Advertisement
E-Paper

আবেগ ও প্রতিভা

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে বিরাট কোহলির অসামান্য ব্যাটিং লইয়া সকলেই ধন্য ধন্য করিতেছেন। তাঁহার প্রতিভা প্রশ্নাতীত। কিন্তু সেই ক্ষমতা বাদ দিয়াও, তাঁহার খেলার মধ্যে সেই দিন উজ্জ্বলতর হইয়া উঠিয়াছিল: প্রবল চাপের মধ্যেও মাথা ঠান্ডা রাখিবার আশ্চর্য গুণ। যে কোনও ক্রীড়া দেখিবার মুহূর্তে মানুষ উত্তেজিত হইয়া পড়ে, গোটা দেশ আবেগে প্রত্যাশায় আলোড়িত হইতে থাকে, খেলোয়াড়েরও প্রায়ই অনুরূপ দশা হয়।

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৪ ০০:০৩

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে বিরাট কোহলির অসামান্য ব্যাটিং লইয়া সকলেই ধন্য ধন্য করিতেছেন। তাঁহার প্রতিভা প্রশ্নাতীত। কিন্তু সেই ক্ষমতা বাদ দিয়াও, তাঁহার খেলার মধ্যে সেই দিন উজ্জ্বলতর হইয়া উঠিয়াছিল: প্রবল চাপের মধ্যেও মাথা ঠান্ডা রাখিবার আশ্চর্য গুণ। যে কোনও ক্রীড়া দেখিবার মুহূর্তে মানুষ উত্তেজিত হইয়া পড়ে, গোটা দেশ আবেগে প্রত্যাশায় আলোড়িত হইতে থাকে, খেলোয়াড়েরও প্রায়ই অনুরূপ দশা হয়। এবং এই আবেগ-প্লাবনে ভাসিয়া যাইবার মধ্যে এই উপমহাদেশ কিঞ্চিত্‌ অতিরিক্ত মহিমাও আবিষ্কার করিয়া ফেলে। দুই ওপেনারের মধ্যে এক জন হয়তো হিসাব করিয়া খেলেন, অন্য জন দিগ্বিদিক ভুলিয়া যে বল আসে তাহাকেই ঠ্যাঙাইতে যান। মুহূর্তে দ্বিতীয় খেলোয়াড় দেশবাসীর অধিক প্রিয় হইয়া যাইবেন, অসামান্য বীরের সম্মান পাইবেন, অন্য জন সম্পর্কে বলা হইবে, ছি, ব্যক্তিটি তো অঙ্ক কষিতেছেন! ইহার মূলে রহিয়াছে আজব ধারণা: অসাধারণত্বের সহিত বে-হিসাব বা অতিরেকের সম্পর্ক যমজ ভ্রাতার। প্রকৃত অসামান্য মানুষ কখনও হিসাব করিয়া পটল ক্রয় করিবেন না, নিজের বিষয়টিতেও তিনি স্থিতধী হইয়া, সংযম ও বিবেচনাবোধ অক্ষুণ্ণ রাখিয়া বিচরণ করিবেন না। এই মতাবলম্বীরা কবিকেও দেখিতে চাহে আত্মধ্বংসী নেশাগ্রস্ত জিনিয়াস রূপে, চিত্রকরের মধ্যেও খুঁজিতে চাহে প্রথাবহির্ভূত স্বেচ্ছাচার, চলচ্চিত্রকার মদ খাইয়া উলটাইয়া না পড়িয়া থাকিলে তাঁহাকে শিল্পী বলিয়াই ধরে না। স্বাভাবিক ভাবেই, খেলোয়াড়ের মধ্যেও তাহারা বন্য প্যাশন ও উদ্দাম প্রয়াস খুঁজিয়া ফিরে।

পূর্বে ভারতীয় ক্রিকেট দলে এই আবেগধর্মের চর্চাই অধিক ছিল। তাই হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচ প্রায় সর্বদাই ভারত হারিয়া ফিরিত। ওভারে যখন মাত্র চার রান করিয়া তোলা প্রয়োজন, তখন প্রবল বিক্রমে ছয় মারিতে গিয়া উইকেট দিয়া না আসাই ছিল বিস্ময়কর। ক্রমে পৃথিবী অবধারিত ভাবে যুক্তির দিকে ঢলিয়াছে। কেরিয়ারসর্বস্ব বলিয়া নিন্দিত যুবকযুবতীরা সংযমকে, পরিকল্পনাকে, গন্তব্যকে সম্মান দিতে শিখিয়াছে। আবেগের বশে প্রাণ দান করিয়া বীরগাথা প্রসব অপেক্ষা হিসাব কষিয়া যুদ্ধ জয় অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলিয়া বিবেচিত হইতেছে। ক্রীড়া হউক, শিল্প হউক, রাজনৈতিক নির্বাচন হউক, সাধারণ মানুষের প্রশ্নগুলি হিস্টিরিয়া এড়াইয়া, সূচীমুখ, যুক্তিসন্ধানী হইয়া পড়িতেছে। কাহারও অগ্নিস্রাবী বক্তৃতা শুনিয়া বা প্রচারমঞ্চে তারকার উল্লম্ফন দেখিয়া তাহারা তালি দিবে বটে, কিন্তু দিনের শেষে উক্ত ক্রিয়ার প্রকৃত তাত্‌পর্যটি জানিতে চাহিবে। পূর্বে ক্রিকেটানুরাগীরা বলিত, ভারতের রক্ত তপ্ত, তাহারা ক্রীড়াকে পাটিগণিত হিসাবে দেখিবার অকুলীন অভ্যাস আয়ত্ত করিবে কেন? কার্যোদ্ধারই খেলার উদ্দেশ্য নহে, যাত্রাপথটি আতশবাজিতে আলোকিত করিয়া রাখাই মূল। এখন নূতন প্রজন্মের খেলোয়াড়গণ শীতল মস্তিষ্ক, পরিপাটি বুদ্ধি ব্যবহার করিয়া খেলা ছকিয়া লইতেছেন। তাঁহাদের প্রশিক্ষণ দিতেছেন কেবল ক্রিকেট কোচ নহেন, মনোবিদ, ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞরাও। সমর্থকেরাও বহু খেলা দেখিয়া, ধারাভাষ্য শুনিয়া, ভাবিতে শিখিতেছে, জয়ী হইতে গেলে খেলাটি সম্যক অনুধাবন করা প্রয়োজন এবং সেই মুহূর্তের প্রয়োজনটিকে অব্যর্থ চিনিয়া লওয়া প্রয়োজন। যদি কোহলির প্রথম কর্তব্য হয় উইকেটে টিকিয়া থাকা, তবে মারিতে না-যাওয়াই প্রকৃত বীরের লক্ষণ। বীর কেবল অসি ঘুরাইবেন না, অসি কোষবদ্ধ রাখিতেও জানিবেন। কেবল গর্জন করিবেন না, সংবরণের ক্ষমতাও ধরিবেন। কোহলি সাক্ষাত্‌কারে বলিয়াছেন, মরিয়া হইয়া কিছু চাহিলে, তাহা পাওয়া প্রায় অসম্ভব হইয়া পড়ে। সাধারণ ধারণার বিপরীতে অবস্থিত বাক্যটি বুঝায়, অতিরিক্ত আবেগ প্রয়াসীকে সমৃদ্ধ করিবার পরিবর্তে বিচ্যুত করে। ওই মুহূর্তের ফুটন্ত আবেগের কেন্দ্রে দাঁড়াইয়া নায়কের শান্ত উচ্চারণটি ইহাও বুঝায়, অসামান্য প্রতিভার প্রকৃত দোসর শীতল যুক্তিই।

য ত্‌ কি ঞ্চি ত্‌

সৌদি আরব নাকি নতুন আইন আনছে, যা বলে: সব নাস্তিক উগ্রপন্থী। এখন, রাষ্ট্র যদি মনে করে ঈশ্বর আছেন ও সব সৃষ্টি করেছেন, তা হলে নাস্তিকের হৃদয়ে তাঁর অস্তিত্ব সম্পর্কে অবিশ্বাসও তাঁরই সৃষ্টি। তা হলে নাস্তিককে জেলে দেওয়া মানে ঈশ্বরের সৃষ্টিকেই অপমান। অবশ্য এ শুনে রাষ্ট্র বলতে পারে, নতুন আইনটাও তো ঈশ্বরের সৃষ্টি। তার মানে উনি এখন নিজেকে শুধরে নিতে চাইছেন, হাবিজাবি সৃষ্টিকে ডিলিট করে। তাঁর এই সেল্ফ-হেল্প প্রক্রিয়ায় ‘ভক্ত রাষ্ট্র’ সাহায্য করবে না?

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy