আফগানিস্তান নূতন সঙ্কটে। হামিদ কারজাইয়ের উত্তরসূরি নিয়োগ করিতে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সাঙ্গ হইয়াছে গত মাসেই। কিন্তু সেই নির্বাচনের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ জানাইয়া পরাজিত প্রার্থী আবদুল্লা আবদুল্লা তাঁহার প্রতিদ্বন্দ্বী আশরফ গনি আহমদজাই-এর জয় মানিতে অস্বীকার করিয়াছেন এবং আহমদজাইকে প্রেসিডেন্ট নিয়োগ করিলে দেশে সমান্তরাল সরকার চালাইবার হুমকিও দিয়াছেন। আবদুল্লা আবদুল্লা একদা আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ছিলেন। তাহারও আগে ‘উত্তরের জোট’ বা নর্দার্ন অ্যালায়ান্স-এর নেতা হিসাবে তালিবানদের বিরুদ্ধে জোরদার লড়াইও চালান। দেশে তাঁহার অনুগামী অনেক, প্রভাবও যথেষ্ট। তুলনায় বিশ্ব ব্যাংকের প্রাক্তন অর্থনীতিবিদ ও আধিকারিক আহমদজাই দেশীয় রাজনীতিতে নিতান্তই অর্বাচীন, কিছুটা বহিরাগতও, কিন্তু সম্ভবত পাশ্চাত্যের, বিশেষত মার্কিন প্রশাসনের অনুগৃহীত। এই অচলাবস্থার নিরসন না হইলে কারজাইয়ের হাত হইতে ক্ষমতা অন্তরিত হওয়াও বিলম্বিত হইবে। মার্কিন বিদেশ সচিব জন কেরি তাই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাবুল ছুটিয়া আসিয়াছেন।
কেরির তৎপরতার অন্য কারণও আছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এই বৎসরের শেষাশেষি মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার করিয়া লইতে উদ্গ্রীব। কিন্তু তাহার পূর্বে কাবুলে একটি গ্রহণযোগ্য সরকার কায়েম হওয়া অত্যাবশ্যক। প্রাপ্ত ভোটের হিসাবে আহমদজাই আগাইয়া আছেন। কিন্তু আবদুল্লা আবদুল্লা ভোটে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ করিয়াছেন। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রশাসন আবদুল্লাকে হঠকারী কোনও সিদ্ধান্ত না লইয়া রাষ্ট্রপুঞ্জের মধ্যস্থতা ও নজরদারিতে ব্যালট বাক্সগুলি পরীক্ষা করিয়া দেখা অবধি অপেক্ষা করিতে বলিতেছে। জন কেরি কাবুলে রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিনিধি জান কুবিস-এর তত্ত্বাবধানে ব্যালট পরীক্ষা ও পুনর্গণনার প্রস্তাব দিয়াছেন। আবদুল্লা আবদুল্লা সেই প্রস্তাব শিরোধার্য করেন কি না, তাহার উপরেই অনেক কিছু নির্ভর করিতেছে। আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে আধুনিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু করিতে সচেষ্ট, তাহা প্রথমাবধি ব্যাপক দুর্নীতি, অনাচার ও কারচুপিতে আক্রান্ত। এখনও যুদ্ধসর্দার ও গোষ্ঠীপতিদের প্রতি আনুগত্যে অভ্যস্ত আফগান জনসাধারণ প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের পাশ্চাত্য প্রকরণটিতে অভ্যস্ত নহেন। ফলে অন্তর্ঘাত ও বিকৃতির আশঙ্কা থাকিয়াই যায়।
ইরাককে দখল ও ধ্বংস করার পর সেখান হইতে সেনা প্রত্যাহার করায় এখন ওই দেশ যে গভীর নৈরাজ্যে অধঃপতিত, তাহার দায় ওয়াশিংটন এড়াইতে পারে না। এক দশকেরও বেশি সময় ধরিয়া আফগানিস্তান দখলে রাখার পর কোনও মজবুত সরকারকে কাবুলে অভিষিক্ত না করিয়া মার্কিন বাহিনী স্বদেশে ফিরিলে আফগানিস্তান দ্রুত তালিবান পুনর্দখলে চলিয়া যাইতে পারে। ইরাকে যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বসানো নুর-আল-মালিকি’র সরকার কার্যত বাগদাদে সীমাবদ্ধ, অবশিষ্ট ইরাকে দাপাইয়া বেড়াইতেছে ইরাক ও সিরিয়ায় সংযুক্ত ইসলামি রাষ্ট্র গঠনে উদ্যত জেহাদি সংগঠন, আফগানিস্তানেও তেমনই তালিবানের মৌলবাদী স্বৈরাচার ফিরিয়া আসিতে পারে। তখন তো আফগানিস্তানে মার্কিন অভিযানের যৌক্তিকতা লইয়াই গুরুতর প্রশ্ন উঠিয়া পড়িবে। তাই প্রেসিডেন্ট ওবামা কাবুলে দূত পাঠাইয়াছেন। কিন্তু তাহাতেও শেষ পর্যন্ত আফগান সমস্যার সুষ্ঠু মীমাংসা হইবে কি না, সেই সংশয় থাকিয়াই যাইতেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy