Advertisement
২৩ মে ২০২৪
সম্পাদকীয় ১

অসমাপিকা

সর্বোচ্চ আদালত একটি আশা জাগ্রত করিয়াছিলেন। ভারতের ক্রিকেট প্রশাসনে আমূল সংস্কারের আশা। আদালতের অন্তর্বর্তী নির্দেশিকা সেই আশাকে সম্পূর্ণ ঘুম পাড়াইয়া দিয়াছে বলিলে ভুল হইবে। কিন্তু এ কথা বলিলে বোধ করি অন্যায় হইবে না যে, শুক্রবারের ঘোষিত নির্দেশের পরে সংস্কারের সম্ভাবনা অনেকখানি স্তিমিত। আই পি এল ছিল সংকটের প্রধান উপলক্ষ। অর্থ এবং অনর্থের প্রধান উৎসও বটে।

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৪ ০০:৪০
Share: Save:

সর্বোচ্চ আদালত একটি আশা জাগ্রত করিয়াছিলেন। ভারতের ক্রিকেট প্রশাসনে আমূল সংস্কারের আশা। আদালতের অন্তর্বর্তী নির্দেশিকা সেই আশাকে সম্পূর্ণ ঘুম পাড়াইয়া দিয়াছে বলিলে ভুল হইবে। কিন্তু এ কথা বলিলে বোধ করি অন্যায় হইবে না যে, শুক্রবারের ঘোষিত নির্দেশের পরে সংস্কারের সম্ভাবনা অনেকখানি স্তিমিত। আই পি এল ছিল সংকটের প্রধান উপলক্ষ। অর্থ এবং অনর্থের প্রধান উৎসও বটে। সুতরাং সেই প্রতিযোগিতা পরিচালনার সমস্ত কর্তৃত্ব হইতে নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের ‘অপসারণ’ অবশ্যই ইতিবাচক। সুনীল গাওস্কর আই পি এল পর্বটি দক্ষতা এবং সততার সহিত উদ্যাপনের জন্য যথাশক্তি চেষ্টা করিবেন, এমন আস্থার যথেষ্ট কারণ আছে। কিন্তু কারণ থাকিলেই কার্য সমুৎপন্ন হয় না। ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের শীর্ষাসনে পরিবর্তন জরুরি ছিল, পরিবর্তন ঘটিয়াছে। কিন্তু বোর্ডের সামগ্রিক কাঠামো কার্যত অপরিবর্তিত। সেই কাঠামো বহুলাংশে শ্রীনিবাসনের তৈয়ারি। ভাইস প্রেসিডেন্ট শিবলাল যাদব-সহ কর্মকর্তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের উপর তাঁহার প্রভাবের কথা ও কাহিনি বহুশ্রুত। সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশে শ্রীনিবাসনের স্থায়ী এবং চূড়ান্ত নির্বাসনের কোনও নিশ্চয়তা নাই। বিশেষত, আই সি সি’র কর্ণধার হিসাবে তাঁহার মনোনয়নে নিষেধাজ্ঞার আবেদন এই মামলার ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক বলিয়া সর্বোচ্চ আদালত সেই আবেদন নাকচ করিয়াছেন। আদালতকে আইনের নিজস্ব সীমায় সংযত থাকিতেই হয়। কিন্তু এর ফলে এমন সম্ভাবনা উৎসাহিত হইতে পারে যে, শ্রীনিবাসনের প্রভাব-প্রতিপত্তি অদূর ভবিষ্যতে নূতন প্রশাখা বিস্তার করিবে। সুতরাং বোর্ডের সদস্যদের উপর তাঁহার ব্যক্তিগত প্রভাবও অন্তর্হিত হইবার আশা, অন্তত আপাতত, যথেষ্ট প্রবল নহে। গাওস্কর বলিয়াছেন, ক্রিকেট-পূর্বাশ্রমের মতোই নূতন ভূমিকাতেও তিনি শতকরা একশো ভাগ দিবেন। দল ঠিক না হইলে একা অধিনায়ক তাঁহার সব দিয়াও সাফল্য নিশ্চিত করিতে পারেন না, তাহা নিশ্চয়ই সুনীল মনোহর গাওস্করের অজানা নহে।

এখানেই গভীরতর প্রশ্নটি ওঠে। সুপ্রিম কোর্ট পূর্ববর্তী মন্তব্যে বোর্ডের অনাচারের সম্পর্কে যে তীব্র মন্তব্য করিয়াছিলেন, তাহার চরিত্র এবং আচরণ সংশোধনের প্রয়োজন যে সুস্পষ্ট ভাষায় চিহ্নিত করিয়াছিলেন, নির্দেশ জারির সময় তাহার সহিত সামঞ্জস্য রাখিয়া কঠোর হইয়াছেন কি? মহামান্য বিচারপতিরা যখন হাতে সম্মার্জনী তুলিয়া লইলেন, তখন তাহা যথেষ্ট মাত্রায় সঞ্চালন করিলেন না কেন? বিচারবিভাগের অতিসক্রিয়তার প্রশ্ন তো এ ক্ষেত্রে ছিল না। ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড একটি বেসরকারি সংস্থা। সাধারণ অবস্থায় তাহার অভ্যন্তরীণ পরিচালনায় সরকার বা আদালতের হস্তক্ষেপের কোনও প্রয়োজনই হইবার কথা নয়। কিন্তু শ্রীনিবাসন এবং তাঁহার সঙ্গীরা সংস্থাটিকে যেখানে পৌঁছাইয়া দিয়াছেন, তাহাতে আদালতকে হস্তক্ষেপ করিতেই হয়। সেই কারণেই সুপ্রিম কোর্টের নিকট আরও অনেক বেশি কঠোরতা প্রত্যাশিত ছিল না কি? দুর্নীতির অভিযোগে জড়িত দুইটি দলকে এ বারের জন্য আই পি এল-এ খেলিতে না দেওয়াই সঙ্গত হইত না কি? নৈতিকতার প্রশ্নে আই পি এল-এর মাহাত্ম্য বা দর্শকদের বিনোদন নিশ্চয়ই তুচ্ছাতিতুচ্ছ। এহ বাহ্য। শুধু আই পি এল নয়, সামগ্রিক ভাবেই বোর্ডের সংস্কার জরুরি। কেবল অধিনায়ক নয়, বোর্ডের খোলনলচে বদলাইয়া একটি নূতন অধ্যায় শুরু করা জরুরি। এবং সেই যুক্তিতেই, সুনীল গাওস্করের যোগ্যতা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র সংশয় প্রকাশ না করিয়াও, বলা যায়, বোর্ড পরিচালনার দায়িত্ব সম্পূর্ণ ‘বাহিরের’ কাহারও হাতে দেওয়াই হয়তো শ্রেয় হইত। সত্য, এখনও আদালতের চূড়ান্ত রায় ঘোষিত হয় নাই। ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের লজ্জাকর ইতিহাসের অবসান এখনও অ-সম্ভব নহে। আপাতত হাতে রহিল সেই ভরসাটুকু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

editorial
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE