃশ ঠেকিবে বইকী। এই কথাটিই কংগ্রেস বোঝে নাই। ধরিতে পারে নাই, এই ভারতের তরুণ এবং অনতিতরুণরা কাজের সুযোগ চাহেন, উন্নয়ন চাহেন। রাষ্ট্র তাঁহাদের শাকান্নের ব্যবস্থা করিয়া দিক, এই চাহিদা আর ভারতের নাই। বরং, মানুষ চাহেন, রাষ্ট্র এমন পথে চলুক, যাহাতে বাজার সকলের ভাল থাকিবার সুযোগ তৈরি করিয়া দিতে পারে। কতিপয় সচ্ছল ‘আদর্শবাদী’ বামপন্থী বুদ্ধিজীবীর স্বপ্নদৃষ্ট সমাজতন্ত্র নহে, ২০১৪’র ভারত বাজারের শক্তিতে বিশ্বাস রাখিয়াছে।

এই কথাটি নরেন্দ্র মোদী যত সহজে বুঝিয়াছেন, কংগ্রেস ততোধিক সহজে তাহা বুঝিতে ব্যর্থ হইয়াছে। দ্বিধাহীন জনাদেশ অর্জনের পর মোদী বলিয়াছেন, তিনি তাঁহার বিরোধীদেরও উন্নয়ন লইয়া কথা বলিতে বাধ্য করিয়াছেন। কারণ, দেশের সব সমস্যার একটিই সমাধান: উন্নয়ন। নরেন্দ্র মোদী ভারতের নাড়ির স্পন্দন বুঝিয়াছিলেন, তাহার স্বপ্নের সমদর্শী হইয়া উন্নয়নের জয়গান গাহিয়াছিলেন। ভারত সানন্দ সাড়া দিয়াছে। কংগ্রেস উন্নয়নের কোনও বিকল্প ভাষ্য তৈরি করিতে পারে নাই। আজ ২৪ আকবর রোডস্থিত ধ্বংসস্তূপে সম্ভবত অনুভূত হইতেছে, অতীত টানিয়া, ব্যক্তিগত আক্রমণের পথে হাঁটিয়া মস্ত ভুল হইয়াছে। মানুষ অতীতে বাঁচে না। সমৃদ্ধতর, উন্নততর ভবিষ্যতের আশা করে। কংগ্রেসের বৃহত্তম ব্যর্থতা, তাহারা নূতন ভারতের এই আশার সন্ধান পায় নাই। অন্তরের এই ব্যর্থতা যত দিন না সংশোধিত হইতেছে, বহিরঙ্গের কোনও পরিবর্তনই কংগ্রেসকে সফল করিতে পারিবে না।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy